Yogi Adityanath

সিঁদুরে মেঘ থেকেই শান্তির বারিধারার আশ্বাস, সত্যিই সম্ভব?

আশঙ্কার মেঘ জমাট ছিল আকাশে। একটু সরানোর চেষ্টা করল বিজেপি। সাম্প্রদায়িক বিতর্কের প্রায় ভরকেন্দ্রে থাকা যোগী আদিত্যনাথের নাম ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী পদে ঘোষণা করে চমকে দিয়েছিল গৈরিক শিবির।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০৪:২৪
Share:

আশঙ্কার মেঘ জমাট ছিল আকাশে। একটু সরানোর চেষ্টা করল বিজেপি। সাম্প্রদায়িক বিতর্কের প্রায় ভরকেন্দ্রে থাকা যোগী আদিত্যনাথের নাম ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী পদে ঘোষণা করে চমকে দিয়েছিল গৈরিক শিবির। কিন্তু সেই আদিত্যনাথকে দিয়েই এ বার সর্বাঙ্গীন ও সর্বাত্মক রাজধর্মে ফেরার আভাস দেওয়ার চেষ্টা হল। উন্নয়নই প্রধান লক্ষ্য এবং উন্নয়নের রথে সবাই স্বাগত— এমন এক সদ্বিশ্বাসের জন্ম দেওয়ার প্রয়াস হল। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে পরিকল্পনার যে প্রাথমিকতা জানালেন যোগী, তাতে কোথাও মেরুকরণের ভাবনা উস্কে দেওয়ার আরোপিত প্রয়াস দেখা গেল না।

Advertisement

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ, আইন-শৃঙ্খলা, নারীর নিরাপত্তা, যুব সমাজের কাজের সংস্থান, কৃষির উন্নয়ন, ক্ষেতমজুরের কল্যাণ, দলিতের স্বার্থ রক্ষা— উত্তরপ্রদেশের নবগঠিত সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য এই। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অন্তত তাই।

ঘোষণায় রাম মন্দির তৈরির নির্ঘোষ থাকতেই পারত। উত্তরপ্রদেশে বিদ্যুতের বৈষম্যমূলক বণ্টনের অভিযোগ নির্বাচনী প্রচারে যে ভাবে সাম্প্রদায়িক রং লাগিয়ে দিয়েছিল, তাতে যোগী আদিত্যনাথের প্রথম ঘোষণায় সেই ‘বৈষম্য’ দূর করার আশ্বাস থাকতে পারত। শ্মশান-কবরস্থান নিয়ে যে বিতর্ক উত্তরপ্রদশের ভোট ময়দানে চারিয়ে দিয়ে এসেছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী, আদিত্যনাথের প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে সেই বিতর্কের উল্লেখ থাকতে পারত। ব্যক্তিটি আদিত্যনাথ বলেই এত কিছু হতে পারত। কিন্তু জল্পনায় জল ‌ঢালল বিজেপি, আগুন উস্কে দেওয়ার নয়, প্রশমিত করার চেষ্টাই করলেন যোগী।

Advertisement

রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা কোনও অবস্থাতেই কাম্য নয়, কারও থেকেই কাম্য নয়। ভোট ময়দানে সে আপ্তবাক্য একেবারেই মনে রাখেনি বিজেপি, নানা অছিলায় মেরুকরণের পথেই হেঁটেছে বরং। কিন্তু ভোট মেটার পর সে পথ পরিত্যাগের কথা আভাসে-ইঙ্গিতে অন্তত বুঝিয়ে দিতে চাইল দেশের শাসক দল। এই আভাস কতটা সারগর্ভ, সে অন্য বিতর্ক। কিন্তু এটুকুর জন্যও বিজেপিকে তথা যোগীকে সাধুবাদ জানানো যেতেই পারে।

পরীক্ষার মূল পর্বটা অবশ্য এখনও বাকি। রাজধর্ম পালনের ইঙ্গিত নতুন মুখ্যমন্ত্রী বেশ দ্ব্যর্থহীন শব্দে দিয়েছেন, সে কথা ঠিক। কিন্তু ঘরপোড়ারা যদি সিঁদুরে মেঘের আভাসে এখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, যদি মুখ্যমন্ত্রীর মৌখিক আশ্বাসগুলোয় পূর্ণ আস্থা রাখতে না পারেন, তা হলে তাঁদের কিন্তু দোষ দেওয়া যায় না। পারস্পরিক বিশ্বাসের ঘাটতি থেকেই এই আতঙ্ক। সে ঘাটতিটা মিটিয়ে দেওয়াই যোগী আদিত্যনাথের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এখন। মুখ্যমন্ত্রিত্বে আসীন হয়েই গেরুয়া বসনধারী সন্ন্যাসী যা কিছু বললেন, সে সব যে নেহাৎ কথার কথা নয়, তা তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে। মূল পরীক্ষা সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement