‘পিকে’ ছবির পোস্টারে আমির খানের নগ্ন ছবি, তাহা লইয়া বিস্ফারিত বিস্ময়, প্রস্ফুটিত পরিহাস, গরমাগরম গুজব, সকলই ছড়াইয়াছে, কিন্তু সর্বাধিক দাপট দেখাইয়াছে, যথারীতি, বিখ্যাত ভারতীয় শুচিবায়ু। এক সংগঠন ইহা লইয়া মামলাও ঠুকিয়াছে। লক্ষণীয়, ভারতে বহু লোকেরই সমাজ লইয়া সাতিশয় শিরঃপীড়া। কোনও দৃশ্য দেখিলে, কোনও কাহিনি পড়িলে, তাহা নিজের ভাল লাগিল কি না, তাহা লইয়া কেহই প্রায় ভাবিত নহে। তাহা সমাজের পক্ষে উপকারী হইল কি না, তাহা লইয়া নিদ্রা উড়িয়া যায়। আশ্চর্য, এই সচেতনতা, সমষ্টির জন্য প্রাণপণ উদ্বেগ ও কল্যাণকামনা, কিন্তু কেবল উজ্জীবিত হয় শিল্পে যৌনতার ক্ষেত্রে। নিজের ফ্রিজ, গাড়ি, ফ্ল্যাট কিনিবার সময় সমাজের কথা চট করিয়া মনে পড়ে না। সমাজের জন্য নিজ ঐশ্বর্যের একাংশ ছাড়িয়া দিয়া, তাহার পর স্ব-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থাপনা করিবার কথা প্রায় কাহারও মাথায় আসে না। জঞ্জালের ভ্যাটের পার্শ্বে যখন দগদগে ক্ষত লইয়া বৃদ্ধ ভিখারি শুইয়া থাকে, তাহাকে তুলিয়া লইয়া হাসপাতালে ছুটিবার গরজ দেখা যায় না। রাত্রে ফুটপাতস্থ উন্মাদিনীকে ধর্ষণ করা হইতেছে জানিলে সাধারণত কর্ণে বালিশ চাপিয়া শুইয়া পড়াই দস্তুর। কিন্তু শিল্পে যৌনতার ইঙ্গিত দেখামাত্র, সমাজের চিন্তায় মুষ্টি ও মসী নিশপিশ করিয়া উঠে। পরিচিত লোকগল্পে, সন্ন্যাসী এক তরুণীকে কোলে তুলিয়া কর্দমলিপ্ত পথ পার করাইয়া দেন। সঙ্গী সন্ন্যাসী বহু পরে তাহা লইয়া গজগজ করিতে থাকিলে তিনি বলেন, আমি তরুণীকে নামাইয়া দিয়া চলিয়া আসিয়াছি, তুমিই তাহাকে এখনও বহিয়া চলিয়াছ। তেমনই, রক্ষণশীলদের এমন প্রখর ক্রোধ দেখিলে বুঝা যায়, ইহা আসলে যৌনক্ষুৎকাতর এক সমাজের অভিজ্ঞান, যৌনতা দেখিলেই তাহাদের হৃদয়ে আলোড়ন পড়িয়া যাইতেছে, তাহারা যৌনতার প্রতি উদাসীন থাকিতে পারিতেছে না।
আদালত এই পোস্টার সংক্রান্ত মামলার উত্তরে অসামান্য এক কথা বলিয়াছে: যদি পোস্টার পছন্দ না হয়, সিনেমা দেখিবেন না। ইহার অপেক্ষা সরল অথচ মোক্ষম বার্তা আর কিছুই হইতে পারে না। যখন কোনও চলচ্চিত্রে যৌনতা এক বৃহৎ অংশের নিকট আপত্তিকর মনে হইতেছে বলিয়া হুলস্থূল পড়িয়া যায়, তখন কাহারও মনে পড়ে না, চলচ্চিত্রটি দেখিবার মাথার দিব্য কেহ দেয় নাই। প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহেই বাহির হইবার দ্বার রহিয়াছে, তাহার উপর লাল জ্বলজ্বলে অক্ষরে ‘এগজিট’ লিখা। পছন্দ না হইলে, দর্শকটি প্রস্থান করিলেই পারেন, এই স্ব-সেন্সরটি করিলেই আর সেন্সর বোর্ডকে অভিসম্পাত করিতে হয় না। প্রতিটি গ্রন্থ বন্ধ করিয়া দেওয়া যায়, টিভি অফ করিবার বোতাম রিমোটে রহিয়াছে। কিন্তু এ কথা মনে রাখিলে, জ্যাঠাদিগের বিপদ। শিল্পে যৌনতার আমোদটিও ভোগ করিব আবার তাহার প্রতি আপত্তি জানাইয়া পবিত্র সাজিব— এই দ্বিচারণটির সুবিধা লওয়া চলে না। এ দেশে যৌনতা থাকিবে শাক দিয়া ঢাকা: প্রথাটি মানিতে মানিতে সাধারণ মানুষ ইহাও বিশ্বাস করিয়া ফেলিয়াছেন, যৌনতার উদযাপন ভারতীয় ঐতিহ্যের বিরোধী। ভারতীয় ঐতিহ্য কাহাকে বলে, কোন সময়ের মূল্যবোধগুলিকে এই দীর্ঘায়ু দেশের ঐতিহ্য বলিয়া দাগিয়া দিব, আর ঐতিহ্যে অবুঝ দাবি থাকিলে কেনই বা তাহা মানিতে হইবে, এই সকল কথা লইয়া মাথা ঘামাইবার দায় কাহারও নাই। নগ্নতা আর যৌনতাকে কেন সমার্থক ধরা হইবে, তাহাও বিবেচ্য নহে। আর শিল্পের স্বাধীনতা লইয়া ন্যূনতম ধারণা সমষ্টির থাকিলে, এক বাঙালি লেখিকাকে বিতাড়ন করিবার আন্দোলন এমন সমর্থন পায় না। আদালতের আদেশ হইতে কেহ হয়তো পড়িয়া লইতে পারিবেন: যৌনতা জীবনের এক প্রধান সত্য, তাহাকে সকল সত্যের মতোই, সহজে গ্রহণ করিতে হইবে। শিল্পে যৌনতা সহস্র আবেগ প্রকাশ করিতে পারে: আনন্দ, নিঃসঙ্গতা, বিষাদ, ক্রোধ, অশান্তি, বিভ্রান্তি। তাহাকে প্রেক্ষিতনির্বিশেষে অশালীন বলিয়া দাগিয়া দিবার প্রবণতাই বরং মামলাযোগ্য।
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
ট্যাক্সি চলছে না। বাস বসে যাচ্ছে। অটোচালক চড় তুলছে। কলকাতার যান সম্পর্কে একটাই কথা: ‘চুলোয় যান!’ কিন্তু এর কল্যাণময় দিকটা? লোকে অ্যালার্ম দিয়ে ভোরে উঠে পাঁইপাঁই হাঁটে। কোলেস্টেরল কমে, আয়ু বাড়ে। এই ট্রান্সপোর্ট-ট্রমা আসলে শহরের সব মানুষকে ফাটাফাটি ফিট করে তোলার ঘুরপথ-প্ল্যান! জাস্ট হেঁটে বাড়ি টু অফিস, জগিং করে অফিস টু বাড়ি। গাড়িভাড়া বাঁচল, জিমের পয়সা বাঁচল, আপনিও নীরোগ দেহে বহুদ্দিন বাঁচলেন। তৃণমূল যা করে, মঙ্গলের জন্যে!