সম্পাদক সমীপেষু

সম্পাদক সমীপেষু

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০১
Share:

হায়, এখানে হল না

Advertisement

বিশাখাপত্তনমে হুদহুদের প্রতিক্রিয়ায় ‘কলকাতা-দিঘা খুশি, হতাশ বকখালি’। (১৩-১০) ক’দিন আগে থেকে প্রচার করা আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে ভয়ঙ্কর প্রকৃতিকে প্রত্যক্ষ করতে কৌতূহলী পর্যটকদের ভিড় জমেছিল দিঘা, শঙ্করপুরে। তবে তাঁদের মন ভরেনি। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস সেখানে তেমন জোর দেখাতে পারেনি।

পূর্বাভাসে অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার কথা কাগজ ও টিভি জানালেও আশা ছিল, এ রাজ্যের সমুদ্রসংলগ্ন উপকূলভাগ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কিছুটা অশান্ত হবে। কিন্তু প্রাপ্তি তেমন কিছুই হল না। বিপর্যয়ের সিংহভাগই ঘটে গেছে অন্ধ্রপ্রদেশে। তাই এ বঙ্গের কৌতূহলী কিছু মানুষ সপরিবার ঘটনাস্থলে এসেও সেই ভয়ঙ্করতাকে তেমন ভাবে দেখতে পেলেন না। ছিটেফোঁটা যেটুকু পেয়েছেন সেটুকু নিয়েই ‘চড়ুইভাতির মজায় জলোচ্ছ্বাস উপভোগ করেছেন সকলে।’ তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘পুজোয় ভাল ভিড় ছিল। হুদহুদের জেরে পুজোর পরও বাজার ভালই হল।’

Advertisement

আরও জানা গেল, শঙ্করপুর, দিঘার মানুষ কিছুটা পেলেও বকখালির পর্যটকদের বরাতে সেটুকুও জোটেনি। অনেক আশা নিয়ে মানুষ এসেছিলেন এখানে। দেখা হল না কিছুই। না ঝড়ের তাণ্ডব, না সমুদ্রের ভয়ঙ্করতা। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভেজাই সার হল। প্রকৃতি যে এতটা আশাভঙ্গ করছে তা আগেভাগে বোঝাই যায়নি। তাই ‘হতাশ বকখালি’।

যদি এমনটা না হত, ঘূর্ণিঝড় এখানে আক্রমণ হানত, যদি প্রকৃতি রুদ্র হত, উজাড় করে দিত তার শক্তিকে, তবে নবকুমারের মতো বলতে পারতাম, ‘আহা কী দেখিলাম! জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না।’ ঝড় তার ভয়ঙ্কর গতি নিয়ে ছিন্নভিন্ন করছে সুন্দরবনের উপকূলভাগ, সমুদ্র উত্তাল হয়ে ফুঁসে উঠে আছড়ে পড়ছে তীরভূমিতে, একের পর এক নদীবাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, খাঁড়ি খাল বিল নদীনালা জলে ভরে যাচ্ছে, বনাঞ্চলের গাছপালা ভেঙে পড়ছে, ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে, কাঁচা বাড়ি জলের ধাক্কায় ভেঙে যাচ্ছে, ঘরের চাল উড়ে যাচ্ছে, অসহায় মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় খুঁজছে, আপনজনকে হারাচ্ছে, বিপন্ন হচ্ছে, এমন কত কী।

এমনটা যদি ঘটত, তবে তা রেখে যেত এক বিপন্নতা। ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত মানুষদের আশ্রয়শিবিরে থাকতে হত। নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করতে হত, ঝঞ্ঝা-উত্তর রোগভোগের শিকার হতে হত, ফসল নষ্টের কারণে হয়তো বা অনাহারেও থাকতে হত, কচিকাঁচাদের অবস্থা সঙ্গিন হত।

আর এ সব ফেলে রেখে প্রকৃতিপ্রেমী আমরা চলে আসতাম আমাদের সাজানো ডেরায়, চিত্রগ্রহণযন্ত্রে তুলে রাখা ধ্বংসের ছবিগুলো দেখে, দেখিয়ে তৃপ্তি পেতাম। তা আর হল না।

অমলকুমার মজুমদার। চ্যাটার্জিহাট, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন