State news

যত বেশি ঋণ, তত কাছে বিপদ, শাসক বুঝছেন তো?

যুক্তি-তর্ক যত রকমই থাক, নিজেকে ঋণগ্রস্ত জানা সত্ত্বেও যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্যয়সঙ্কোচের পথে কিছুতেই হাঁটেনি, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেন কমানো যায়নি ব্যয়? খরচের বহর এত বিপুল কেন? অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের দেওয়া হিসেবই বলছে, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে অস্বাভাবিক খরচ করেছে রাজ্য।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঋণগ্রস্ত সংসারের দায়িত্ব ঘাড়ে পড়লে গৃহকর্তাকে মিতব্যয়ী হতে হয়। তেমনটাই দস্তুর। কারণ ঋণের বোঝা ক্রমশ কমিয়ে আনাই লক্ষ্য হওয়া উচিত এবং তার জন্য ব্যয়সঙ্কোচ অপরিহার্য। এ সত্য বোঝার জন্য অর্থনীতির পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ বিচারবুদ্ধিতেই এটুকু উপলব্ধি করা সম্ভব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার সম্ভবত সে উপলব্ধিতে পৌঁছতে পারেনি এখনও।

Advertisement

রাজ্য সরকারের কোষাগারের যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে উদ্বেগ ঘনাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের আয়-ব্যয়ের চেহারাটা কেমন হতে চলেছে এবং তাতে কোষাগারের ছবিটা ঠিক কী রকম দাঁড়াতে চলেছে, সম্প্রতি সে হিসাব প্রকাশ করেছেন রাজ্যের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল। হিসাব বলছে, ফের বিপুল অঙ্কের ঋণ জরুরি হয়ে পড়বে অর্থবর্ষের শেষ চারটে মাসের জন্য।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

Advertisement

বাজার থেকে ঋণ নেওয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে নতুন কিছু নয়। রাজ্যের পূর্বতন শাসকরা বিপুল ঋণের বোঝা চাপিয়ে রেখে গিয়েছিলেন সরকারের ঘাড়ে। বর্তমান শাসকরাও বেশ অকাতরেই ঋণ নিয়েছেন এ যাবৎ। কিন্তু এমনটা হওয়া তো কাম্য ছিল না। ঋণগ্রস্ত বাংলার রাজ্যপাট যখন ‘বাম’ হাত থেকে ‘ডান’ হাতে এল, তখনই তো সতর্ক হওয়া যেত। নড়বড়ে সংসারটাকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে নতুন শাসক আগের জমানার ভ্রান্তিগুলো থেকে বেরিয়ে আসার পথে পা বাড়াবেন, এমনটাই তো প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তা হল না। অনেক অভ্যাস, অনেক দস্তুর বদলে গেল নয়া জমানায়। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পরম্পরা অক্ষুণ্ণই রইল।

কেন এই হাল রাজকোষের, সে নিয়ে অনেক রকম যুক্তি-তর্ক রয়েছে। কেউ বলছেন, নোটবন্দি এবং জিএসটি ধাক্কা দিয়েছে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায়। কেউ পাল্টা বলছেন, নোটবন্দি এবং জিএসটি-র অনেক আগে থেকেই তো ঋণ করতে শুরু করেছে সরকার। কেউ বলছেন, কেন্দ্রের কাছ থেকে যে টাকা প্রাপ্য রাজ্যের, তার অনেকটাই আটকে রয়েছে। কেউ পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, কেন্দ্রের টাকা পুরোটা চলে এলেও কি ঋণ না নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে?

আরও পড়ুন: কমেছে আয়, ঋণে কাহিল কোষাগার

যুক্তি-তর্ক যত রকমই থাক, নিজেকে ঋণগ্রস্ত জানা সত্ত্বেও যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্যয়সঙ্কোচের পথে কিছুতেই হাঁটেনি, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেন কমানো যায়নি ব্যয়? খরচের বহর এত বিপুল কেন? অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের দেওয়া হিসেবই বলছে, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে অস্বাভাবিক খরচ করেছে রাজ্য। উৎসব, মেলা, খেলা, ভাতা, ক্লাবে ক্লাবে অর্থ বিতরণ— পরিকল্পনা বহির্ভূত তথা অনুৎপাদনশীল খরচের অবকাশ অজস্র। এর জেরে কী হয়েছে? ব্যয় বেড়েছে সরকারের, কিন্তু কোনও সম্পদ সৃষ্টি হয়নি। ফলে সৃষ্টি হয়নি নতুন আয়ের উৎসও।

যে পথে চালিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি, তা কি আদৌ কোনও গঠনমূলক পথ? নিজেদেরই প্রশ্ন করুন শাসকরা। ঋণভারে ন্যুব্জ বাংলাকে ন্যুব্জতর করে তোলা নিশ্চয়ই লক্ষ্য নয়। তা হলে আয় বাড়ানোর পথ খুঁজতেই হবে সরকারকে। না হলে বিপর্যয় অপেক্ষায় থাকবে।

মনে রাখা দরকার, ঋণে জর্জরিত সংসার কিন্তু শুধু গৃহকর্তাকে বিপদে ফেলে না। বিপন্ন করে তোলে গোটা পরিবারকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন