চিকিৎসকদের কাছ থেকে সমাজ কী চায়
সৎ চিকিৎসকদের এখন মুখ খুলতে হবে (১৩-৮) শীর্ষক নিবন্ধে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী ও সমীরণ নন্দী পেশাগত ভাবে তাঁদের সতীর্থদের মূল্যবোধের অবক্ষয় বিষয়ে সচেতন হতে বলে মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। চিকিৎসকরা সমাজে এখনও শ্রদ্ধার আসনে আছেন। কিন্তু বর্তমান ভোগবাদী পরিবেশে তাঁদের অনেকেই যে ভাবে অতিদ্রুত আরও ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মগ্ন হচ্ছেন তা দেখে সমাজ মর্মাহত।
অনেকেই ভাবেন, তাঁরা নিজের টাকা খরচ করে চিকিৎসক হয়েছেন। তাই তাঁদের সম্পূর্ণ অধিকার আছে নিজের বাজার দর ইচ্ছা মতো বৃদ্ধি করার। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনায় একজন চিকিৎসক তৈরি করতে যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয় তার ৯০ শতাংশ টাকা সাধারণ মানুষের করের টাকা। সরকারি স্তরে সুযোগ না-পাওয়ার ফলে একজন ধনী চিকিৎসক তাঁর সন্তানকে ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে বেসরকারি কলেজ থেকে চিকিৎসক বানাতে বদ্ধপরিকর— এই চিত্র গ্রামাঞ্চলে আমরা লক্ষ করি। একজন চিকিৎসক মাত্র ৪ ঘণ্টার চেম্বারে বসে ২০০ জন শিশুর চিকিৎসা করেন। কথা বলার বা শোনার কোনও সময় তাঁর নেই। প্রচণ্ড ক্ষোভ ও ঘৃণা নিয়েও মানুষ বাধ্য হয় অসুস্থ সন্তানদের নিয়ে সেই অর্থপিশাচ চিকিৎসকের চেম্বারে যেতে। মানুষের এই অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছেন মানুষের ‘ভগবান’। সমাজে যাঁদের আসন এতটাই উঁচুতে তাঁরা কি কেবল অর্থের লোভে চিরাচরিত মূল্যবোধ ও শ্রদ্ধার কাঠামোকে এ ভাবে ভেঙে ফেলবেন? এ ভাবে সকলকে ঠেলে পিছনে ফেলে নিজে ও নিজের পরিবারকে খুব বেশি সামনে নিয়ে যাওয়া যাবে কি?
সন্দীপ সিংহ। প্রধান শিক্ষক, জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয়, হুগলি
¶ ২ ¶
অভিজিৎ চৌধুরী ও সমীরণ নন্দীকে ‘সৎ চিকিৎসকদের এখন মুখ খুলতে হবে’ (১৩-৮) লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাই সামাজিক ব্যাধির আকার নেওয়া বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। আর্থিক সুবিধা-ভোগের লালসার শিকার আজ চিকিৎসকেরাও। এই প্রবণতা বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় উচ্চ ডিগ্রিধারী এবং অতি প্রতিষ্ঠিত এক শ্রেণির চিকিৎসকদের মধ্যে। রাজনৈতিক ক্ষমতাবলয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাত ধরে মালটিফেসিলিটি হাসপাতাল/ নার্সিং হোমের মোড়কে জীবনদায়ী পরিষেবা চলে গিয়েছে ভোগ্যপণ্য পরিষেবায়। ফুলেদের মৌমাছি আকৃষ্ট করার মতোই কোথাও নিজেরা পাঁচ ছ’টি চেম্বার সামলান। আবার প্র্যাকটিস-নির্ভর চিকিৎসকদের প্রভাবিত করেন মালটিফেসিলিটি হাসপাতাল/নার্সিং হোম থেকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অছিলায়। সঙ্গে আছে আনাচে-কানাচে গজিয়ে ওঠা ল্যাবরেটরি, ওষুধ কোম্পানিগুলির ঘৃণ্য চাটুকারিতার সামনে নিজেকে বিক্রি করে দেওয়া।
অবশ্য সৎ চিকিৎসকদের সরব হওয়া ব্যতীত এই লেখার মধ্যে সমাধানের আর কোনও ইঙ্গিত নেই। কিন্তু এই দায় কেবল চিকিৎসকদের উপর ছাড়লে চলবে না। অন্যায় পদ্ধতির বিরুদ্ধে সকল সৎ মানুষেরই বিরোধিতা করা উচিত। আমাদের দেশে সৎ মানুষের সংখ্যাটা যথেষ্ট বেশি কিন্তু তাঁরা সংঘবদ্ধ নন। তাই তাঁরা প্রতিবাদ করতে ভয় পান। উল্টো দিকে, অসৎ মানুষের সংখ্যা কম হলেও তারা সংঘবদ্ধ, তাই তারা দাপিয়ে বেড়ায়। চিকিৎসকদের প্র্যাকটিস শৃঙ্খলতার ব্যাপারে আই এম এ এবং এম সি আই-এর আরও কঠোর বিধিনিষেধ এবং তার নিরপেক্ষ প্রয়োগ থাকা উচিত। সরকারি ডাক্তাররাই শুধু নন, বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমের অ্যাটেন্ডিং ডাক্তারও বাইরে কোনও চেম্বার করতে পারবেন না। বাইরের ফিল্ডটা থাকবে শুধু প্র্যাকটিসনির্ভর ডাক্তারদের। স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত সমস্ত সংস্থার অর্থনৈতিক লেনদেন সরকারকে নিয়মিত এবং অতি-সৎ আধিকারিকদের দিয়ে প্রতিনিয়ত মনিটারিং করতে হবে। বিশেষ করে বন্ধ খামের গোপন লেনদেন এবং প্রাপ্ত সুবিধা-আঁতাত নিয়ে। মনে রাখতে হবে, ঘরের মাটি আলগা হলে ইঁদুর ঢুকে ঘরের সব তছনছ করে দেবে। অতিরিক্ত ওষুধ ও পরীক্ষা করানোর প্রবণতার আঙ্গিকগুলো টিভি ও রেডিয়োর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে সার্ভিস কোড চালু করে বেসরকারি হাসপাতাল/ নার্সিং হোমগুলোর অপ্রাসঙ্গিক বিল বন্ধ এবং টুকরো প্রাপ্তির ইতি ঘটাতে হবে। সর্বোপরি ডাক্তারদের নিজের প্রফেশনাল সততা ও দায়বদ্ধতা নিজেদের মধ্যেই জাগ্রত করা দরকার।
অজয়কুমার হালদার। কলকাতা-৩০
কোথায় শৌচাগার?
‘স্কুলকেও শিক্ষারত্ন’ (২৬-৮) পড়ে আনন্দিত হলাম যে, ৯৭ শতাংশ স্কুলে শৌচাগার ও পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা আছে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় দুর্গাপুরের মতো শিল্পনগরীর খুব কাছে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও আমাদের স্কুল পানীয় জল ও শৌচাগারের সুব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত, দূর থেকে আসা ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের তাই নানাবিধ সমস্যা হয়। অবহেলিত ৩ শতাংশের মধ্যে আমাদের স্কুলটিও পড়ে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্বপন বিশ্বাস। গোপালপুর বালিকা বিদ্যালয়, কাঁকসা, বর্ধমান
বাঁকুড়া রবীন্দ্রভবনের দুর্দশা
বিভিন্ন জেলা শহরে ‘রবীন্দ্রভবন’ নামে একটি ঐতিহ্যমণ্ডিত সভাগৃহ তথা মঞ্চ রয়েছে। বাঁকুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রেও তেমনই একটি রবীন্দ্রভবন আছে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কাজে এই ভবন ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বর্তমানে ভবনটির দুর্দশা অনেককেই পীড়িত করে। টিনের ছাউনির নীচে যে সিলিং দেওয়া আছে তার বিভিন্ন অংশ বিশ্রী ভাবে ফুটো হয়ে ঝুলে রয়েছে। দেওয়াল মাকড়সার জাল আর ঝুলকালিতে অপরিচ্ছন্ন। ফাইবারের অসংখ্য চেয়ার ভেঙে গিয়ে অন্তর্হিত হয়েছে। পড়ে আছে শুধু চেয়ার বসানোর লোহার ফ্রেম। বাথরুমের অবস্থাও তথৈবচ। নেই পর্যাপ্ত আলো। পরিচ্ছন্নতার যথেষ্ট অভাব। নাকে রুমাল দিয়ে ঢুকতে হয়। রেন পাইপ ভেঙে গেছে। বৃষ্টি হলে দেওয়াল বেয়ে জল পড়ে। ভবনটির দ্রুত সংস্কারসাধন না হলে সেটা হবে খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
প্রদ্যোত পালুই। বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া