সম্পাদকীয় ১

এই বার দিল্লির পালা

কয়েক দিন পূর্বে যখন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশিত হইল, তখন দেখা গেল, মূল্যবৃদ্ধির হার নভেম্বরের তুলনায় খানিক উচ্চমুখী। কিন্তু, যতখানি প্রত্যাশিত ছিল, বৃদ্ধির পরিমাণ তাহার তুলনায় বেশ কম। এবং, আরও ইঙ্গিত ছিল, মূল্য সূচক এই স্তরেই থাকিবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০১
Share:

কয়েক দিন পূর্বে যখন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশিত হইল, তখন দেখা গেল, মূল্যবৃদ্ধির হার নভেম্বরের তুলনায় খানিক উচ্চমুখী। কিন্তু, যতখানি প্রত্যাশিত ছিল, বৃদ্ধির পরিমাণ তাহার তুলনায় বেশ কম। এবং, আরও ইঙ্গিত ছিল, মূল্য সূচক এই স্তরেই থাকিবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন এই দিনটির প্রত্যাশায় ছিলেন। তিনি জানাইয়া রাখিয়াছিলেন, জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হারের ছবিটি দেখিয়া তবে তিনি সুদের হার কমাইবার প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত করিবেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসিয়াছে। রাজনও বিলম্ব করেন নাই। তিনি ব্যাঙ্কের রেপো রেট ৮ শতাংশ হইতে কমাইয়া ৭.৭৫ শতাংশ করিয়াছেন। সিদ্ধান্তটিতে রাজনের ধারাবাহিকতা স্পষ্ট। ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে বসিয়াই তিনি জানাইয়াছিলেন, তাঁহার প্রধান কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। শত চাপেও তিনি সেই ঘোষিত অবস্থান হইতে সরেন নাই। মূল্যস্ফীতি কমিলে সুদ কমিবে, এই কথাটিও তিনি জানাইয়া রাখিয়াছিলেন। কথা রাখিয়াছেন। দেশের আর্থিক নীতির কর্ণধার এমন যুক্তিসঙ্গত ভাবে ধারাবাহিক হইলে ব্যবসার পরিবেশে তাহার বিপুল সুপ্রভাব পড়া স্বাভাবিক। ব্যাঙ্ক কী করিবে, তাহা আঁচ করিতে জ্যোতিষীর দ্বারস্থ হইতে হয় না। অর্থনীতির গতিপথ দেখিলেই ব্যাঙ্কের পরবর্তী পদক্ষেপ অনুমান করা চলে। নীতির এই স্বচ্ছতা ভারতের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।

Advertisement

রাজনের অবস্থান হইতে স্পষ্ট, মূল্যস্ফীতির হার যদি এখন পাঁচ শতাংশের ধারেকাছে থাকে, তবে সুদের হার আরও কমিবে। কত দূর কমিতে পারে, তাহার একটি প্রচলিত নিয়ম আছে। প্রকৃত রেপো রেট (অর্থাৎ, ঘোষিত রেপো রেট হইতে মূল্যস্ফীতি বাদ দিলে যাহা থাকে) এক হইতে দেড় শতাংশের মধ্যে থাকিবে। মূল্যস্ফীতির হার পাঁচ শতাংশেই থাকিবে ধরিয়া লইলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেটকে ছয় হইতে সাড়ে ছয় শতাংশে নামাইয়া আনিতে পারে। কথাটি বিনিয়োগকারীরাও যেমন জানেন, উপভোক্তরাও জানেন। এখন প্রশ্ন হইল, এই দূরত্বটি রাজন কত দিনে অতিক্রম করিবেন? এখানেই উভয় সংকট। ব্যাঙ্ক ধীরে চলিবার নীতি গ্রহণ করিলে বিনিয়োগকারীরাও এখনই ঋণ না করিবার সিদ্ধান্ত করিতে পারেন। কারণ, তাঁহারা প্রত্যাশা করিবেন, ভবিষ্যতে সুদের হার আরও কমিবে। উপভোক্তারাও আপাতত ঋণ করিয়া ভোগব্যয় করিবার পথে না হাঁটিতে পারেন। রাজন যে আর্থিক বৃদ্ধির কথা ভাবিয়া সুদ কমাইলেন, ধীরে চলিলে সেই উদ্দেশ্য কতখানি সফল হইবে, প্রশ্ন থাকিতেছে। আবার, এখনই দ্রুত সুদ কমাইলেও বিপদ। যদি বর্ষা তেমন জোরদার না হওয়ার পূর্বাভাস মেলে, অথবা তেলের দাম আচমকা বাড়িয়া যায়, তখন মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে ফের সুদ বাড়াইতে হইবে। বাজারে ভুল বার্তা পৌঁছাইবে। রঘুরাম রাজন অতঃপর কোন পথে হাঁটেন, তাহাই দেখিবার।

তবে, বাজারে ইতিবাচক সংকেত দেওয়ার কাজে রাজনের সাফল্য প্রত্যাশিত। বিনিয়োগকারীরা স্বভাবতই উৎসাহিত হইবেন। সংকেত অবশ্য রাজন দিল্লির উদ্দেশেও দিয়াছেন। অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধারে ব্যাঙ্কের যাহা করণীয়, ব্যাঙ্ক করিতে আরম্ভ করিয়াছে। বাকি দায়িত্ব সরকারের। রাজকোষ ঘাটতির হারে লাগাম পরাইতেই হইবে। রাজন কথাটি স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। জানাইয়াছেন, দায়িত্বশীল রাজস্ব নীতি নমনীয় আর্থিক নীতির পূর্বশর্ত। ফেব্রুয়ারির বাজেটে জেটলি নিজের দায়িত্ব কতখানি পূরণ করিলেন, অনুমান করা চলে, ব্যাঙ্কের পরবর্তী সিদ্ধান্ত তাহার উপরেও নির্ভরশীল হইবে। এই বৎসর অবশ্য বিশ্ব-অর্থনীতি জেটলির সুবিধা করিয়া দিয়াছে। বিলগ্নিকরণের নীতিও আর একটি পথ খুলিয়া রাখিয়াছে। এখন দেখিবার, জেটলি এবং তাঁহার প্রধানমন্ত্রী কোন পথে হাঁটেন। জনমোহনের রাজনীতি তাঁহাদেরও ভাসায় কি না, আগামী বাজেট তাহার সাক্ষ্য দিবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement