সম্পাদকীয় ১

আর কখন

আইএসআইএস কি পৈশাচিকতার বিপরীত ফল পাইতেছে? আইসিস-এর ভিডিয়োয় জাপানি সাংবাদিক কেনজি গোতোর নৃশংস মস্তকচ্ছেদন দেখিবার পর জাপানের প্রতিক্রিয়া কী? জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে সংঘটিত আইসিস-বিরোধী অভিযানের অংশীদার নহে। তাহারা নিয়মিত ভাবে ত্রাণকর্মী পাঠাইয়া থাকে, ইরাক এবং সিরিয়াতেও পাঠাইয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৩
Share:

আইএসআইএস কি পৈশাচিকতার বিপরীত ফল পাইতেছে? আইসিস-এর ভিডিয়োয় জাপানি সাংবাদিক কেনজি গোতোর নৃশংস মস্তকচ্ছেদন দেখিবার পর জাপানের প্রতিক্রিয়া কী? জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে সংঘটিত আইসিস-বিরোধী অভিযানের অংশীদার নহে। তাহারা নিয়মিত ভাবে ত্রাণকর্মী পাঠাইয়া থাকে, ইরাক এবং সিরিয়াতেও পাঠাইয়াছে। অন্যত্র সেনা পাঠানো জাপানের সংবিধানে নিষিদ্ধ, কিন্তু এই ভিডিয়ো প্রচারিত হইবার পর জাপানের সিদ্ধান্ত: ত্রাণকার্য আরও অনেক পরিমাণে বাড়ানো হইবে। জাপানের তরফে সংসদীয় সেক্রেটারি ইয়োশিদো সুগা-র ঘোষণা, অক্ষমণীয় সন্ত্রাসের সামনে তাঁহার দেশ কোনও ভাবেই মাথা নত করিবে না। প্রয়োজনে অন্যান্য বিরোধিতার পথও বিবেচনা করিবে। লক্ষণীয়, জর্ডনের বিমানচালককে পুড়াইয়া মারার বীভৎস ফুটেজ দেখিয়া জর্ডনেরও একই রকম প্রতিক্রিয়া। ও দিকে একটি মার্কিন সমীক্ষা জানাইতেছে, মার্কিন নাগরিকদের মুণ্ডচ্ছেদনের ভিডিয়ো বিশ্বময় ছড়াইয়া পড়ার পর ৬৭ শতাংশ নাগরিক আইসিসকে দেশের প্রত্যক্ষ শত্রু বিবেচনা করেন, যেখানে গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫৪ শতাংশ। কী বলিতেছে এই সব পরিসংখ্যান? আইসিস কি উপর্যুপরি নৃশংসতা দিয়া তাহার অভীষ্ট সিদ্ধির পথে অগ্রসর হইতেছে? তাহার প্রতি বিরুদ্ধ-ভাবাপন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির সংখ্যা ও কঠোরতা উত্তরোত্তর বাড়াইয়া যাওয়াই কি তবে এই জঙ্গিদের লক্ষ্য?

Advertisement

সম্ভবত তাহা নহে। সম্ভবত ইরাক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ তাণ্ডবে রত এই জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল, ভয় দেখাইয়া কার্যসিদ্ধি। বিশেষত জাপান এবং জর্ডনের মতো দেশ তাহাদের নাগরিকদের এই মর্মান্তিক পরিণতি দেখিয়া সরিয়া দাঁড়াইবে, এমনটাই নিশ্চয়ই তাহারা ভাবিয়াছিল। ফল হইতেছে ঠিক বিপরীত। ভয় হইতে গোটা বিশ্বে জন্ম লইতেছে তীব্র ঘৃণা, ও তৎপ্রসূত প্রবলতর বিরোধিতা। আইসিস যে লড়াই লড়িতে চাহুক না কেন, এই পথে তাহার বিশেষ কোনও লাভ হইতেছে না। সে কথা হয়তো তাহারা বুঝিবে না। সুতরাং নারকীয়তা চলিবে। হয়তো আরও ভয়ংকর দৃশ্য প্রচারের চেষ্টা চলিবে। সে ক্ষেত্রে আইসিস-এর বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া বিরাগ এবং বিদ্বেষ আরও বাড়িবে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই যে, প্রতিটি নরবলি আইসিস-এর বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমতকে পুষ্ট করিতেছে।

বিশ্বমত লইয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া বসিয়া থাকিলে চলিবে না। তাহাকে সংগঠিত করিয়া কিছু কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে হইবে। এই বোধবহির্ভূত নৃশংসতার অর্থ কী, উৎস কোথায়, ইত্যাদি ভাবা নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু তাহা দীর্ঘমেয়াদি ভাবনা। প্রথম কাজ: এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্ব শক্তি প্রয়োগ করিয়া লড়াই। এই বিষের সমূল উৎপাটনে প্রয়োজন সঙ্ঘবদ্ধ অভিযান। ইরাক ও সিরিয়ায় অভিযানের ব্যাপ্তি ও পরিধি দ্রুত বাড়ানো দরকার, দরকার অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা বর্ধন। রাষ্ট্রপুঞ্জ যে এখনও এই সিদ্ধান্ত লয় নাই, ইহা তীব্র আক্ষেপের বিষয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো সঙ্ঘের অস্তিত্বের যদি প্রয়োজন থাকিয়া থাকে, তাহা এই ধরনের পরিস্থিতির জন্যই। আন্তর্জাতিক অভিযানের যদি কোনও অর্থ থাকে, তবে ইহার অপেক্ষা জরুরি পরিস্থিতি আর কী হইতে পারে? সিরিয়া ও ইরাকে আইসিস ছাপযুক্ত খাবারের প্যাকেটে খাবার বিলি হইতে দেখিয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তাদের ত্রাসের ঘাম ছুটিয়াছে। দরিদ্র, অভুক্ত, সংঘর্ষক্লান্ত মানুষের হাতে এই খাবার পৌঁছাইবার অর্থ তাঁহাদের কাঁপুনি ধরাইয়া দিয়াছে। তাঁহারা বুঝিয়াছেন, কেবল মুণ্ডচ্ছেদ নয়, ব্যাপকতর রণাঙ্গণে আক্রমণ শুরু হইয়াছে। অথচ রক্ষণের প্রয়াস এখনও অত্যন্ত দুর্বল, অনিশ্চিত, অসংগঠিত। এ ভাবে এমন কঠিন যুদ্ধ জেতার আশা করা যায় কি?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন