প্রবন্ধ ২

বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে লড়াই শুরু করতে হবে ঘর থেকেই

‘কী ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে, সেটা বিভিন্ন শহরের, গ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের একে অপরের থেকে শিখে নিতে হবে।’‘কী ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে, সেটা বিভিন্ন শহরের, গ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের একে অপরের থেকে শিখে নিতে হবে।’

Advertisement

জেমস ব্রেনার্ড

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫১
Share:

মা র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ঝাঁ-চকচকে শিল্পশহর হোক বা ছোট গ্রামাঞ্চল, অথবা এই ভারত— বিশ্ব উষ্ণায়ন আজ দুনিয়ার সর্বত্র এক মস্ত চ্যালেঞ্জ। তবে, সমস্যা গোটা দুনিয়ার হলেও সমাধানের জন্য প্রথম পা ফেলতে হবে নিজের ঘরের কাছেই। নিজের শহরে, গ্রামে-মফস্‌সলে, যেখানে বিশ্ব উষ্ণায়নের আঁচ প্রতি দিন আমাদের গায়ে লাগছে। যেখানে বায়ুদূষণ, জলদূষণের তীব্রতা বাড়ছে, প্রকৃতির রুদ্ররূপ অনেক বেশি প্রকট হয়ে উঠছে।

Advertisement

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে আমার বারে বারেই মনে হয়েছে, কী ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে, সেটা বিভিন্ন শহরের, গ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের একে অপরের থেকে শিখে নিতে হবে।

আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা প্রদেশের কারমেল নামে শহরের মেয়র। আমার শহরে জনসংখ্যা আশি হাজারের বেশি। গত দুই দশক ধরে আমরা কিছু অত্যন্ত সহজ কাজের সঙ্গে কিছু নতুন আইডিয়ার মিশেল ঘটিয়ে একটা সুস্থায়ী নগর গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।

Advertisement

গত বারো বছরে আমাদের শহরের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। শহরতলির উন্নতি হয়েছে। শহর যে ভাবে বেড়েছে, আমরাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন পার্ক তৈরি করেছি, সবুজ বাড়িয়েছি, গাছ লাগিয়েছি। ৪০ একর থেকে বেড়ে এখন আমাদের শহরে সবুজের এলাকা ৮০০ একরে পৌঁছেছে। নগর প্রশাসনের তরফে আমরা গাছ লাগাই। সেগুলো আমাদের গাছ।

যখন আমরা শহরের নতুন প্রাণকেন্দ্র তৈরি করলাম, এবং একটি আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন ডিস্ট্রিক্ট গড়ে তুললাম, তখন আমরা চেয়েছিলাম, নাগরিকরা যেন আরও বেশি হাঁটেন, এবং সাইকেল চালান। আমাদের শহরের রাস্তায় সাইকেল চালানোর জন্য বিশেষ লেন রয়েছে। ইন্ডিয়ানা প্রদেশে আমাদের শহরই সবচেয়ে সাইকেল-বান্ধব।

পাশাপাশি, আমরা কিছু পরিবেশ-অনুকূল সিদ্ধান্তও করেছি। রাস্তায় ট্রাফিক ক্রসিং-এর পরিবর্তে আমরা রাউন্ড-অ্যাবাউট তৈরি করেছি— আপনারা যাকে আইল্যান্ড বলেন। তাতে যে শুধু যান চলাচলের কুশলতা বাড়ে অথবা পথ নিরাপত্তা বাড়ে, তা-ই নয়, ইঞ্জিন চালু করে ট্রাফিক সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি যে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করত, সেটাও বন্ধ হয়। প্রতিটি রাউন্ড-অ্যাবাউট বছরে প্রায় নব্বই হাজার লিটার পেট্রোল বাঁচায়। পরিবেশের পক্ষে ভাল। পকেটের পক্ষেও। গর্ব করে বলতে পারি, আমরা শিগগিরই শততম রাউন্ড-অ্যাবাউটটি তৈরি করতে চলেছি। আমেরিকায় এত বেশি রাউন্ড-অ্যাবাউট আরও কোনও শহরে নেই।

আমাদের শহরের দূষিত জল পরিশোধনের ব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ জৈব সার উৎপন্ন হয়, এবং স্থানীয় কৃষকরা এই সার ব্যবহার করেন। পাশাপাশি, এই জল শোধন করার ফলে স্থানীয় জলাজমিতে দূষকও কম মেশে।

কারমেলকে পরিবেশের প্রশ্নে দুনিয়ার অগ্রগণ্য শহর করে তোলার কাজে শহরের স্থানীয় স্কুল, ব্যবসায়িক সংগঠন এবং বিভিন্ন নাগরিক গোষ্ঠী আমাদের পার্টনার।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখি, পরিবেশের প্রশ্নটা রাজনীতির পাকচক্রে হারিয়ে যেতে বসে। প্রেসিডেন্ট ওবামার ‘টাস্ক ফোর্স অন ক্লাইমেট প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স’-এ যে সামান্য কয়েক জন রিপাবলিকান রাজনীতিক আছেন, তাঁদের এক হওয়ার সুবাদে আমি প্রায়শই বলি, রাজনৈতিক রং বা বিশ্বাস যাই হোক না কেন, আমি এখনও অবধি এমন কাউকে দেখিনি যিনি দূষিত বায়ুতে শ্বাস নিতে চান, অথবা নোংরা জল পান করতে চান।

স্থানীয় স্তরে কাজ আরম্ভ করতে হবে। দূষণ দূর করতে হবে, আরও গাছ লাগাতে হবে, প্রতিটি শহর, প্রতিটি গ্রামকে আরও বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। এই কাজ স্থানীয় ভাবেই শুরু হয়। প্রত্যেকেই এগিয়ে যেতে চান।

আমার মতে, জ্বালানি সাশ্রয় বা পরিবেশের উন্নতির প্রশ্নের সঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্বাসের কোনও বিরোধ নেই। বস্তুত, ভারতেই হোক বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সব রাজনৈতিক দলের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নেতাদের পরিবেশের প্রশ্নে একজোট হওয়া উচিত। কোন পথে হাঁটলে বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যার সমাধান হতে পারে, বিজ্ঞান যে আশঙ্কাগুলিকে তুলে ধরেছে, তার মোকাবিলায় কোন রণকৌশল জরুরি, তা ভেবে দেখা উচিত।

আপনার রাজনীতির রং যা-ই হোক না কেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদটিকে আর অস্বীকার করা সম্ভব নয়। এই সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট হওয়ার নৈতিক দায়িত্ব সকলের।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা প্রদেশের কারমেল শহরের মেয়র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন