সম্পাদকীয়

পরধর্ম

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান কমিটির সচিবের লেখা গ্রন্থ সেক্রেটারি অফ পিস বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করিয়াছে। এই বইটি জানাইতেছে, পাঁচ জনের গোপন সমিতির সদস্যরা সর্বদা একমত হইয়া শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপকের নাম নির্বাচন করেন না, এমনকী তাঁহাদের মধ্যে নানা বিতণ্ডা হয়, মনোমালিন্যও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০১
Share:

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান কমিটির সচিবের লেখা গ্রন্থ সেক্রেটারি অফ পিস বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করিয়াছে। এই বইটি জানাইতেছে, পাঁচ জনের গোপন সমিতির সদস্যরা সর্বদা একমত হইয়া শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপকের নাম নির্বাচন করেন না, এমনকী তাঁহাদের মধ্যে নানা বিতণ্ডা হয়, মনোমালিন্যও। যেমন, ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে যখন শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া স্থির হয় তখন নির্বাচন-কমিটির সদস্যদের এক জন নাকি বিরক্ত হইয়া পদত্যাগ করিতে চাহিয়াছিলেন। ওবামা শান্তি আনিতে চাহেন, এই মনোবাসনা প্রকাশ করামাত্র শক্তিশালী আমেরিকার পরিতোষ সাধনের জন্য ‘রাষ্ট্রপতি’কে পুরস্কার প্রদান করা হইয়াছিল, ইহা অনেকেরই অভিযোগ। শান্তি পুরস্কারকে রাজনীতির অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করিবার এমন অভিযোগ অতীতেও বহু বার উঠিয়াছে। পুরস্কার দিয়া রাজনীতি করিবার পাশাপাশি পুরস্কার না দিয়া রাজনীতি করিবার অভিযোগও কম নহে। খেয়াল করিলে দেখা যাইবে, ওবামা যে শান্তি পুরস্কার পাইয়াছেন, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী তাহা পান নাই । একাধিক বার তাঁহার নাম সম্ভাব্য পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় বিবেচিত হইয়াছিল, কিন্তু ওই অবধি। পুরস্কার জোটে নাই। প্রতিযুক্তি হিসাবে বলা হইয়াছিল, মহাত্মার ‘অহিংস রাজনীতি’ তো জাতীয়তাবাদের কৌশল, তাহা দেশের কাজ, বৃহৎ বিশ্বশান্তি ভাবনার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ নহে। বুঝ লোক যে জান সন্ধান।

Advertisement

শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার বিষয়টি এমনই যে তাহা লইয়া তোষণের রাজনীতি প্রায় অনিবার্য। এমনিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান দেখাইয়া তাহা অর্জন করিতে হয়। অবদানটি প্রত্যক্ষগোচর। পরিমেয়। সাহিত্যের জন্য যিনি নোবেল পুরস্কার পান তাঁহাকে গ্রন্থ লিখিতে হয়। পদার্থবিজ্ঞান কিংবা রসায়নে যাঁহারা নোবেল পুরস্কার পান তাঁহাদের যুগান্তকারী কোনও তত্ত্ব, সমীকরণ বা আর কিছু আবিষ্কার করিতে হয়। অর্থাৎ যে কারণে নোবেল প্রাপ্তি সেই কারণটি স্পষ্ট। হইতেই পারে, কোনও এক বৎসর যাঁহাকে বাছিয়া লওয়া হইয়াছে তাঁহার তুলনায় অপর কোনও ব্যক্তির কাজ হয়তো যোগ্যতর ছিল। তাহা লইয়া বিতর্ক চলিতেই পারে। কিন্তু সেই বিতর্ক মূল্যায়নের মাপকাঠিকে মান্য করিয়াই, মাপকাঠিটিই বিতর্কের বিষয় এমন নহে। আবার, একটি অসামান্য গ্রন্থ লিখিতে চলিয়াছি বলিয়া কেহ সাহিত্যে নোবেল পাইতে পারেন না। আগে তো লিখিয়া দেখাইতে হইবে। অথচ শান্তির ক্ষেত্রে সবই যেন ভাসা ভাসা। ফলে কেহ শান্তি বজায় রাখিতে চাহেন এ কথা ভাবিলে ও বলিলে এবং তিনি তেমন ক্ষমতাশালী হইলে নোবেল প্রাপ্ত হইতে পারেন। পূর্বের উদাহরণ তাহা বলিতেছে ।

তবে উপায়? উপায় একটিই। ঢাকিসুদ্ধ বিসর্জন। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়ারই কোনও প্রয়োজন নাই। এত দিন নিতান্ত ভুল করিয়া দেওয়া হইয়াছে। শান্তির নামে বহু অশান্তি ও তোষামোদের রাজনীতি তো হইল, এ বার এই পুরস্কারটিকে তুলিয়া দেওয়া হউক। অন্য বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া বিধেয় কি না, তাহা অন্য বিবেচনার বিষয়। যথা, গণিত, দর্শন বা চিত্রকলা। তেমন সম্প্রসারণের নিজস্ব যুক্তি আছে। কিন্তু শান্তি পুরস্কার আর নহে। শান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চাহিলে তাহার জন্য অন্য পুরস্কার দানের বন্দোবস্ত হউক। ওবামাও তাহা চালু করিতে পারেন। কিন্তু তাহার জন্য নোবেল পুরস্কারের চরিত্র নষ্ট করিবার প্রয়োজন নাই। এই অবস্থানের যুক্তিটি সহজ ও স্পষ্ট। প্রত্যেকটি পুরস্কারের স্বধর্ম আছে। নোবেল পুরস্কারের স্বধর্ম বিষয়গত উৎকর্ষের স্বীকৃতির আদর্শে চালিত। তাহার কাঠামোয় শান্তি-অশান্তির কোনও স্থান নাই।

Advertisement

য ৎ কি ঞ্চি ৎ

পুজো একটা প্রোডাক্ট ছাড়া কিছুই নয়, তাই তার মার্কেটিং চাই, ব্যানারে ব্যানারে শোর মচিয়ে অহং ছলকে বলা চাই আমরা শ্রেষ্ঠ, এবং বেস্টও, সঙ্গে অন্যকে টেরিয়ে টিটকিরি। সিনেমার লোক এনে খুঁটিপুজো, আরও সিনেমার লোক এনে পোস্টারে নমস্কার, আরও আরও সিনেমার লোক এনে প্রতিমা ওপনিং। কেভিন স্পেসি লুঙ্গি ড্যান্স করছেন, জর্জ ক্লুনি-র ধুনুচি নেচে দুগ্গা উদ্বোধন আর কত দূরে? সেরা পেঁচার পুরস্কারের জন্য রিগিংও হবে। অপেক্ষা, কবে ভোগের সঙ্গে ফ্রি মোবাইল বিতরণ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন