সম্পাদকীয় ১

পরিবর্তন

সেই ইউপিএ নাই। কাজেই, সেই জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা যোজনা, তাহার আদি রূপে, যে থাকিবে না, তাহা প্রত্যাশিতই ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পটির চরিত্র পাল্টাইবার সিদ্ধান্ত করিয়াছে। অতঃপর রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকা অনেক বাড়িবে। রাজ্যের কোন কোন ব্লক এই প্রকল্পের আওতায় আসিবে, তাহা বাছাই করা হইতে প্রকল্পে কাজ পাইবার যোগ্য প্রার্থী শনাক্ত করা, অনেক দায়িত্বই রাজ্য সরকারের স্কন্ধে ন্যস্ত হইল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

সেই ইউপিএ নাই। কাজেই, সেই জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা যোজনা, তাহার আদি রূপে, যে থাকিবে না, তাহা প্রত্যাশিতই ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পটির চরিত্র পাল্টাইবার সিদ্ধান্ত করিয়াছে। অতঃপর রাজ্য সরকারগুলির ভূমিকা অনেক বাড়িবে। রাজ্যের কোন কোন ব্লক এই প্রকল্পের আওতায় আসিবে, তাহা বাছাই করা হইতে প্রকল্পে কাজ পাইবার যোগ্য প্রার্থী শনাক্ত করা, অনেক দায়িত্বই রাজ্য সরকারের স্কন্ধে ন্যস্ত হইল। আশঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় অনেক রাজ্যই এই দায়িত্ব পালনের মতো অবস্থায় নাই। কেহ বলিতে পারেন, কেন্দ্রীয় সরকার ঘুরপথে রাজকোষ ঘাটতির রাশ টানিতে চাহিতেছে। রাজ্য সরকারগুলির ব্যর্থতায় প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রের রাজকোষে ফিরিয়া গেলে বত্‌সর শেষে আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাইতে সুবিধা হইবে। কথাটি উড়াইয়া দেওয়ার মতো নহে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার ‘সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয়তা’র পথে হাঁটিবার কথা বলিয়াছে। কর্মসংস্থান প্রকল্পের দায়িত্ব রাজ্য সরকারগুলির সহিত ভাগ করিয়া লওয়ার সিদ্ধান্ত সেই নীতির সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। বস্তুত, যে রাজ্য এই নূতন ব্যবস্থার যথার্থ সুযোগ গ্রহণ করিতে পারিবে, সেখানে উন্নয়নের গতিবৃদ্ধি প্রায় নিশ্চিত। প্রশ্ন রাজ্য সরকারের দক্ষতার।

Advertisement

প্রকল্পটির মুখ্য উদ্দেশ্য বদলাইতেছে। অতঃপর কর্মসংস্থান নহে, সম্পদ নির্মাণই লক্ষ্য হইবে। সিদ্ধান্তটি লইয়া বিতর্ক হইবে, স্বাভাবিক। কেহ দাবি করিবেন, ২০০৬ সালে প্রকল্প সূচনার সময় তাহার যে দার্শনিক ভিত্তি ছিল, বর্তমান সিদ্ধান্ত তাহার পরিপন্থী। প্রকল্পভাবনার কেন্দ্রে ছিল কর্মসংস্থান, সম্পদ নির্মাণ নহে। কেহ আপত্তি জানাইয়া বলিতে পারেন, বহু ক্ষেত্রেই সম্পদ নির্মাণ সম্ভব নহে, কিন্তু কর্মসংস্থান প্রয়োজনীয়। এত দিন অবধি সেই ক্ষেত্রগুলি এই প্রকল্পের আওতায় পড়িত, কিন্তু বর্তমান সিদ্ধান্ত সেই রাস্তা বন্ধ করিয়া দিবে। আপত্তিগুলি লইয়া ঝোলাওয়ালা দুনিয়ায় উত্তপ্ত আলোচনা চলুক, কিন্তু সেই আলোচনায় বাস্তব বদলাইবে না। ভারতের সেই আর্থিক জোর নাই যে সম্পদ নির্মাণের কথা না ভাবিয়াই সরকারি খরচে কর্মসংস্থানের বিলাসিতা চলিতে পারে। ইউপিএ তথা তাহার জাতীয় উপদেষ্টা পর্ষদ ভাবাবেগে ভাসিয়া যে ভুল করিয়াছিল, বর্তমান সরকার তাহা শুধরাইয়া লইল। বস্তুত, গত জমানার শেষ পর্বে জয়রাম রমেশ যখন এই প্রকল্পে মজুরির সহিত উত্‌পাদনশীলতার সম্পর্কের কথা বলিয়াছিলেন তখন তিনিও বাস্তবকেই, ঈষত্‌ বিলম্বে, স্বীকার করিতেছিলেন।

সরকার আরও সিদ্ধান্ত করিয়াছে, সমস্ত গ্রামাঞ্চলে নহে, কেবল অনগ্রসর ব্লকগুলিতেই এই প্রকল্পের কাজ হইবে। কাহারা কাজ পাইবার যোগ্য, তাহারও নূতন সংজ্ঞা নির্ধারিত হইয়াছে। অর্থাত্‌, কাহারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাইবেন, সরকার তাহা স্থির করিয়া দিবে। এক কথায়, ‘টার্গেটিং’। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিপত্তি খাটাইয়া এই প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করিবার যত সংবাদ এ-যাবত্‌ মিলিয়াছে, নূতন ব্যবস্থা তাহার সুরাহা করিতে পারে। অবশ্য, তাহা নির্ভর করিতেছে রাজ্য প্রশাসনের সদিচ্ছার উপর। ‘আমাদের লোক’ বাছাইয়ের রীতি বজায় থাকিলে মুশকিল। কিন্তু, তাহাতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের গুরুত্ব হ্রাস পায় না। ব্লক বাছিয়া লওয়ার সিদ্ধান্ত লইয়া অবশ্য প্রশ্ন উঠিতে পারে। যে ব্লকগুলি ‘অনগ্রসর’ হিসাবে চিহ্নিত হইবে না, সেখানে বসবাসকারী দরিদ্ররা প্রকল্পের সুবিধা হইতে বঞ্চিত হইবেন। আপত্তিটি অযৌক্তিক নহে। কিন্তু, অপেক্ষাকৃত অগ্রসর ব্লকগুলিতে কাজের সুযোগ বেশি হওয়াই প্রত্যাশিত। ফলে, সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই সম্ভাবনা বাড়ানো যায় কি না, সরকার ভাবিয়া দেখিতে পারে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন