গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
স্টাফ সিলেকশন কমিশন (এসএসসি) প্রতি বছর আমলা-সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের পরীক্ষা নিয়ে থাকে। বহু পরীক্ষার্থীই সর্বভারতীয় স্তরের এই পরীক্ষাগুলির প্রস্তুতির জন্য সমাজমাধ্যমের সাহায্য নেন। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র নিয়েও চলে আলোচনা। সেই আলোচনাতেই রাশ টানতে পাবলিক এগজ়ামিনেশন (প্রিভেনশনস অফ আনফেয়ার মিনস) অ্যাক্ট, ২০২৪-এর কথা মনে করিয়ে দিল এসএসসি।
কাদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য?
সমাজমাধ্যমের কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের উদ্দেশ্যেই এই আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে এসএসসি। অনলাইনে বহু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, এমনকি শিক্ষক, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফেও এসএসসি-র বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, ‘আনসার কি’ নিয়ে আলোচনা হয়। অনেকেই তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকেন।
এর আগে, লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি, কম্পিউটার বেসড টেস্ট (সিবিটি) শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রশ্নের ছবিও ভাইরাল হতে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। এমন ঘটনা রুখতেই কমিশন সতর্কতা জারি করেছে। প্রশ্নপত্র নিয়ে আলোচনা, ছবি ভাইরাল করা কিংবা উত্তরপত্রের ‘আনসার কি’-এর বিশ্লেষণের মতো বিষয়ে সমাজমাধ্যমে দেখা গেলে কড়া পদক্ষেপ করবে কমিশন।
অগস্ট মাসে স্টাফ সিলেকশন কমিশনের কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে নিয়োগের পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে পরীক্ষার্থীরা দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত।
কোন অপরাধে কেমন শাস্তি?
এসএসসি-র তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘পাবলিক এগজ়ামিনেশন (প্রিভেনশনস অফ আনফেয়ার মিনস) অ্যাক্ট, ২০২৪’-এর তিনটি ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কী কী বিষয় নিষিদ্ধ, সে সব কাজ করলে অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে, তার শাস্তি কী হতে পারে ইত্যাদি।
সেকশন ৩ (অসৎ উপায়ে অবলম্বনে নিষেধাজ্ঞা) অনুমোদন ছাড়াই প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র, অথবা পরীক্ষা সংক্রান্ত যে কোনও নথি বা তার অংশ ফাঁস, প্রকাশ, প্রচার নিষিদ্ধ।
এই আইনের ধারা ৯ অনুযায়ী এমন জামিনঅযোগ্য। অন্য দিকে, ধারা ১০ অনুযায়ী এমন অপরাধে যুক্ত থাকলে তিন থেকে পাঁচ বছরে কারাবাস এবং এক লক্ষের বেশি টাকা জরিমানা হবে।
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পরিষেবা কেন্দ্র এই কাজ করলে, জরিমানার অঙ্ক ১ কোটি টাকা কিংবা তারও বেশি হতে পারে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কেন্দ্র থেকে আর কেউ পরীক্ষাও দিতে পারবেন না। সম্মিলিত অপরাধের শাস্তিস্বরূপ ন্যূনতম জরিমানা ১ কোটি টাকা এবং পাঁচ থেকে ১০ বছরের কারাবাস হতে পারে।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রশ্নের ছবিও ভাইরাল হওয়া রুখতেই এই পদক্ষেপ, জানিয়েছে কমিশন। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
পরীক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে কমিশনের তরফে এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বহু পরীক্ষার্থী। অনলাইনে এসএসসি-র পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্লাস করান, এমন শিক্ষকেরাও কমিশনের এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। তাঁদের দাবি, পরীক্ষার পর প্রশ্ন কেমন হল, কে কোন উত্তরটা সঠিক লিখল— এই সবই খুব স্বাভাবিক আলোচনা। ছোটবেলা থেকেই সকলে করে আসছেন। এমন একটি বিষয়, কী করে এমন গুরুতর অপরাধ হিসাবে গণ্য হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
চলতি বছরে যান্ত্রিক গোলযোগ, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সিলেকশন পোস্টে নিয়োগের পরীক্ষায় একাধিকবার পরীক্ষার্থীদের বসতে হয়েছে। পাশাপাশি, একাধিক পরীক্ষার্থী সমাজমাধ্যমে বাসস্থান থেকে ২০০ কিমি দূরের পরীক্ষাকেন্দ্রে ছুটতে গিয়ে নাজেহাল হওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। তার মাঝেই কমিশনের এই সতর্কবার্তাকে বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলেও দাবি করছেন পরীক্ষার্থীরা।