সম্পাদকীয়

জুজুর উপকারিতা

কাজটি নৈতিকতার বিচারে ভাল না মন্দ, তাহা লইয়া তর্ক চলিতে পারে, তবে প্রাপ্তবয়স্করা কারণে-অকারণে শিশুদের জুজুর ভয় দেখাইয়া থাকেন। তাহাতে বেশ কাজও হয়। কিন্তু, প্রাপ্তবয়স্কদেরও জুজুর ভয় দেখাইবার প্রয়োজন হয়? সিগারেট বা অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের প্যাকেট দেখিলে সংশয় থাকে না। এখন ভারতে এই জাতীয় পণ্যের প্যাকেটের ৪০ শতাংশ জুড়িয়া ছবি ও লেখায় সতর্কবাণী থাকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানাইয়াছেন, আগামী এপ্রিল হইতে প্যাকেটের ৮৫ শতাংশই এই খাতে বরাদ্দ করিতে হইবে। এই অনুপাতের মাপকাঠিতে তামাকুসেবনে সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের কঠোরতম দেশে পরিণত হইবে। কেহ বলিতেই পারেন, এতই যখন আপত্তি, তখন তামাকজাত পণ্যকে একেবারে নিষিদ্ধ করিয়া দিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share:

কাজটি নৈতিকতার বিচারে ভাল না মন্দ, তাহা লইয়া তর্ক চলিতে পারে, তবে প্রাপ্তবয়স্করা কারণে-অকারণে শিশুদের জুজুর ভয় দেখাইয়া থাকেন। তাহাতে বেশ কাজও হয়। কিন্তু, প্রাপ্তবয়স্কদেরও জুজুর ভয় দেখাইবার প্রয়োজন হয়? সিগারেট বা অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের প্যাকেট দেখিলে সংশয় থাকে না। এখন ভারতে এই জাতীয় পণ্যের প্যাকেটের ৪০ শতাংশ জুড়িয়া ছবি ও লেখায় সতর্কবাণী থাকে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন জানাইয়াছেন, আগামী এপ্রিল হইতে প্যাকেটের ৮৫ শতাংশই এই খাতে বরাদ্দ করিতে হইবে। এই অনুপাতের মাপকাঠিতে তামাকুসেবনে সতর্কতা জারির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের কঠোরতম দেশে পরিণত হইবে। কেহ বলিতেই পারেন, এতই যখন আপত্তি, তখন তামাকজাত পণ্যকে একেবারে নিষিদ্ধ করিয়া দিলেই তো ল্যাঠা চুকিয়া যায়। সৌভাগ্য যে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার, তাহার যাবতীয় হেডমাস্টারি প্রবণতা সত্ত্বেও, কাজটি করে নাই। কোনও নেশার সামগ্রী নিষিদ্ধ হইলেই মানুষ নেশাটি ত্যাগ করে, দুনিয়ায় তাহার যথেষ্ট উদাহরণ নাই। বরং, সম্পূর্ণ বাণিজ্যটি কালোবাজারের, এবং অপরাধীদের, এবং ভেজালের কবলে পড়ে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যাঁহারা মোটের উপর আইন মানিয়াই চলেন, সিগারেট আইনত নিষিদ্ধ হইলে তাঁহাদের অনেকেই আইন ভাঙিবেন, এবং সেই প্রবণতাটি যে শুধু সিগারেটের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না, তাহারও প্রমাণ আছে। নিষেধাজ্ঞার পথটি বর্জনীয়।

Advertisement

কেহ বলিতেই পারেন, যাঁহারা ধূমপান করিতেছেন, তাঁহারা সেই নেশার মারাত্মক দিকটি জানিয়াই করিতেছেন। যদিও কথাটি ভারতের ন্যায় দেশের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সত্য নহে, তবুও তর্কের খাতিরে ব্যক্তিস্বাধীনতাবাদীদের এই জমিটুকু ছাড়িয়া দেওয়া চলে। তাঁহারা প্রশ্ন করিতেই পারেন, কেহ সজ্ঞানে নিজের ক্ষতি করিতে চাহিলে রাষ্ট্র বাধা দেওয়ার কে? এই প্রশ্নের প্রথম উত্তর, ধূমপানের নেতিবাচক অতিক্রিয়া মারাত্মক। প্রথমত, যাঁহারা ধূমপায়ী নহেন, তাঁহাদেরও ধূমপানের ক্ষত বহন করিতে হয়। দ্বিতীয়ত, দেশের স্বাস্থ্যব্যয়ের এক বিপুল অংশ ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের নেশা সংক্রান্ত রোগের চিকিত্‌সায় ব্যয় হয়। ব্যক্তিস্বাধীনতাবাদীরা বলিবেন, সেই কারণেই তো তামাকজাত পণ্যের উপর বিপুল কর আদায় করা হয়। কার্বন ট্রেডিং অর্থাত্‌ বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের ‘অধিকার’ লেনদেন যদি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত হয়, ধূমপানের ক্ষেত্রেই বা অতিক্রিয়ার ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা গনিয়া দিলে মামলা ফুরাইবে না কেন? কেন রাষ্ট্র আইন করিয়া ব্যবস্থা করিবে, যাহাতে চোখে আঙুল দিয়া ধূমপানের বিপদগুলি দেখাইয়া দেওয়া হয়?

নাগরিকদের জীবন-সামর্থ্য রক্ষা রাষ্ট্রের প্রাথমিক কর্তব্য। যে কাজে মানুষের ওপর এমন প্রভাব পড়ে যাহাতে তাহার স্বাভাবিক জীবনযাপনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়, সেই কাজে নাগরিককে বাধা দেওয়ার অধিকারও রাষ্ট্রের আছে। তামাকজাত দ্রব্যের নেশা সেই গোত্রের। যেহেতু নিষেধাজ্ঞায় লাভের তুলনায় ক্ষতি অনেক বেশি, কাজেই রাষ্ট্রকে ভিন্নতর পথের সন্ধান করিতে হয়। আচরণবাদী অর্থনীতির তত্ত্ব বলিবে, প্যাকেটের গায়ে কঠোর সতর্কবাণী সেই পথ। অর্থনীতি যতই দাবি করুক যে মানুষ সব সিদ্ধান্তই লাভক্ষতির অঙ্ক কষিয়া নেয়, আসলে তাহা নহে। তাত্‌ক্ষণিক সুখের প্রলোভন বহু ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতের বিপদের আশঙ্কাকে ঢাকিয়া দেয়। সিগারেটের প্যাকেটে ক্যান্সার-আক্রান্ত অঙ্গের ভয়াবহ ছবি সেই আশঙ্কাটির কথা স্মরণ করাইয়া দেয়। তখন সেই আশঙ্কা অনেক বেশি বাস্তব হইয়া উঠে, সেই ক্ষতিটি তাত্‌ক্ষণিক সুখের লাভের সহিত প্রত্যক্ষ তুলনায় চলিয়া আসে। সমীক্ষা বলিতেছে, যাঁহারা ধূমপান আরম্ভ করেন নাই, প্যাকেটের ভয়াবহ ছবি তাঁহাদের অনেককেই ধূমপান হইতে দূরে রাখে। সুতরাং, জুজু স্বাগত।

Advertisement

য ত্‌ কি ঞ্চি ত্‌

সলমন খান বললেন, অভিনেতারা যেমন যত্ন করে খতিয়ে নিজেদের বান্ধবী পছন্দ করেন, তেমনই খুঁটিয়ে জনগণ যেন নেতানেত্রী নির্বাচন করেন। তা হলে তো এ বার থেকে রাজনীতির লোকদের সেক্স অ্যাপিল ওজন করতে বসতে হয়। ব্যাপার গণতন্ত্রের পক্ষে একটু অস্বস্তিকর, কিন্তু সলমনোচিত ধাঁইধাপ্পড় হাতে-গরম সংস্কৃতির লাগসই। অবশ্য, নায়করা যে স্পিডে তাঁদের বান্ধবী বাতিল করেন, তা ভাবলে ব্যাপার আরও ঘোরালো। ইলেকশন তখন কেচ্ছাময় ও তিন হপ্তা অন্তর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন