সংগ্রামী। হরিদাস মালাকার (বাঁ দিকে)।
ঘোর মফস্সল শহরে শৈশব কেটেছে। পৃথিবীর সঙ্গে সংযোগ প্রায় শূন্য, শিশু শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ের পাতায় চোখ বড় বড় করে মহাপুরুষদের জীবনকথা পড়তাম, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে সব বাঙালি মনীষী বা ওই গোত্রের কেউ যশস্বী যশস্বিনী হয়েছেন, দেশের মুখ ‘উজ্জ্বল’ করেছেন, সমাজকে উন্নতির সোপানে এগিয়ে যেতে প্রভূত সাহায্য করেছেন, তাঁদের জীবনী শ্রদ্ধাভরে লেখা, আমার মতো হাবাগোবা সন্তানরা বহুগুণ বেশি ভক্তিভরে পড়তাম। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, ‘স্যর’ আশুতোষ, ভগিনী নিবেদিতা, হাজী মহম্মদ মহসীন সকলেরই জীবনের সংক্ষিপ্ত সমাচার আমাদের জ্ঞানের পরিধির মধ্যে আসত। সবাই আমাদের জন্য আদর্শের পথ দেখিয়ে যাওয়ার ব্রতেই যেন নিজেদের উত্সর্গ করেছিলেন, যাঁদের জীবনী পড়তাম তাঁদের শ্রেণি-ধর্ম-গোত্র ইত্যাদি নিয়ে আদৌ ভাবতাম না, ভাবনার কথা মনে ঠাঁইই পেত না, কারণ এর মধ্যে ধর্ম ব্যাপারটি সম্পর্কে ভাসাভাসা একটু ধারণা থাকলেও শ্রেণি-গোত্র-গোষ্ঠী ইত্যাদি বিষয়ে চেতনা তখন শূন্য। ধরেই নিতাম এ সব বড় বড় মানুষজন, যাঁরা সমাজের উপরতলায় বিরাজ করে আমাদের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন এবং করছেন, তাঁরা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে, ঘোর সুদূরচারী।
মফস্সলের শৈশব কবে মিলিয়ে গেছে! সমাজ-দেশ-পৃথিবী তার রূঢ় স্বরূপ নিয়ে ক্রমে উদ্ঘাটিত। চেতনার অনেকগুলি স্তর আমরা প্রত্যেকেই পেরিয়ে আসি, ঘুটঘুটে পল্লি অঞ্চলে কোনও ক্রমে ধুকেপুকে বেঁচে থাকা দরিদ্রতম মানুষটিও চৈতন্যশীল হতে শেখেন, কারণ টিকে থাকার প্রয়োজনে তিনি আস্তে আস্তে হৃদয়ঙ্গম করেন, সমাজব্যবস্থা বহু অসামঞ্জস্যে সমাচ্ছন্ন, তিনি দু’বেলা পেট পুরে খেতে পান না, সেই রহস্যের সূত্রে কোনও না কোনও সামাজিক বৈকল্য। সমাজচেতনা যেহেতু ব্যাপ্ততর হচ্ছে, বর্গ-বর্ণ-শ্রেণি-সম্প্রদায় জনিত ভেদাভেদগুলিও প্রকট থেকে প্রকটতর। তাই যে সব বিষয় নিয়ে আগে প্রশ্ন উঠত না, এখন উঠছে, যেমন দৃপ্ত উদ্ধতি নিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে, স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গে এ পর্যন্ত সাত-সাত জন মুখ্যমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেছেন, সবাই বামুন-ব্রাহ্ম-বদ্যি-কায়েত, অন্য বর্গের ঠাঁই মেলেনি। শ্রেণিবৈষম্য বিলুপ্ত করতে বদ্ধপরিকর ঘোর বামপন্থী দলে পর্যন্ত প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, এমন দলেরও নেতৃস্থানীয়দের আসনে এখনও সেই বামুন-বদ্যি-কায়েতদেরই পরাক্রম, অন্যরা কি শুধু অনুগত পদাতিকই থেকে যাবেন? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা না-হয় উহ্যই রইল।
এমন ধরনের কথাবার্তা যে উচ্চারিত হতে শুরু হয়েছে, তা কেউ কেউ সন্দেহের চোখে দেখছেন, তাঁদের বিচারে এটা প্রতিক্রিয়াশীলদের একটি অভিনব ‘চক্রান্ত’। তবে ব্যাপারটি এমন হাল্কা ভাবে না-দেখাই সম্ভবত উচিত হবে। একটি প্রশ্ন উত্থাপনের পিছনে কার কী মতলব কাজ করছে সেই চিন্তাটি পাশে সরিয়ে রেখে উত্থাপিত প্রশ্নটির বাস্তব যৌক্তিকতা আছে কি না তা নিয়ে ভাবিত হওয়া বরং নিরাপদ।
স্কুলপাঠ্য বইতে জীবনী ছাপা হওয়া মহাপুরুষদের প্রসঙ্গেই ফিরে যাই না কেন, চেতনা তো এখন সর্বত্রগামী, আলোবিদ্যুত্হীন একফসলি জমি সমাকীর্ণ খরায় বিধ্বস্ত জীর্ণ জলাভূমি সমাচ্ছন্ন পশ্চিমবঙ্গের হদ্দতম গাঁয়েও একটি ন’বছরের বালক পাশের গ্রামের স্কুলে ভর্তি হয়েছে, সে তেমন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে না পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে, যে ক’টা দিন যায়, পাঠ্যপুস্তকগুলিতে তার একাগ্র বিহার। মহাপুরুষদের জীবনী তাকেও মুখস্ত করতে বলা হয়, এটা কি মস্ত অন্যায় হবে যদি তার মনে প্রশ্নের উদয় হয়, সব মহাপুরুষগুলোই অমন দূরের মানুষ কেন, তার চৌহদ্দির মধ্যে কোনও মহাপুরুষ কি জন্মাননি, জন্মাতে পারেন না? এমনধারা প্রশ্নের গহ্বরেই কিন্তু অনেক বিপজ্জনক সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে।
এমন একটি বালকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ ঘটলে তাকে বাহবা দিয়ে বলতাম, তুমি জব্বর প্রশ্ন করেছ, তোমার পরিচয়ের বৃত্তের মধ্যেই অনেক মহাপুরুষ অবস্থান করছেন, তবে তাঁরা প্রচারে আসেন না, আসতে চানও না, তা ছাড়া সমাজব্যবস্থা যাঁরা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাঁরা এই মহাপুরুষদের স্বীকৃতি দিতে নারাজ। সেই বালকের কাছের মানুষ বলে মনে হবে এমন এক জন মহাপুরুষের কথা এ বার নিবেদন করছি, নাম, দোহাই আঁতকে উঠবেন না, হরিদাস মালাকার। জন্ম গত শতকের তিরিশের দশকে, ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগনার এক জরাজীর্ণ গ্রামে। পরিবার অতি নিম্নবর্গীয়, এক বিশেষ কারিগর সম্প্রদায়, যাঁরা কবিরাজ কিংবা হাকিম সাহেবের ওষুধ তৈরি করার সরঞ্জাম এগিয়ে দিতেন, কিন্তু ওষুধগুলো তৈরি হলে তা স্পর্শ করার অধিকারও তাঁদের থাকত না। গরিব গ্রাম, আদি বৃত্তি থেকে উপার্জনের সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর, মালাকাররা তাই ক্রমশ জীবিকার সন্ধানে অন্যত্রগামী। হরিদাস মালাকার গ্রামের বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ নিয়েছিলেন, অনটনের কারণে বিদ্যাচর্চার অবসান, হন্যে হয়ে কাজ খুঁজে বেড়ানো, তেরো বছর বয়সে এক নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে কাজের খোঁজে রাজধানী কলকাতা শহরে। পাথুরেঘাটা অঞ্চলে এক সম্পন্ন পরিবারে ছেলেমেয়েদের ক খ শেখানোর শর্তে মাথা গুঁজবার ঠাঁই, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে সেলাই কল মেরামতির এক ছোট্ট কারখানায় শিক্ষানবিশির সুযোগ হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো, ছ’মাস গড়িয়ে গেলে হরিদাস তাঁর স্বভাবনৈপুণ্যে কল মেরামতিতে দুরস্ত, কিন্তু মালিক একটি পয়সাও বেতন দিতে সম্মত নন। তবে ভাগ্য ঈষত্ প্রসন্ন, দিল্লির বড় শিল্পপতি শ্রীরাম, তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলছে, কলকাতার দক্ষিণ উপকণ্ঠে একটি সেলাই যন্ত্র নির্মাণ কারখানার পত্তন করলেন। কল মেরামতির শিক্ষা কাজে লাগল, হরিদাস কারখানার প্রথম দফায় নির্বাচিত পনেরো জনের অন্যতম। ওপরওয়ালারা তাঁর কর্মদক্ষতায় মুগ্ধ, শ্রীরাম মহোদয়ের অন্যতম পুত্র একদা খেদের সঙ্গে, এবং ক্ষোভের সঙ্গে, আমাকে জানিয়েছিলেন, হরিদাস মালাকারকে তাঁরা পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন তাঁর কাজকর্মে মালিকপক্ষ খুশি, তাঁকে শিগগিরই ফোরম্যান করে দেওয়া হবে, বিদেশে ঘুরিয়ে আনা হবে, কয়েক বছরের মধ্যে অফিসার পর্যায়ে উন্নীত করার ইচ্ছে তাঁদের। হতচ্ছাড়া লোকটা অথচ কিনা ইউনিয়নবাজিতে নেমে পড়ল! শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান, শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গ পরিত্যাগ করে হরিদাস মালিকদের সঙ্গে যোগ দিতে গররাজি, শ্রীরাম মশাই যা চাইছিলেন তার উল্টোটি ঘটল। উষা সেলাই কল নির্মাণ কারখানার পোশাকি নাম জয় ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। হরিদাস মালাকার তাঁর প্রথম শ্রেণি-সংগঠন তৈরি করলেন সেখানে, শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে মালিকপক্ষের কাছে আবেদনপত্র পেশ করলেন, মালিকরা তাঁর আচরণে ক্ষিপ্ত, যেন তিনি নিমকহারামি করেছেন। সেই যে শ্রেণি সংঘর্ষ শুরু জয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে হরিদাস সেই আন্দোলন বছরের পর বছর তীব্রতর হয়েছে। ধর্মঘটের পর ধর্মঘট, মালিকদের প্রসাদপুষ্ট পুলিশের অত্যাচার, গ্রেফতার। হরিদাসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু, তিনি কারান্তরালে, একটি মামলায় খালাস পেয়ে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে আর একটিতে ফের কয়েদ, এমনি বহে ধারা। বন্দিদশায় সহবন্দি কমরেডদের সহায়তায় আপন পাঠে মন নিবেশ করে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, চরিতার্থ। আশেপাশে নানা কলকারখানার শ্রমিকদের সংগঠনের কাজে নিজেকে নিমগ্ন করলেন, তিনি আর নিছক ‘জয়’ শ্রমিকদের নেতা নন, গোটা পশ্চিমবাংলার ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের অবিসংবাদিত শ্রমিক নেতা। ১৯৬৪ সালে এক দীর্ঘ সময় জুড়ে জয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যে ধর্মঘট হয় তার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ধর্মঘট ভারতবর্ষে আগে কখনও হয়নি। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের অবশ্য কতকগুলি শর্ত মেনে ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে হল, কিছু দাবি মিটল কিছু দাবি মিটল না। কিন্তু মালিকপক্ষ একটি ব্যাপারে অনড়, হরিদাস মালাকার-সহ বেশ কয়েক জন শ্রমিক নেতাকে তাঁরা কিছুতেই কাজে ফিরিয়ে নেবেন না, নেনওনি। তবে তত দিনে হরিদাস মালাকার তো আর জয়’তে আটকে নেই, গোটা রাজ্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন, শ্রমিক সংগঠনগুলিকে আরও মজবুত করার অক্লান্ত অধ্যবসায়ে। তাঁর নাম রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, তিনি সঙ্ঘবদ্ধ শ্রমিক প্রতিবাদের প্রতিভূ।
ওই ঋতুতে রাজ্যের রাজনীতিতে প্রবল কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা প্রায় সর্বস্তরে দ্রুত বর্ধমান, কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এই দলের আদর্শগত অভ্যন্তরীণ বিসংবাদ, পরিণাম একটি কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে দু’টির উদ্ভব, যাদের তখন সাদামাঠা ভাষায় ডান কমিউনিস্ট ও বাম কমিউনিস্ট বলা হত। ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুই কমিউনিস্ট পার্টির দুই আলাদা গোষ্ঠীর নেতৃত্ব কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যতটাই যুযুধান, পরস্পরের বিরুদ্ধেও ততটাই। হরিদাস মালাকারের নাম এই নির্বাচনের ইতিহাসের সঙ্গে অচ্ছেদ্য জড়িয়ে গেছে। জয় ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা তখন ঢাকুরিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্বর্তী। তার ঘর্মঘট-কাহিনি পাড়ায় পাড়ায় মুখে মুখে ঘুরছে। বাম কমিউনিস্ট দলের পক্ষ থেকে ওই কেন্দ্রে হরিদাস মালাকারকে প্রার্থী ঘোষণা করা হল, আর ডান কমিউনিস্ট দল তাদের অন্যতম প্রধান নেতা সর্বজনপরিচিত পরমপরিশীলিত সুলেখক সোমনাথ লাহিড়ীকে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিল। কংগ্রেসের উপর প্রায় সব শ্রেণিগোষ্ঠীর মানুষজন তিতিবিরক্ত, কিন্তু ঢাকুরিয়া কেন্দ্রের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত ভোটদাতারা কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি, তাঁরা সংস্কৃতিমান, এমনকী হয়তো রাজনীতির বিচারে দক্ষিণপন্থীদের চেয়ে বামপন্থী কমিউনিস্টদেরই ঈষত্ বেশি পছন্দ করেন, কিন্তু এমন সজ্জন সম্ভ্রান্ত বারেন্দ্র বংশের সন্তান লাহিড়ী মশাইকে ভোট না-দিয়ে কোন এক ‘ধর্মঘটী মালাকার’কে ভোট দিতে যাবেন কোন দুঃখে? ফল বেরোলে দেখা গেল, কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন ১৫,২১২টি ভোট, হরিদাস মালাকার ১৭,০৯৮ এবং জয়ী সোমনাথ লাহিড়ী ২০,২১২টি ভোট। ভদ্রলোক শ্রেণি ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলেন।
ঘটে যাওয়া ইতিহাসের বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে মনে মনে খেলা করতে বেশ লাগে। যদি ডান কমিউনিস্টরা সংকীর্ণতায় সামান্য জলাঞ্জলি দিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন, যেহেতু হরিদাস মালাকারের মতো নিখাদ শ্রমজীবী বংশোদ্ভূত শ্রমিকনেতা বামদের হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাঁকে সম্মান জানিয়ে সোমনাথ লাহিড়ীর প্রার্থিপদ এঁরা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন এবং হরিদাসবাবুকে ভোট দেওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানাচ্ছেন, তা হলে নির্বাচনী ফলটা কী হত? অন্য একটি বিকল্প, ডান কমিউনিস্টরাও ঢাকুরিয়া কেন্দ্রে সোমনাথ লাহিড়ীর পরিবর্তে যদি খাঁটি শ্রমজীবী বংশোদ্ভূত কাউকে প্রার্থী নির্বাচন করতেন, তা হলেই বা ফলাফল কী হত? ভাগ্যক্রমে উচ্চবর্গীয় বাম ঘেঁষা ভোটদাতাদের এ ধরনের জটিল আবর্তের মধ্যে পড়তে হয়নি।
এই নির্বাচন উপলক্ষে হরিদাস মালাকার কয়েক সপ্তাহ সংবাদপত্রে চর্চিত হয়েছিলেন, নির্বাচনী উত্তেজনা থিতিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামহীনতায় প্রত্যাবর্তন করলেন। গোটা জীবন দারিদ্রে কাটিয়েছেন, শ্রমিক নেতা হিসেবে শ্রমজীবীদের প্রচুর ভালবাসা ও সম্মান পেয়েছেন, সর্বভারতীয় শ্রমজীবী সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছেন, কিন্তু আগাগোড়া আদ্যন্ত শ্রমজীবীই থেকে গেছেন। শ্রীরাম মহোদয়ের প্রদত্ত সমস্ত প্রলোভন উপেক্ষা করে বড়লোক হওয়ার হাতছানি নির্দ্বিধায় ফিরিয়ে দিয়ে নিজের শ্রেণিসান্নিধ্যে নিবিড় প্রশান্তির সন্ধান পেয়েছেন। এমন ব্যক্তিকে মহাপুরুষ ছাড়া অন্য কিছু বলে ভাবতে আমি রাজি নই। তবে পাঠ্যপুস্তক যাঁরা লেখেন এবং যাঁরা অনুমোদন করেন, তাঁরা এমন বাতুল প্রস্তাবকে উপহসনীয়ই বিবেচনা করবেন।