Newsletter

এবার একটু আত্মসমীক্ষণ করে নিক শাসক

পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের পরে বোর্ড গঠন হয়েছিল অগস্টে। তাই এ বার বোর্ডের মেয়াদ থাকছে অগস্ট পর্যন্ত।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০০:৩৬
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

বহু উত্থান-পতন, বিস্তর টানাপড়েন, অনেক মামলা-মোকদ্দমা, বিপুল হিংসা-রক্তপাত আর একের পর এক মৃত্যু পার হয়ে অবশেষে মিটল পঞ্চায়েত নির্বাচন। পুরোটা অবশ্য মিটল না, ঝুলে রইল ৩৪ শতাংশের ভাগ্য, মিটল ৬৬ শতাংশ। সেই ৬৬ শতাংশের ফলাফলে নিঃসন্দেহে শাসকের দাপটের ছবি। ফলাফল নিয়ে শাসক দলের নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সন্তোষও প্রকাশ করলেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেল অনেক, কলঙ্কের ছিটে রয়ে গেল বিপুল বিজয় কেতনে।

Advertisement

এই নির্বাচন আদৌ কোনও নির্বাচনই নয়, বারংবার বলে চলেছে বিরোধী দলগুলি। তীব্র সন্ত্রাসের আবহে নির্বাচনের নামে গণতন্ত্রকে ঠকানো হয়েছে, বলছেন বিরোধীরা।

যাবতীয় বিরোধী স্বরকে তৃণমূল ‘কুৎসা ও অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। পঞ্চায়েতের ফলাফলে শাসক ও বিরোধীর মধ্যে যে বিপুল ফারাক দেখা যাচ্ছে, সেটাই স্বাভাবিক, এই ফলই প্রত্যাশিত ছিল এবং এই ফলের বিষয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আত্মবিশ্বাস যদি এতই তীব্র ছিল, তা হলে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া আটকাতে হল কেন? রাস্তায় রাস্তায় সশস্ত্র ‘উন্নয়ন’দের মোতায়েন করতে হল কেন? জোর করে অজস্র আসন থেকে বিরোধী প্রার্থী প্রত্যাহার করাতে হল কেন? এত গুলি-বোমার দাপট দেখাতে হল কেন? কোথাও ব্যালট ছিনতাই, কোথাও বাক্স পুকুরে ফেলা, কোথাও ছাপ্পা ভোট হল কেন? ভোটের দিন এত লাশ আর এত রক্ত দেখা গেল কেন? গণনার দিনেও গোলমাল করতে হল কেন? গণনাকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে ছাপ্পা মারার ছবি ধরা পড়ল কেন? রাতে গণনাকেন্দ্রের সম্পূর্ণ দখল নিয়ে সব বিরোধী দলকে বার করে দিতে হল কেন? গণনাকেন্দ্রের মধ্যেই বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল কেন?

আরও পড়ুন: সব নজির ভেঙে এ বার গণনা কেন্দ্রে ঢুকে অবাধ ছাপ্পা

ভোট ঘিরে তৃণমূল কর্মীদের এবং তাঁদের শাগরেদদের বেনজির তাণ্ডব দেখে দু’টো প্রশ্ন জাগে। বলা ভাল, দু’টো সম্ভাবনার কথা মাথায় আসে।

শাসকদলের মধ্যেই কি জয়ের প্রতিযোগিতা চলছে? সবাইকে জিততে হবে, এমন কোনও তাগিদ কি অনুভূত হচ্ছে? নিজের নিজের এলাকায় কত বিপুল জয় হাসিল করা যায়, শাসকদলের নেতারা কি নিজেদের মধ্যে সেই প্রতিযোগিতায় মেতে উঠলেন?

বলাই বাহুল্য, একেবারেই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা নয়। এর চেয়ে বরং উন্নয়নের প্রতিযোগিতা হতে পারত। কোন নেতা কোন এলাকায় কতটা উন্নয়ন করতে পারলেন, নাগরিকের কতটা কল্যাণ করতে পারলেন, সাধারণ মানুষের পাশে কতটা দাঁড়াতে পারলেন, প্রতিযোগিতা তো তা নিয়েও হতে পারত।

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সংক্রান্ত একটা প্রশ্নও মাথা তুলছে। শাসক কি স্বস্তিতে ছিলেন না? জিতবেন এই বিশ্বাস কি ছিল না?

বিশ্বাসে যে চিড় ধরেছিল, এবং চিড় ধরার যে যথেষ্ট কারণও ছিল, নির্বাচনী ফলাফল থেকেই তা অনেকটা স্পষ্ট। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে যে পর্যায়ে উঠে এসেছে বিজেপি, তা নিয়ে শাসকের উদ্বেগ বা আত্মবিশ্বাসহীনতা থাকতেই পারে।

ঠিক কী কারণে নির্বাচন লুঠ করতে হল, সে উত্তর তৃণমূলের নিশ্চয়ই জানা রয়েছে। যদি জানা না থাকে, তাহলে অবিলম্বে জানার চেষ্টা করা উচিত। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে যে পথে এগিয়েছে তৃণমূল, তা কোনও সুস্থ গণতন্ত্রের পথ নয়। এই পথ কেন ধরতে হল, এই পথ থেকে ফেরা যাবে কী ভাবে, তা নিয়ে অবিলম্বে চর্চা হওয়া দরকার। কারণ, ভুল দিশায় এমন উল্কাবেগে ছুটতে থাকলে কক্ষচ্যুত হতে হবে অচিরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন