সম্পাদকীয় ২

মেঘ জমিতেছে

ওয়াগা সীমান্তে তালিবানি জঙ্গিদের হামলায় ৫৭ জন পাকিস্তানির মৃত্যুর পরেই হামলাকারীরা জানাইয়া দিয়াছে, তাহাদের লক্ষ্য ভারতও। বস্তুত, ভারত-পাক সীমান্তে তালিবানি মানববোমার বিস্ফোরণ সীমান্তে হাজির ভারতীয় দর্শককুল ও বাহিনীর জওয়ানদেরও হত্যা করিতে পারিত, নেহাত জঙ্গিরা ততটা কাছে পৌঁছাইতে পারে নাই। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-এর জামাত-আহ্রার গোষ্ঠীর মুখপত্র দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাইয়াছে, অতঃপর ভারতীয় লক্ষ্যবস্তুতেও হানাদারি চলিবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
Share:

ওয়াগা সীমান্তে তালিবানি জঙ্গিদের হামলায় ৫৭ জন পাকিস্তানির মৃত্যুর পরেই হামলাকারীরা জানাইয়া দিয়াছে, তাহাদের লক্ষ্য ভারতও। বস্তুত, ভারত-পাক সীমান্তে তালিবানি মানববোমার বিস্ফোরণ সীমান্তে হাজির ভারতীয় দর্শককুল ও বাহিনীর জওয়ানদেরও হত্যা করিতে পারিত, নেহাত জঙ্গিরা ততটা কাছে পৌঁছাইতে পারে নাই। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-এর জামাত-আহ্রার গোষ্ঠীর মুখপত্র দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাইয়াছে, অতঃপর ভারতীয় লক্ষ্যবস্তুতেও হানাদারি চলিবে। কিছু কাল আগে আল-কায়দার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি তাঁহার সংগঠনের ভারতীয় শাখা খুলিবার কথা ঘোষণা করিয়াছিলেন। অভিযোগ, আফগান-পাক সীমান্তে তাঁহার যোদ্ধাদের সহিত হাত মিলাইয়াই ভারতীয় জেহাদি গোষ্ঠীর জঙ্গিরা শিক্ষানবিশি করিতেছে। প্রশিক্ষণ সাঙ্গ হইলে ভারতেও ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামি রাষ্ট্রবাদীদের মতো জেহাদি যুদ্ধ শুরু করার প্রস্তুতির কথাও শুনা যাইতেছে। ইহারই মধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর হইতে আফগানিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি গোষ্ঠী মারফত পাকিস্তানের প্রক্সি-যুদ্ধ চালাইবার বিস্তৃত রিপোর্ট প্রকাশিত। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

Advertisement

পাকিস্তান পেন্টাগনের অভিযোগ উড়াইয়া দিয়াছে। কিন্তু পাক সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সহিত হাক্কানি গোষ্ঠী সহ বিভিন্ন জেহাদি সংগঠনের যোগসাজশের কথা সুবিদিত। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ও বাংলাদেশি জামাতপন্থীদের সহিত যোগসাজশের অভিযোগও দীর্ঘ দিনের। সত্য, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে জনজাতি-অধ্যুষিত ওয়াজিরিস্তান এলাকায় পাক বাহিনী জঙ্গি-বিরোধী সমরাভিযানে লিপ্ত রহিয়াছে। সেই সঙ্গে এ কথাও সমান সত্য যে, জামাত-উদ-দাওয়া, লস্কর-ই-তইবা, হিজবুল মুজাহিদিনের মতো ভারতবিরোধী জেহাদি সন্ত্রাসী সংগঠন পাক প্রশ্রয়েই লালিত। ওই সব সংগঠনেরই স্বেচ্ছাসেবকরা মুম্বই বিস্ফোরণের মতো ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী নাশকতা ঘটাইয়াছে। বারংবার অনুরোধেও পাক কর্তৃপক্ষ ওই জেহাদিদের নয়াদিল্লির হাতে তুলিয়া দেয় নাই, নিজ আদালতেও বিচারান্তে শাস্তি দেয় নাই। পেন্টাগনের রিপোর্টকে অতএব উড়াইয়া দিবার কিছু নাই। নয়াদিল্লি রিপোর্ট পাওয়া মাত্র কলিকাতা ও হলদিয়া বন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলিতে নিরাপত্তা নিবিড়তর করা হইয়াছে। যুদ্ধজাহাজগুলিকেও নদী-বন্দর হইতে দ্রুত গভীর সমুদ্রে জঙ্গি নাশকতার সম্ভাব্য পাল্লার বাহিরে লইয়া যাওয়া হইয়াছে।

আফগানিস্তান হইতে মার্কিন ও বহুজাতিক সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া যত ত্বরান্বিত, জেহাদি জঙ্গিদের বিভিন্ন সংগঠনের তত্‌পরতা উপমহাদেশে তত বর্ধমান। এই প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে জেহাদি জঙ্গিদের তত্‌পরতার ক্রমবর্ধমান অভিযোগ এক ভিন্ন মাত্রা অর্জন করে। একটি যুক্তি এ ক্ষেত্রে অনেক কাল যাবত্‌ শোনা গিয়াছে— এই রাজ্য জেহাদিদের নিরাপদ আশ্রয় ও অবাধ গতিবিধির অঞ্চল ছিল বলিয়াই নাকি এখানে কোনও জঙ্গি হামলা হয় নাই। এই যুক্তির যাথার্থ্য বোঝা দুষ্কর। তবে ইহা সত্য হইলে দ্বিগুণ ভয়ানক। সমস্যা তো কেবল হামলা নয়, জঙ্গি কার্যক্রমের প্রসার রোধ করাও বটে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে ইহা স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের দায়িত্ব এ বিষয়ে বিস্তর, কাজও অনেক। নাশকতামূলক কাজকর্মের বর্তমান ও ভবিষ্যত্‌ বিপদের বিষয়ে চোখ বুজিয়া থাকার আর সময় নাই।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন