Editorial News

যা বলছেন, বুঝে বলছেন তো আদিত্যনাথ?

ধর্মনিরপেক্ষতা বলে কিছু হয় না, স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল ধর্মনিরপেক্ষতা— মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথের। এই কথার অর্থ কী? যোগী আদিত্যনাথ কী বলতে চাইলেন? ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয়? ভারতের সংবিধান কোনও ধর্মের প্রতি বিশেষ পক্ষপাত দেখায়? যোগীর মন্তব্যের অর্থ তো অন্তত তেমনই দাঁড়ায়।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

যোগী আদিত্যনাথ। ফাইল চিত্র।

বিস্ফোরক হয়ে উঠলেন যোগী আদিত্যনাথ আবার। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে সর্বাপেক্ষা বৃহত্ মিথ্যা কী, সে নিয়ে নিজের সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে নিজস্ব মতামত জানানো যোগীর এই প্রথম বার নয়। মাঝেমধ্যেই ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের প্রজ্ঞা জাহির করে থাকেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এই সব মতামত ব্যক্ত করে তিনি নিজেকে এমন একটা জায়গায় দাঁড় করান, যেখানে কোনও প্রগতিশীল বা কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

Advertisement

ধর্মনিরপেক্ষতা বলে কিছু হয় না, স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল ধর্মনিরপেক্ষতা— মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথের। এই কথার অর্থ কী? যোগী আদিত্যনাথ কী বলতে চাইলেন? ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ নয়? ভারতের সংবিধান কোনও ধর্মের প্রতি বিশেষ পক্ষপাত দেখায়? যোগীর মন্তব্যের অর্থ তো অন্তত তেমনই দাঁড়ায়। ধর্মনিরপেক্ষতা বলে কোনও কিছুর অস্তিত্বই যদি না থাকে, তা হলে ভারত নিশ্চয়ই কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের দেশ। স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় মিথ্যা যদি ধর্মনিরপেক্ষতা হয়, তা হলে ভারতের সংবিধানটাই মিথ্যাচার দিয়ে শুরু হচ্ছে নিশ্চয়ই। তাই প্রশ্ন করতেই হচ্ছে, যা বললেন, তার অর্থটা বুঝে বললেন তো যোগী?

আরও পড়ুন: ধর্মনিরপেক্ষতার মতো বড় মিথ্যা আর হয় না: যোগী আদিত্যনাথ

Advertisement

যোগী আদিত্যনাথ একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর জানা উচিত, সংবিধানের শুরুতেই ‘প্রস্তাবনা’ বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। এক সময় সেই প্রস্তাবনায় সংশোধন আনা হয়েছিল এবং সেই সময় থেকেই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি ভারতীয় সংবিধানের অঙ্গীভূত হয়ে গিয়েছে।

যোগী আদিত্যনাথ একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মনে থাকা উচিত, সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং নিষ্ঠাবান থাকার শপথ নিয়েছেন তিনি।

যে মন্তব্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, দু’টি কারণে তেমন মন্তব্য আসতে পারে। অজ্ঞতাবশত অথবা রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতাবশত। পৌরাণিক ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে যোগী বেশ ওয়াকিবহাল। বার বার রাম, রামরাজ্য, রামায়ণের কথা তাঁর মুখে শুনে, এমনটাই মনে হয়। কিন্তু রামায়ণ হল পুরাণ, তা ইতিহাস নয়। পুরাণ এবং ইতিহাসের ফারাক যদি তিনি না বোঝেন, তা হলে সে সব নিয়ে চর্চা না করাই ভাল। কিন্তু অজ্ঞতাবশত ইতিহাসের সঙ্গে পুরাণকে গুলিয়ে ফেলা একেবারেই উচিত হবে না। আবার, মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে ধর্মভিত্তিক ভেদাভেদ করাও যোগীর উচিত হবে না। তাঁকে মনে রাখতে হবে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি এখনও ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার অঙ্গ। যত দিন না পর্যন্ত ওই শব্দকে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে বাদ দিতে পারছেন যোগীরা (যদি আদৌ পারেন), তত দিন পর্যন্ত সাংবিধানিক পদাধিকারী হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে যোগী আদিত্যনাথকে। কোনও সঙ্কীর্ণতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অবকাশ এ ক্ষেত্রে অন্তত নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন