কতজন পরীক্ষা দিল, তার হিসাব রাখতে অনলাইনে পোর্টাল পরিচালনা করবে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সাড়ে ৫ হাজার পরীক্ষার্থী উপস্থিতই হল না উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম সেমেস্টারের প্রথম দিনের পরীক্ষায়। সোমবার, সারা রাজ্য থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে, তাতে এই অনুপস্থিতিকে সার্বিক ভাবে উচ্চ মাধ্যমিকের অনুপস্থিতির থেকে কম বলেই মনে করছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এরা সকলেই সাপ্লিমেন্টারির সুযোগ পাবে। আবার টেট বা এসএসসি পরীক্ষার ধাঁচে উচ্চ মাধ্যমিকেও সংরক্ষণ করা হবে ওএমআর শিট। প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষে এ বিষয়ে বিশদ জানিয়েছেন শিক্ষা সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
পরীক্ষা দিল না কত জন?
এ দিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল ৫,৮২৭ জন পরীক্ষার্থী। বাকি ৬,৫৪,১৭৩-এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ১৪৩ জন। বিশেষ ভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৯৭, তাদের মধ্যে কলকাতার পড়ুয়ারা ২০৮জন। এ বার সংশোধনাগার থেকে পরীক্ষায় বসেছে ৩ জন। সব মিলিয়ে উপস্থিতির হার ৯৯ শতাংশ। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬,৬০,০০০।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তরবঙ্গের কেন্দ্রগুলিতে ১,৩২১, বর্ধমান এবং তার পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রে ১,৪৬৫, মেদিনীপুরের স্কুলগুলিতে ৬৬৮ এবং কলকাতার পরীক্ষাকেন্দ্রে ২,৩৭৩ জন পরীক্ষা দিতে আসেনি। তবে শিক্ষা সংসদ সভাপতি জানিয়েছেন, কারও বছর নষ্ট হবে না। অনুপস্থিত সকলেই চাইলে নির্দিষ্ট সময়ে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষায় বসতে পারবে।
— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
অনলাইনে তথ্য সংগ্রহ:
কত জন পরীক্ষা দিয়েছে, কত জন অনুপস্থিত— সে সব তথ্য ‘অনলাইন অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম’-এর পোর্টাল মারফত জানা গিয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকেই পরীক্ষার্থীদের তথ্য পাঠানো হয়েছে। তবে প্রথম দিন এই কাজে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে স্কুলগুলি। সংসদ সভাপতি দাবি করেন, পরবর্তী দিনগুলিতে এই সমস্যা আর যাতে না হয়, সে জন্য পদক্ষেপ করা হবে। পরীক্ষা শেষে স্কুলের আধিকারিকেরা বেলা ১২টা থেকে ২টোর মধ্যে ওই তথ্য অনলাইনে জমা দিতে পারবেন।
ওএমআর শিট সংরক্ষণ:
আগেই বলা হয়েছিল, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম সেমেস্টারের ফল প্রকাশ করা হবে। সোমবার জানানো হয়েছে, ফল পাওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর ওএমআর শিটের স্ক্যান ইমেজ ওয়েবসাইট মারফত দেখার সুযোগ পাবেন পরীক্ষার্থীরা। মূলত প্রযুক্তিগত সমস্যা এড়াতেই ফলাফল এবং ওএমআর শিট আলাদা আলাদা সময়ে আপলোড এবং ডাউনলোড করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।
পরীক্ষা কেমন হল?
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সর্বত্র শান্তিপূর্ণ ভাবে পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা বাংলা প্রশ্ন নিয়ে খুশি, এমনটাই খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে, সকাল থেকেই জানা যাচ্ছিল, ওএমআর-এ পরীক্ষা দিতে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে বহু পরীক্ষার্থীকেই।
এ প্রসঙ্গে সংসদ সভাপতি বলেন, “ওএমআর শিট নিয়ে সমস্যা হতে পারে, তা আঁচ করেই সমস্ত কেন্দ্রে ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত ওএমআর শিট পাঠানো হয়েছিল। প্রথমদিনের পরীক্ষায় মোবাইল বা বৈদ্যুতিন সামগ্রী নিয়ে ধরা পড়া বা কোনও পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘রিপোর্টেড এগেনস্ট’-এর মতো ঘটনা ঘটেনি।”
কবে কোন পরীক্ষা? গ্রাফিক্স: আনন্দবাজার ডট কম।
বই বিভ্রাট:
পাঠ্যবই হাতে পেতে দেরি হয়েছে, পরীক্ষা প্রস্তুতিতে খামতি থেকে গিয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তাঁরা দাবি করেন, পরীক্ষার মাত্র মাস দুয়েক আগে হাতে বই পাওয়া গিয়েছে। এর উত্তরে শিক্ষা সংসদ সভাপতি বলেন, “নির্ধারিত সময়ের এক মাস পরে বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও যাতে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে সমস্যা না হয়, তার জন্য ক্লাসের পাশাপাশি, আমাদের ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিয়ো টিউটোরিয়াল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
পরীক্ষার সময়সীমা নিয়ে সমস্যা:
এর আগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হত ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের। সেমেস্টার পদ্ধতিতে সেই সময় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট করে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অনেকেই আশঙ্কা করেছে, কম সময়ের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষাগুলি দিতে অসুবিধা হতে পারে। অন্যদিকে ওএমআর শিট পূরণ করতে গিয়েও এ দিন নাজেহাল হতে হয়েছে বহু পরীক্ষার্থীকে। তাই পরীক্ষার শুরু হওয়ার ১০ মিনিট আগে উত্তরপত্র দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।
প্রশ্ন ফাঁস রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা:
শিক্ষা সংসদের তরফে এমন ভাবেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে, যাতে কেউ যদি প্রতিলিপি তৈরি করতে চায়, তা সহজেই ধরা পড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, কোন জেলার কোন কেন্দ্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করা হয়েছে, তা-ও ধরে ফেলবে শিক্ষা সংসদ।