WBBSE Notice

সকালের প্রার্থনাসভায় গাইতে হবে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’! স্কুলে স্কুলে নয়া নির্দেশিকা জারি করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব এক নির্দেশিকা জারি করে জানান, রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হবে, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল-পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

সকালের প্রার্থনায় গাইতে হবে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’। সরকারি ও সরকার পোষিত সমস্ত স্কুলের জন্য বৃহস্পতিবার এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই গানটি ২০২৩-এ রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে নির্ধারণ করা হয়। বিধানসভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ করা হয়। যদিও এর আগে থেকেই নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রকাশ্য জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা’ অংশটি বদলে ‘বাংলার পণ, বাংলার আশা, বাংলার কাজ, বাংলার ভাষা’ করে দেন। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব এক নির্দেশিকা জারি করে জানান, রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হবে নির্দিষ্ট একটি অংশ, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল—পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান। বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন— এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।’ রাজ্য সঙ্গীত সম্পূর্ণ হতে হবে এক মিনিটের মধ্যে।

এ বার নয়া নির্দেশিকায় সমস্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সকালের প্রার্থনায় রাজ্য সঙ্গীত গাওয়ার কথা বলা হয়েছে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সেক্রেটারি সুব্রত ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, “এ বার থেকে স্কুলগুলিতে প্রার্থনাসভায় এই গান বাধ্যতামূলক।”

Advertisement

সরকারি নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সঙ্গীতকে প্রার্থনাসঙ্গীত করে তোলার মধ্যে নয়া বিতর্কও তৈরি হচ্ছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাঙালি ভাবাবেগ জাগ্রত করার প্রক্রিয়া জারি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী এই গানে যে আবেগ, তা উপেক্ষা করতে পারছেন না কেউই।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র সরকার বলেন, “প্রার্থনাসঙ্গীত হিসাবে এই গান সকালে গাওয়া যেতেই পারে। রবীন্দ্রনাথের এই গানটির সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে। বঙ্গভঙ্গের সময় এই গানের রচনা। সব স্কুলেই প্রার্থনা হয়। মাদ্রাসা বা মিশনারি স্কুলেও তা হয়। কিন্তু সব কিছু সরকার এ ভাবে চাপিয়ে দিতে পারে না।”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রাজ্যেশ্বর সিংহ বলেন, “রবীন্দ্রনাথের গান যদি বাধ্যতামূলক হয়, তা হলে তার একটা প্রতিক্রিয়া হয়। অবশ্যই এ গানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আবেগ। কিন্তু কোনও কিছু বাধ্যতামূলক করে দেওয়া খুব সুবিবেচনার কাজ নয়। গানকে গানের আনন্দে গাইতে দেওয়াই উচিত।”

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এই ঘোষণার আগে রাজ্যের সমস্ত সরকার ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে আগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হত। তার পর স্কুলগুলি তাদের ঠিক করা প্রার্থনাসঙ্গীত গাইত। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসার পর প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, "রাজ্য সঙ্গীত যদি প্রতি দিন প্রার্থনার সময় গাওয়া হয়, তা হলে প্রতিটি স্কুল যে জাতীয় সঙ্গীত গায় তার কী হবে! আমরা রাজ্য সঙ্গীতের বিরোধিতা করছি না, কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত বাদ দিয়ে শুধু রাজ্য সঙ্গীত পরিবেশন করা যুক্তিযুক্ত হবে না।"

বিতর্কের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে স্পষ্ট ভাবে জানান, আগে জাতীয় সঙ্গীত পরে রাজ্য সঙ্গীত গাওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রীর এক্স হ্যান্ডেলের টুইট। ছবি: সংগৃহীত।

উল্লেখ্য, ভারতের বহু রাজ্যেই রাজ্য সঙ্গীত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন এমন কোনও গান ছিল না। সর্বপ্রথম ‘বন্দে উৎকল জননী’ ওড়িশায় রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয়েছিল ১৯৩৬ সালে। ১৯৫৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে রাজ্য সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয় ‘মা তেলুগু থালিকি’। অসম, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, কর্নাটক থেকে শুরু করে ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানায়ও রাজ্য সঙ্গীত রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement