অনুপ্রবেশকে অনুপ্রবেশ বলা যাবে না?
অশোক মিত্র (‘বহিরাগত? ভারততীর্থে...’ ১১-১১) প্রাগৈতিহাসিক, ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক তথ্যনির্ভর আলোচনার মাধ্যমে বৃহত্তর ভারতবর্ষের মাটিতে অনার্য ও আর্য জাতির সংমিশ্রণ ও সহাবস্থানের প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন তা ধন্যবাদার্হ। কিন্তু সমস্যাটা এখানেই যে তিনি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে অনুপ্রবেশের ঘটনাটিকেও এর সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। এই মিশ্রণ প্রক্রিয়ার সহজ ব্যাখ্যাটি মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই বৃহত্ সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংমিশ্রণের প্রক্রিয়াটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া বহিরাগতদের সম্পর্ক টেনে আনাটা আমার মতে অতিসরলীকরণ।
একটি জায়গায় লেখক স্বীকার করেছেন যে, এই দেশে আগত উদ্বাস্তুরা কবে অনুপ্রবেশকারীতে রূপান্তরিত হল তা তাঁর বোধগম্য হয়নি। সমাজ গড়ে ওঠার পিছনে নদীর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু অনুপ্রবেশের প্রশ্নে ভারতবাসীদের আপত্তি কি যুক্তিযুক্ত নয়? উদ্বাস্তুদের প্রতিনিয়ত এ দেশে আগমনের ছুতোয় কাতারে কাতারে অনুপ্রবেশকারী এ দেশে বাসস্থান ও ভোটার কার্ডের সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে বারুদের স্তূপের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চলেছে। এ বিপদের হাত থেকে ভূমিজ বা উদ্বাস্তু কারও রক্ষে নেই। ‘ঘটি-বাঙাল’ দেখে বাজারে বিস্ফোরণ হয় না।
দেশ ভাগের পর ঠিক কত সংখ্যায় উদ্বাস্তু এ দেশে প্রবেশ করেছে তার পরিসংখ্যান পাওয়া যে কেন সম্ভব নয় তা আমাদের কারওই বুঝতে বাকি নেই। আর শুধু এই রাজ্যই নয়, অনুপ্রবেশ ঘটেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আরও বহু রাজ্যে। সর্বত্রই এই প্রতিবাদের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই এই ঢেউ সামগ্রিক ভাবে স্তিমিত ছিল। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে কি এক জন পশ্চিমবঙ্গবাসীর অধিকার নেই অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করার? তত্কালীন নেহরু-লিয়াকত আলি চুক্তি বা ভারত-পাকিস্তান জনবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ভারতের মাটিতে উদ্বাস্তু আগমনের ঘটনাগুলিকে অভিবাসন বা মাইগ্রেশন বলতে আমার কোনও আপত্তি নেই এবং তা আইনানুগ বৈধও বটে। কিন্তু ১৯৭১ সালের পর যা চলছে, তা অনুপ্রবেশেরই নামান্তর। কত দিন আর উপরোক্ত চুক্তির দোহাই দিয়ে খাল কেটে কুমির ডেকে আনব?
অনুপ্রবেশের প্রশ্নে আজ উদ্বাস্তু বা ভূমিজরা সহমত না-হলে আগামী দিনে সমূহ বিপদ।
ডা. ইন্দ্রনীল ঠাকুর। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অব মেডিসিন, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ
ধোঁয়াশা, আন্দাজ, ধাঁধা
দেবেশ রায় (‘৩টি ধোঁয়াশা...’, ৫-১১) বলেছেন, খাগড়াগড় কি গ্রাম না শহর? খবর পড়ে মনে হয়েছে গ্রাম। দেবেশবাবু আরও বলেছেন, গ্রামের সঙ্গে যাঁদের সামান্য সম্পর্ক আছে তাঁরাও জানেন গ্রামের একটা বাড়িতে বোমার কারখানা চলছে, এটা গ্রামের লোকের অজানা থাকা অসম্ভবের চাইতেও অসম্ভব। এ বিষয়ে জানাই যে, খাগড়াগড় আদৌ গ্রাম নয়। বর্ধমান শহরেরই একটি অংশ। বলা ভাল বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি জনবহুল এলাকা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কাছে হওয়ায় এই খাগড়াগড়ে বহু মেসবাড়ি আছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রী থাকেন। বহু চাকুরিজীবীও থাকেন। বলা বাহুল্য যে এঁরা সবাই বহিরাগত। এ ছাড়া এঁদের সঙ্গে দেখা করতে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনরাও আসেন যাঁরা বহিরাগত ও কিছুক্ষণের জন্য আসেন। সেই কারণেই খাগড়াগড়ে বহিরাগতদের প্রতিদিন আনাগোনা হয় এবং সন্ত্রাসবাদীদেরও খাগড়াগড়ে ঘাঁটি নির্মাণের ওটাই কারণ। বহিরাগতদের আনাগোনা যে অঞ্চলে বেশি সেখানে আস্তানা নির্মাণ করলে মানুষ সন্দেহ কম করবেন। অন্য দিকে শহরে থাকার যাবতীয় সুযোগসুবিধা পাওয়া যাবে।
বর্ধমান শহরে যে সন্ত্রাসবাদীরা ঘাঁটি নির্মাণ করেছে সে বিষয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসেই রাজ্য সরকারকে জানিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু বর্ধমান জেলাই নয়, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া জেলার বিভিন্ন অংশ যে জেহাদিদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে সে কথাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্টে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার গুরুত্ব দেয়নি। দিলে এত বড় আকারের নাশকতার ঘাঁটি ও চক্রান্ত গড়ে উঠত না।
বিকাশ দাস। বর্ধমান
রাজারহাটের হাল
মাননীয় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম টাটাকে উদ্দেশ্য করে নানা কটূক্তি (২৯-১০)-সহ অতিরিক্ত উক্তি করেছেন ‘যে অন্ধ সে-ও বুঝবে রাজারহাটে কতটা উন্নতি হয়েছে’।
আমি একজন অধম। চাকরি জীবনের গচ্ছিত সব দিয়ে রাজারহাটে একটি কো: অ: ফ্ল্যাট কিনে দু’বছর ধরে বসবাস করছি। বসবাসের সমস্যা অনেক। দু-একটির উল্লেখ করছি।
প্রথমত যাতায়াতের দুরবস্থা। সল্টলেক থেকে এয়ারপোর্টগামী প্রধান রাস্তাটি ছাড়া অন্য কোনও বড় রাস্তায় বাস চলাচল করে না। অগত্যা গন্তব্যে পৌঁছতে হয় ১০-১৫ টাকা দিয়ে অটো বা এই বৃদ্ধ বয়সে হাঁটা। তা-ও আবার অটো সকাল সাতটার আগে পাওয়া যায় না। রাত নটার মধ্যেই শেষ। কিছু দিন আগে মাননীয় পরিবহণমন্ত্রী বলেছিলেন, নিউটাউন বাস পরিষেবায় ভরিয়ে দেবেন। দ্বিতীয়ত, নিত্যব্যবহার্য পরিস্রুত জলের দুরবস্থা। পানীয় জলও কিনে খেতে হয়। এ দুরবস্থা কবে কাটবে? আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা একটু ভাবুন।
অনিল দত্ত। নিউটাউন
সহযাত্রীর উপহার
পশ্চিমবঙ্গে ট্রেনে বা বাসে আপনি সহযাত্রীর কাছে মুফতে কী কী পেতে পারেন:
১) রুমালে মুখ না ঢেকে হাঁচি কাশি দেওয়া এবং হাইতোলা।
২) সিগারেট খেয়ে ধোঁয়া আপনার দিকে ছুড়ে দেওয়া।
৩) আপনি খবরের কাগজ পড়তে থাকলে হুমড়ি খেয়ে চোখ বোলানো অথবা আপনার কাগজটি ধার চেয়ে অনেকক্ষণ আটকে রাখা।
৪) মোবাইলে বা কারও সঙ্গে কথা বললে কান খাড়া করে শোনা।
৫) আপনি মহিলা হলে, উল্টো দিকে পুরুষ যাত্রীর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা, পাশের যাত্রী পুরুষ হলে সারাক্ষণ গা ঘেঁসে থাকা।
৭) সশব্দে ঢেকুর তোলা।
৮) মোবাইলে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলা এবং উচ্চস্বরে গান শোনা।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল। কোন্নগর, হুগলি