এখন নেহাত রূপকথা মনে হয়
শংকর লিখেছেন, নেহরু-বিধান পত্রাবলি খুঁটিয়ে দেখলে অনেক ঘটনা পাওয়া যায় যা হৃদয় স্পর্শ করে। (‘ডাক নাম ভজন ভাল নাম বিধান’, পত্রিকা, ২৮-৬) এ কথা সত্যি যে, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অনেক পত্র বিনিময় হয়েছিল তাতে অনেক অভাব, অনুযোগ (রাজ্য সম্পর্কে) ছিল, তা কখনও শালীনতার গণ্ডি লঙ্ঘন করেনি। প্রধানমন্ত্রী হলেও নেহরুর সঙ্গে ডা. রায়ের ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দুটি উদাহরণ দিচ্ছি। ১৯৪৯ সালের ১ ডিসেম্বর বিধানচন্দ্র রায় প্রধানমন্ত্রী নেহরুকে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে যে চিঠি লিখেছেন—
প্রিয় জওহর,
... তোমার ধারণা উদ্বাস্তুদের সাময়িক সাহায্য (রিলিফ) এবং পুনর্বাসনের জন্য তোমার সরকার পশ্চিমবঙ্গকে ‘বিরাট পরিমাণ’ অনুদান (লার্জ গ্রান্ট) দিয়েছে। তোমার কি জানা আছে যে, এই উদ্দেশ্যে বিগত দু’বছরে ১৯৪৮-৪৯ এবং ১৯৪৯-৫০ তোমার সরকার থেকে মোট অনুদান পেয়েছি ৩ কোটি টাকার সামান্য বেশি এবং বাদ বাকি ৫ কোটি টাকা এসেছে ঋণ হিসেবে। তোমার জানা আছে কি যে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য যে ব্যয় হয়েছে তার তুলনায় এই টাকা নিতান্ত নগণ্য (ইনসিগনিফিকেন্ট)? তুলনা করতে চাই না, কারণ, তা মনোমালিন্য সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, এ অবধি ১৬ লক্ষ উদ্বাস্তুর জন্য যে অর্থ দিয়েছ তা নগণ্য। দু’বছরের জন্য মাথা পিছু মোট দান হচ্ছে কুড়ি টাকা। তুমি কি এটাকে বিরাট দান বলবে? ওপার বাংলা (পূর্ববঙ্গ) থেকে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ১৫ লক্ষ হিন্দু উদ্বাস্তু সব কিছু খুইয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। এরা অভুক্ত। এখানে অভুক্ত থাকবে না, এই আশাও এদের নেই। মাসের পর মাস পার হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তানি উদ্বাস্তু সমস্যা বলে যে একটা সমস্যা আছে তা স্বীকার করতে ভারত সরকার রাজি নয়। সুতরাং এদের দায়িত্বও সে গ্রহণ করে না। প্রাদেশিক সরকারের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব সে করেছে। উদ্বাস্তুদের দু’বছরে মাথাপিছু ২০ টাকা অনুদান দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, মহৎ সাহায্য বই কী।
তোমার বিশ্বস্ত বিধান
এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নেহরু ২ ডিসেম্বর ১৯৪৯ তারিখে লেখেন:
প্রিয় বিধান,
তোমার ১ ডিসেম্বরের চিঠির জন্য ধন্যবাদ। তুমি ঠিকই বলেছ, অনুদান নয়, ‘ঋণ’ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত ছিল আমার।
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য কত টাকা সাময়িক সাহায্য এবং পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় করা হয়েছে তা আমি জানি না। সম্ভবত, তোমার কথাই ঠিক যে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে পুর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জন্য ব্যয়িত অর্থের চাইতে অনেক বেশি। দু’দল উদ্বাস্তুর জন্য বিভিন্ন প্রকার নীতি গ্রহণ করার জন্য ব্যয়ে তারতম্য হয়নি। হয়েছে অন্য কতিপয় কারণে। দেশ বিভাগের পূর্বেই পশ্চিম পাকিস্তান এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এ দেশে চলে আসে। তাদের আমরা কোনও আর্থিক সাহায্য দিইনি। তারপর দু’মাসের মধ্যে পঞ্চাশ থেকে ষাট লাখ লোক প্রবল বন্যার মতো এ দেশে চলে আসে। সে এক বিরাট ব্যাপার। অবস্থা সামাল দেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু আগমন ঘটেছে ধীর গতিতে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রায় সব হিন্দু ও শিখ বিতাড়িত হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে বিরাট সংখ্যক হিন্দু রয়ে গেছে। আমাদের এবং তোমাদেরও নীতি ছিল যে, এমন কিছু যেন করা না-হয় যার পরিণামে সব হিন্দুই পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে এ দেশে চলে আসতে অনুপ্রাণিত হয়। তা ঘটলে দুর্দশার চূড়ান্ত হত এবং এমন সমস্যা সৃষ্টি হত যা সরকারের পক্ষে মোকাবিলা করা অসম্ভব হত।
প্রীতি-সহ তোমার
জওহরলাল নেহরু
(কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক, রণজিৎ রায়)
মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অজস্র ব্যক্তিগত এবং সরকারি ক্ষেত্রে অজস্র পত্র বিনিময় হয়েছে। এই সব চিঠিতে প্রশাসনিক অনুযোগ থাকলেও কোথাও ব্যক্তিগত ভাবে কেউই আক্রমণ করেননি। সব চিঠিতেই শেষ পর্যন্ত ফুটে উঠেছে অমল বন্ধুতার উদ্ভাস। যা আজকের দিনের রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীর কাছে আশাই করা যায় না।
তুষার ভট্টাচার্য। কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ
¶ ২ ¶
ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী চণ্ডী লাহিড়ী এক বার তাঁর একটি অভিজ্ঞতার কাহিনি লিখেছিলেন। বহু বছর আগের কথা। তখন তিনি দৈনিক জনসেবক পত্রিকায় কাজ করতেন। সেই সময় এক দিন সন্ধ্যাবেলা তাঁর অফিসে টেলিফোন বেজে উঠল। চণ্ডীবাবু টেলিফোনটি ধরতেই অন্য প্রান্ত থেকে কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘আমি ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় বলছি। আপনাদের কার্যালয় থেকে একজন ভদ্রলোক আমার কাছে আজই সকালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। তাঁর নামটা আমার মনে নেই। কিন্তু ভদ্রলোক বলেছিলেন যে, তিনি জনসেবক পত্রিকার কর্মী। তাঁকে আমি একটি ওষুধ লিখে দিয়েছিলাম। পরে আমার মনে পড়ল যে, ওষুধটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। ওঁকে তার বদলে অমুক ওষুধটি খেতে বলবেন’।
শান্তভানু সেন। শ্রীপল্লি, শান্তিনিকেতন
অ্যাসিড
‘অ্যাসিড কেবল মেয়েদের জন্য’ (২২-৬) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কেবল মহিলারাই অ্যাসিড আক্রমণের মূল শিকার। কথাটা অনেকাংশে সত্যি। তবে ‘কোনও পুরুষ অপর পুরুষের উদ্দেশ্যে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে না’— এই বক্তব্যকে আমাদের অভিজ্ঞতা ভুল প্রমাণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গেই এর একাধিক উদাহরণ আছে আমাদের কাছে। প্রসঙ্গত, আমাদের একটি সংগঠন আছে। কয়েক বছর ধরে আমরা এই ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধে এবং আক্রান্তদের সাহায্যার্থে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিক্রমজিৎ সেন। কলকাতা-১৯
বিপত্তারিণী
ট্রেনে বাসে রিকশায় অটোতে ক্ষণেক্ষণেই দেখতে পাচ্ছি মণিবন্ধে লাল সুতোয় বাঁধা পড়েছে টাটকা তৃণগুচ্ছ। খোঁজ নিতে জানা গেল, বিপত্তারিণী দেবীর পুজো দিয়ে মেয়ে-বউয়েরা এই ডোর তৈরি করেন আত্মীয়স্বজন, নিকটজনের বিপন্মুক্ত নিরাপদ জীবন কামনায়। লাল সবুজের চমৎকার মেলবন্ধন।
বিশ্বজিৎ দাসঠাকুর। কলকাতা-৬৫