গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সিবিএসই-র দশম এবং দ্বাদশের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে আগামী জানুয়ারি মাসে। পরীক্ষার দিনই স্কুলগুলিকে অনলাইন মাধ্যমে নম্বর জমা দিতে হবে। পরীক্ষার্থীরা সকলেই পরীক্ষা দিতে আসছে কি না, সেই বিষয়ে নজরদারির জন্যই আগেই অটোমেটেড পার্মানেন্ট অ্যাকাডেমিক অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রি (আপার) আইডি-র ব্যবস্থা করেছিল বোর্ড। এ বার সেই আইডি-র যথাযথ ব্যবহারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তবে, শুধু প্র্যাকটিক্যাল-এর ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরের পঠনপাঠন পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে একাধিক রদবদল করেছে সিবিএসই।
১। আরও ভাল ফল করার সুযোগ—
দশম শ্রেণিতে বছরে দু’বার বোর্ড পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা। তবে দু’টি পর্বে বসার জন্য পড়ুয়াদের সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথম পর্বের কোনও বিষয়ের ফল মনের মতো না হলে, দ্বিতীয় পর্বে ‘ইম্প্রুভমেন্ট এগ্জ়াম’ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া মিলবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ অনুযায়ী, পরীক্ষার চাপ কমাতে, পড়াশোনার মানোন্নয়ন এবং সমস্ত বিষয়ে ভাল ভাবে পড়াশোনার সুযোগ দিতেই এই ব্যবস্থা করেছে বোর্ড।
আন্তর্জাতিক স্তরের প্রবেশিকাগুলিও এই নিয়মেই আয়োজিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস), টেস্ট অফ ইংলিশ অ্যাজ় আ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ (টিওএফএল), গ্র্যাজুয়েশন রেকর্ড এগ্জ়ামিনেশন-ও (জিআরই), গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট-এর (জিম্যাট) মতো পরীক্ষা বছরে দু’বার নেওয়া হয়ে থাকে, যাতে পরীক্ষার্থীরা নিজেদের ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ পান।
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
২। রিপোর্ট কার্ড—
পড়ুয়াদের সার্বিক মানোন্নয়নের জন্য স্কুলভিত্তিক ‘অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্স রিপোর্ট কার্ড’ প্রকাশেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিএসই। সারা বছর স্কুলের পড়ুয়ারা কোন বিষয়ে কেমন ফল করল, তারই ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। অঞ্চলভিত্তিক এবং জাতীয় স্তরের খেলাধূলায় পড়ুয়ারা কতটা আগ্রহী, তারা কতটা সক্রিয় ভাবে তাতে যোগদান করছে, শরীরচর্চায় মন দিচ্ছে কি না— এর মাধ্যমে স্কুলগুলি নিজেদের দুর্বলতা এবং সক্ষমতার বিষয়গুলি খতিয়ে দেখবে। তার ভিত্তিতে নিজেদের বার্ষিক শিক্ষক-শিক্ষণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হবে, যাতে পড়ুয়ারা পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য নানা কাজে আগ্রহী হয়।
সিবিএসই-র দশম এবং দ্বাদশের পাঠ্যক্রমে কৃত্রিম মেধা, ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, কোডিং, রোবোটিক্স-এর মতো বিষয়ের পাশাপাশি, উদ্যানবিদ্যা, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট, টেক্সটাইল ডিজ়াইন, বিজ়নেস ম্যানেজমেন্ট-এর মতো বিষয়গুলিকেও রাখা হয়েছে। কেরিয়ার সম্পর্কে পড়ুয়ারা যাতে স্কুল স্তর থেকেই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল হওয়ার সুযোগ পায়। আন্তর্জাতিক স্তরের স্কুলগুলিতেও পড়ুয়াদের পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা গ্রহণের সঙ্গে খেলাধূলা, কলাবিদ্যা, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল হতে শেখানো হয়।
উল্লেখ্য এই রিপোর্ট প্রকাশের নিয়ম কিংবা ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে চর্চার সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরের স্কুলিং সিস্টেমের রীতির সামঞ্জস্য রয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া-র বিভিন্ন দেশে এই ‘গ্লোবাল কে-১২ এডুকেশন সিস্টেমস’ অনুযায়ী, পড়ুয়াদের সার্বিক বিকাশ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উপর নজর দেওয়া হয়।
৩। শিক্ষক-শিক্ষণ পদ্ধতি
তবে, শুধু পঠনপাঠনেই নয়, শিক্ষণ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন এনেছে সিবিএসই। বোর্ডের তরফে শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে পাঠ্যবইয়ের গতানুগতিক পাঠের পরিবর্তে বাস্তব নির্ভর সমস্যার সমাধান, সৃজনশীল ভাবনা এবং নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য নিয়মিত হাতেকলমে শিখতে পারে পড়ুয়ারা।
৪। নিজেদের পছন্দের বিষয়—
বিদেশের স্কুলগুলিতে যেমন পড়ুয়ারা নিজেদের পছন্দের বিষয় বেছে নিতে পারে, তেমনই ব্যবস্থা করেছে সিবিএসই। বোর্ডের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দশমে যে বেসিক ম্যাথমেটিক্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে, দ্বাদশে সে স্ট্যান্ডার্ড ম্যাথমেটিক্স বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে। এতে, কোন বিষয়ে সে আগ্রহ পাচ্ছে, তা সহজেই বুঝে নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
৫। এককথায় উত্তর—
সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা ব্যবস্থায় মাল্টিপল চয়েজ় কোয়েশ্চন (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে উত্তর লিখতে হয়। সিবিএসই তাই পড়ুয়াদের মূল বিষয় সম্পর্কে যাতে ধারণা স্পষ্ট হয়, অবজেক্টিভ প্রশ্নোত্তরের উপর বেশি জোর দেয়। এতে পড়ুয়ারা জয়েন্ট এন্ট্রানস্, নিট, নেট-এর মতো পরীক্ষার প্রস্তুতিও সহজে নিতে পারে। এই একই পদ্ধতিতেই বিদেশের স্কুলগুলিতেও প্রবেশিকার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করা হয়।
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
৬। প্রকল্প ভিত্তিক পঠনপাঠন—
আন্তর্জাতিক স্তরের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, বেশি নম্বর পেলেই ভাল কলেজে সুযোগ মিলবে, তা কিন্তু নয়। পড়ুয়ার ভাষাজ্ঞান, পাঠ্যক্রম বহির্ভূত জীবন কেমন, প্রজেক্ট ওয়ার্কের বৈচিত্র্যও খতিয়ে দেখা হয়। এই একই পদ্ধতিতে সিবিএসই-ও পঠনপাঠন করিয়ে থাকে। তাই দ্বাদশের পর সহজেই বাইরে কোনও বিষয় নিয়ে গবেষণা কিংবা স্কলারশিপ পেয়ে দেশে কিংবা বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়।
গ্লোবাল এডুকেশন সিস্টেম অনুযায়ী, পড়ুয়াদের দক্ষতা এবং মেধা অনুযায়ী পঠনপাঠন চলে। সিবিএসই-ও সেই পদ্ধতিতেই বিভিন্ন প্রজেক্ট এবং ইন্টার্নাল অ্যাসেসমেন্ট-এর মাধ্যমে পড়ুয়াদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়। এ জন্য পড়াশোনার সঙ্গে তাদের সৃজনশীল ভাবনার বিকাশ ঘটাতে স্কুল স্তর থেকেই উদ্ভাবনের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।
তুলনার বিচারে দেশের ইংরেজিমাধ্যমগুলির স্কুলগুলির পঠনপাঠনের জন্য সিবিএসই একাধিক নিয়মের রদবদল করলেও কাউন্সিল ফর দি ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এগ্জ়ামিনিশেনস (সিআইএসসিই) তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ওই বোর্ডের তরফে বছরে এক বার করেই পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং ব্যাখামূলক প্রশ্নোত্তরেই বেশি গুরুত্ব দিতে হয় পড়ুয়াদের।
এ ক্ষেত্রে আবার পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কিছুটা এগিয়ে এসে বছরে দু’বার সেমেস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। এমসিকিউ পদ্ধতিতে প্রশ্নোত্তর, ইমপ্রুভমেন্ট এগ্জ়াম-এর সুযোগ রয়েছে এ ক্ষেত্রেও। তবে, অন্য ক্ষেত্রগুলি এখনও ততখানি এগোয়নি।