বহুত্বের কল্পস্বর্গ
জয়ন্ত ঘোষালের লেখা (‘বহুত্বের পথে মোদী সফল হতে পারেন’, ২৪-২) পড়ে আশান্বিত হলাম, একই সঙ্গে সৃষ্টি হল দোলাচলও। দোলাচল এই কারণে যে, বর্তমান পৃথিবীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অনেকেই মনে করেন যে, বহুত্ববাদ আসলে অসম্ভবের সাধনা। বলা যেতে পারে, এক কল্পস্বর্গ। এবং তাঁদের এই মতের সপক্ষে উদাহরণ বড় কম নয়। চিনের ‘উইগুর’ বা মায়ানমারের ‘রোহিঙ্গা’রা বৃহতের মূল স্রোতে শুধু মিশতে পারেননি তা-ই নয়, নিজের নিজের দেশের ‘মূলস্রোত’ থেকে তাঁদের দূরত্ব ক্রমশ বর্ধমান। একই সঙ্গে বলা যেতে পারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ক্রমশ বিলীয়মান স্বল্পসংখ্যকদের কথাও।
এই প্রসঙ্গে আমেরিকার ‘মেল্টিং পট’টির কথা উল্লেখ না-করলেই নয়। গত ২৬ জানুয়ারি মাননীয় ওবামা ভারত ভ্রমণ সেরে দেশে ফিরে গিয়ে উল্লেখ করেছিলেন ভারতের ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কথা, এবং কী আশ্চর্য, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন করে প্রমাণিত হয় যে, তাঁর দেশের ‘মেল্টিং পট’-টিও মোটেই ছিদ্রহীন নয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, এমনকী উদার ফ্রান্সেও বহুত্ববাদের সাধনা আজ গভীর ফাটলের মুখোমুখি।
মাননীয় নিবন্ধকার ‘ভারততীর্থ’-এর কথা বলেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, রবীন্দ্রনাথ আর ছ’টা বছর বেঁচে যাননি। দেখে যাননি দেশভাগ, দেখে যাননি তাঁর সাধের ভারততীর্থের ও সুন্দরী বঙ্গভূমির ভয়াবহ ভবিষ্যৎ। যদি দেখতেন, তা হলে আর যাই হোক, নতুন একটি ভারততীর্থ তাঁর সতত সৃষ্টিশীল কলমও লিখে উঠতে পারত না বোধহয়; কী ভূমিকা ধারণ করত তাঁর সেই কলম, তা আর দেখা হল না।
সনাতন পাঠক। কলকাতা-১