সম্পাদকীয় ১

অর্ধচন্দ্র

ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক শীর্ষাসনে যে পরিমাণ আবর্জনা জমিয়াছিল, সুপ্রিম কোর্টের সম্মার্জনী ভিন্ন তাহা সাফ করিবার আর পথ ছিল না। শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকার মূল সুরটিতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের পরিত্রাণের মন্ত্র নিহিত থাকিতে পারে। আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়াছে, নায়ারণস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে গড়াপেটায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকিবার কোনও প্রমাণ না মিলিলেও তাঁহার ভূমিকায় স্বার্থের সংঘাত অত্যন্ত প্রকট ছিল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share:

ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক শীর্ষাসনে যে পরিমাণ আবর্জনা জমিয়াছিল, সুপ্রিম কোর্টের সম্মার্জনী ভিন্ন তাহা সাফ করিবার আর পথ ছিল না। শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকার মূল সুরটিতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের পরিত্রাণের মন্ত্র নিহিত থাকিতে পারে। আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানাইয়াছে, নায়ারণস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে গড়াপেটায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকিবার কোনও প্রমাণ না মিলিলেও তাঁহার ভূমিকায় স্বার্থের সংঘাত অত্যন্ত প্রকট ছিল। বিসিসিআই-এর সংবিধানে যে সংশোধনী আনিয়া তিনি একই সঙ্গে বোর্ডের প্রধান ও চেন্নাই সুপার কিংস-এর মালিক পদে ছিলেন, তাহা অনৈতিক তো বটেই, অন্যায়ও। শ্রীনিবাসনের অজুহাতগুলি গ্রাহ্য করিবার কোনও কারণ নাই। স্বয়ং তিনি ইন্ডিয়া সিমেন্টস-এর মালিক, না কি তাঁহার পরিবার, সেই ফাঁক গলিয়া যে বাঁচা যায় না, আদালত স্পষ্ট করিয়া দিয়াছে। নৈতিকতার পরোয়া করিলে শ্রীনিবাসনের বহু পূর্বেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। তিনি করেন নাই। অতএব, তাঁহাকে বিদায় করাই বিধেয়। এখানেই শীর্ষ আদালতের নিকট একটি বিনীত প্রশ্ন পেশ করা যাইতে পারে। আদালত যখন উদ্যোগ করিলই, তখন কি আরও কয়েক কদম হাঁটা যাইত না? বিসিসিআই হইতে শ্রীনিবাসনকে সম্পূর্ণ নির্বাসন দেওয়াই কি যথার্থ হইত না? নিজের বাণিজ্যিক স্বার্থ ত্যাগ করিয়া ফের তাঁহার প্রশাসকের ভূমিকায় ফিরিয়া আসিবার পথটি খোলা না রাখিলেই বোধ হয় ভারতীয় ক্রিকেটের মঙ্গল হইত।

Advertisement

শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত কঠোর, সন্দেহ নাই। কিন্তু, পরিস্থিতি সম্ভবত কঠোরতর সিদ্ধান্তের দাবি পেশ করিয়াছিল। এবং, প্রত্যাশা ছিল, সিদ্ধান্তটি দ্রুততর হইবে। এই প্রসঙ্গে মার্কিন বিচারব্যবস্থার উদাহরণ দেখা যাইতে পারে। সে দেশের শীর্ষ আদালত সচরাচর মামলায় উভয় পক্ষকেই একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বাঁধিয়া দেয়। সেই সময়ের মধ্যে যাবতীয় যুক্তি, সাক্ষ্য, প্রমাণ পেশ করিতে হয়। তাহার পর আদালত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এবং সেই সিদ্ধান্ত প্রধানত নির্দেশের বৃহত্তর ছবিটি স্পষ্ট করে। খুঁটিনাটি বিষয় লইয়া আদালত সচরাচর কালক্ষেপ করে না। সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান সিদ্ধান্তের মধ্যেও তাহার কিছু ছায়া আছে। যেমন, কেন বিসিসিআই একটি বেসরকারি সংস্থা হিসাবে গণ্য হইতে পারে না, আদালত স্পষ্ট জানাইয়া দিয়াছে। শ্রীনিবাসনের আপত্তিকর ভূমিকাটি যে এই প্রেক্ষিতেই দেখা প্রয়োজন, তাহাও স্পষ্ট। অতএব, আদালত শ্রীনিবাসনের প্রতি আরও কঠোর হইতে পারিত, এমন আশা করা অসঙ্গত নহে। ভারতীয় ক্রিকেট, এবং বৃহত্তর অর্থে ভারতের স্বার্থেই সেই কঠোরতা প্রত্যাশিত ছিল।

বিসিসিআই-এর এই দীর্ঘমেয়াদি কুনাট্যে একটি কথা স্পষ্ট— যাঁহারা ক্ষমতা কুক্ষিগত করিয়াছেন, তাঁহারা কোনও শুভবুদ্ধিতে উদ্দীপ্ত হইয়া স্বেচ্ছায় সেই ক্ষমতা ত্যাগ করিবেন না। নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন তাহার সর্বাপেক্ষা প্রকট উদাহরণ। তাঁহাদের সরাইতে হইবে। আদালতের রায় বিষয়ে এই মর্মে আরও একটি প্রশ্ন পেশ করা যাইতে পারে। রায়ের একটি অংশ প্রত্যক্ষ, অপর অংশটি নির্দেশক। দ্বিতীয় অংশটি পালন করিতেই হইবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নাই। আশঙ্কা হইতেছে, ক্ষমতার মধুতে যাঁহারা আকণ্ঠ নিমজ্জিত, তাঁহারা হয়তো এই নির্দেশগুলিকে পাশ কাটাইবার পথ খুঁজিবেন। যে কোনও মূল্যে ক্ষমতায় টিকিয়া থাকিবার চেষ্টা করিবেন। আদালতের নিকট প্রশ্ন, ক্ষমতাসীনদের এই চরিত্র যখন অজ্ঞাত ছিল না, তখন তাঁহাদের জন্য পলায়নের পথগুলি খুলিয়া রাখিবার প্রয়োজন ছিল কি? শ্রীনিবাসন আজ তাঁহার ব্যবসায়িক স্বার্থ ত্যাগ করিলেও তাঁহার অতীতের অন্যায়গুলি মুছিয়া যাইবে না। তিনি যে ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া নিজের স্বার্থের সংঘাতকে আইনি সিদ্ধতা দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন, সেই কথাটি মিথ্যা হইয়া যাইবে না। সেই অন্যায়ের শাস্তি হইতে বাঁচিবার কোনও পথ খোলা থাকা কাম্য নহে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন