সম্পাদকীয় ২

সকলেই নিধিরাম

রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, কিংবা রাজ্য মহিলা কমিশন গোত্রের প্রতিষ্ঠানগুলির কাজটি ঠিক কী? রাজনীতির প্রসাদ বিতরণ তাহাদের অস্তিত্বশীলতার প্রথম ও প্রধান শর্ত হইলেও, চক্ষুলজ্জার খাতিরেও কি প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাহাদের নামের সঙ্গে কিছু সামঞ্জস্য রাখিয়া কিছু কাজ করিতে হয় না? দেখা যাইতেছে, প্রতিষ্ঠানগুলির একমাত্র ভূমিকা, প্রসাদ-বিতরণী রাজনীতির মুখপানে চাহিয়া বসিয়া থাকা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৩০
Share:

রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, কিংবা রাজ্য মহিলা কমিশন গোত্রের প্রতিষ্ঠানগুলির কাজটি ঠিক কী? রাজনীতির প্রসাদ বিতরণ তাহাদের অস্তিত্বশীলতার প্রথম ও প্রধান শর্ত হইলেও, চক্ষুলজ্জার খাতিরেও কি প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাহাদের নামের সঙ্গে কিছু সামঞ্জস্য রাখিয়া কিছু কাজ করিতে হয় না? দেখা যাইতেছে, প্রতিষ্ঠানগুলির একমাত্র ভূমিকা, প্রসাদ-বিতরণী রাজনীতির মুখপানে চাহিয়া বসিয়া থাকা। তাপস পালের ভয়াবহ ও দুর্বাক্যের দৃশ্য-শ্রাব্য প্রমাণ সত্ত্বেও এখনও অবধি এই দুইটি প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ উদাসীন। রাজ্য মহিলা কমিশন জানাইয়াছে, পুরাতন কাসুন্দি ঘাঁটিবার সময় তাহাদের নাই। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন জানাইয়াছে, তাহাদের এই বিষয়ে তেমন কোনও করণীয় আছে বলিয়া জানা নাই। আরও আশ্চর্য যে, বৃহত্তর সমাজ এই সব কমিশনের নিশ্চুপতার বিষয়ে তেমন ভাবিতও নয়। নেতৃ(ত্রী?)স্থানীয়রা যখন তাপস পালকে প্রশ্রয় দিবেন স্থির করিয়াছেন, তখন রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান যে সমবেত ভাবে তাহাই করিবে, ইহাই এখন স্বাভাবিক প্রত্যাশায় পরিণত, সুতরাং বৃথা অরণ্যে তর্জনগর্জন করিয়া লাভ কী: ভাবটা এই রকম। এই সর্বব্যাপী একমুখিতা ভয়াবহ বলিলেও কম হয়, ইহা সার্বিক বিনাশের সাক্ষাৎ ইঙ্গিত।

Advertisement

এই একমুখিতা নির্মাণের কাজটি রাজ্যের শীর্ষনেতৃত্ব কী ভাবে সযত্নে ও স্বহস্তে করিয়া থাকে, তাহা রাজ্য মহিলা কমিশনের ভাইস-চেয়ারপার্সন নির্বাচন হইতেই স্পষ্ট। অনুমান করিবার যথেষ্ট কারণ আছে যে, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে সাফল্য না পাইবার সান্ত্বনার সহিত এই ভাবেই মিলাইয়া দেওয়া হইল মহিলা কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান দখলের কার্যক্রমটিকে। এই কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও একই আনুগত্য-গুণে গুণী। কেহ যুক্তি দিতেই পারেন যে, মহিলা অধিকার বিষয়ে ইঁহাদের যদিও কোনও ভাবনা-চিন্তা-সক্রিয়তার ইতিহাস নাই, বা অন্য কোনও পেশাগত যোগ্যতা নাই, কিন্তু তাহা বলিয়া কি তাঁহারা এই পদে বৃত হইতে পারেন না? উত্তরটি সহজ ও স্পষ্ট: না, পারেন না। পরে কে কী করিবেন না করিবেন, তাহা পরের কথা। এই ধরনের পদে অধিষ্ঠিত হইবার অধিকার যাঁহাদের প্রমাণিত নহে, তাঁহাদের কেন এমন দায় ও দায়িত্ব দেওয়া হইবে, সেই প্রশ্ন উঠিবেই। এবং দায়িত্ব-গ্রহণের পর তাঁহারা কী করিতেছেন (বা কী করিতেছেন না), তাহার উপরও সে প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করিবে। পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার কমিশন বা রাজ্য মহিলা কমিশনের স্বর্ণাভ নীরবতার তো কোনও মূল্যায়নও চলে না!

প্রতিটি মনোনয়নেরই পিছনে একটি যুক্তি থাকে। বিষয়ে অধিকার যদি সেই যুক্তি না হয়, তবে অবশ্যই যুক্তিটি আনুগত্যের, প্রশ্নহীন আনুগত্যের। আনুগত্যের পুরস্কার নিশ্চয়ই পশ্চিমবঙ্গ এই প্রথম দেখিতেছে না। অবশ্যই এই প্রথা, এই রাজনীতি, এই অন্ধ একমুখিতা, সবই বাম-আমলের পূতিগন্ধময় ঐতিহ্য, যাহা তৃণমূল-রাজ আজ অধিকতর দক্ষতায় পালন করিতেছে। কিন্তু সামাজিক অন্যায় ও অনাচারের মাত্রা প্রত্যেক দিনই লাফাইয়া বাড়িতেছে, সামাজিক নিষ্ক্রিয়তার মাত্রাটিও অসহনীয়তর ঠেকিতেছে। কোথায় ইহার শেষ? গুলি করিয়া মারুন, বিরোধীদের শরীর দুই ভাগে চিরিয়া দিন, মহিলা পাইলেই ধর্ষণ করুন: দলনেতাদের এই সব উদাত্ত আহ্বানও যদি নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিচলিত না করে, তবে গণতন্ত্রের পালা পশ্চিমবঙ্গে শেষ হইয়াছে, ইহাই নিশ্চিত সত্য।

Advertisement

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন