B.Ed

এমএ পড়বেন, না বিএড? কোন কোর্স করলে ভাল হয়?

কলেজে জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় তিনটি বছর কাটানোর পর অনেক ছেলেমেয়েই বিভ্রান্ত বোধ করেন পরবর্তী ধাপে কী করবেন, তাই নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:০০
Share:

এমএ না বিএড? সংগৃহীত ছবি

কলেজে জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় তিনটি বছর কাটানোর পর অনেক ছেলেমেয়েই বিভ্রান্ত বোধ করেন পরবর্তী ধাপে কী করবেন, তাই নিয়ে। অনেকেই ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন মাথা না ঘামিয়ে, বন্ধুরা যা করছেন, সেই স্রোতেই গা ভাসিয়ে দেন। আবার কোনও কোনও ছেলেমেয়ে যত্নের সঙ্গে রকমের কেরিয়ার প্ল্যানিং করেন আগে থেকেই। শুধুমাত্র কলেজ জীবন উপভোগ করাই তাঁদের লক্ষ্য নয়, তাঁরা নিজেদের একজন সফল পেশাদার হিসেবেও দেখতে চান। তাই তাঁরা স্নাতক হওয়ার পরে কী কী করতে চান, সেই ব্যাপারেও তাঁদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে।

Advertisement

কলা বিভাগের কোনও বিষয়ে স্নাতক পাশ করার পরে, অনেকেই শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান। তার পিছনে নিজের বিষয়টিকে ভালবাসাও যেমন একটি কারণ, তেমনি পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক ভাবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষাও কাজ করে। সে ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা স্নাতকের পরে বিএড ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন জানান। শিক্ষকতার পেশার ক্ষেত্রে বিএড ডিগ্রি থাকাটা আবশ্যিক।

তবে, শিক্ষকতা ছাড়া আর যে কোনও পেশায় যেতে গেলে ছাত্রছাত্রীদের এমএ ডিগ্রি জরুরি না হলেও, এটি লাভ করা প্রয়োজন। কেন না পরবর্তীতে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা ধার্য করা হয়, সেই মাপকাঠি পূরণের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের কোনও অসুবিধা হয় না।

Advertisement

এবার জেনে নেওয়া যাক, ডিগ্রিগুলি কী ধরনের :

এমএ ডিগ্রিটি যে কোনও বিষয়েই করা যায়। তবে কিছু কিছু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোনও কোনও যে বিষয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যে বিষয় স্নাতক হয়েছেন, শুধু মাত্র সেই বিষয়েই তাঁরা আবেদন জানাতে পারেন। এই কোর্সটি দু'বছরের হয়। এমএ- তে আবেদন জানানোর জন্য শিক্ষার্থীকে সাধারণ ভাবে স্নাতকে ৫৫ শতাংশ নিয়ে পাশ করতে হয়। তবে এর অন্যথা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

একই ভাবে বিএড ডিগ্রিটিও দু'বছরের কোর্স। তবে এটি একটি পেশাদারি কোর্স, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষকতার পেশাকে বেছে নেওয়ার জন্য অত্যাবশ্যক বলে বিবেচিত হয়। এই কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে, স্নাতকে (বিএ, বিকম,বা বিএসসি) মোট ৫০ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রেও কলেজ ও বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যোগ্যতার মাপকাঠি পরিবর্তিত হতে পারে। তবে এই স্নাতক ডিগ্রিগুলি কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়েরই হতে হবে।

এমএ বা বিএড পাশের পরে কী ধরনের পেশার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, তা জানতে গেলে আগে জানতে হবে, কী কী চাকরি পাওয়া যেতে পারে এমএ বা বিএড পাশের পরে।

এমএ পাশ করার পর কোনও শিক্ষার্থী যে যে ধরনের কাজ পেতে পারেন, সেগুলি হল:

১. সাংবাদিক

২. অনুবাদক

৩. লেখক

৪. লেকচারার বা প্রফেসর

৫. সামাজিক কর্মী

৬. প্রকাশক

৭. কন্টেন্ট রাইটার

৮. সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট

এ ছাড়াও, শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্যেও প্রস্তুতি নিতে পারেন। যে ধরনের চাকরির জন্য তাঁরা চেষ্টা করতে পারেন, সেগুলি হল:

১. রেল

২. ব্যাঙ্কিং

৩. সিভিল সার্ভিস

৪. রাজ্য সরকারি চাকরি

৫. স্টাফ সিলেকশন কমিশনের চাকরি

এ বার দেখা যাক, বিএড ডিগ্রি পাশ করে কোনও শিক্ষার্থী কী কী কাজ করতে পারেন:

অন্যান্য পেশাদারি কোর্সের মধ্যে বিএড কোর্সটির জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি, কেন না শিক্ষকতার পেশায় এই ডিগ্রি আজকাল আবশ্যিক। এই ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষকতার পেশাতে গেলেও আজকাল শুধু পড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় না। অন্যান্য নানা ধরনের কাজ করারও সুযোগ থাকে।

বিএড করার পরে শিক্ষার্থীরা সরকারি স্কুলে পড়াতে চাইলে সরকারি পরীক্ষাগুলি দিতে পারেন। কেন না বিএড ডিগ্রি থাকলেও সরকারি স্কুলে পড়াতে গেলে সরকার পরিচালিত টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট বা টেট পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। বিএড পাশ করে পরীক্ষার্থীরা রাজ্য সরকারি স্তরে বা কেন্দ্রীয় স্তরে সরকার পরিচালিত এই শিক্ষকতার যোগ্যতা মাপক পরীক্ষাগুলিতে বসতে পারেন সরকারি স্কুলগুলিতে নিয়োগের জন্য। যে পদগুলির জন্য তাঁরা আবেদন করতে পারেন, সেগুলি হল:

১. স্কুল অ্যাসিস্ট্যান্ট

২. প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক

৩. স্নাতকোত্তর শিক্ষক

৪. ভাষা শিক্ষক

৫. কেন্দ্রীয় সরকারি

শিক্ষকএ ছাড়াও বেসরকারি ক্ষেত্রে বিএড পাশ করে অনেকেই আংশিক বা পূর্ণ সময়ের শিক্ষকতার জন্য আবেদন জানাতে পারেন। আজকাল দেশের বিভিন্ন শহরে বহু বেসরকারি স্কুল গড়ে উঠেছে, যেখানে তারা নিজস্ব নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করে। এই সমস্ত স্কুলে নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার জন্যেও নানারকম কোর্স করানো হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এ ছাড়াও বেসরকারি ক্ষেত্রে অন্যান্য নানা পদের জন্য আবেদন জানানো যেতে পারে। সেগুলি হল:

১. এডুকেশন কাউন্সেলর

২. অ্যাকাডেমিক কনটেন্ট রাইটার

৩.গবেষক

৪. অনলাইন প্রশিক্ষক

৫. কারিকুলাম ডিজাইনার

এমএ কলেজগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি হল:

১. লেডি শ্রীরাম কলেজ ফর উইমেন, নয়া দিল্লি

২. লয়োলা কলেজ, চেন্নাই

৩. ক্রাইস্ট ইউনিভার্সিটি, বেঙ্গালুরু

৪. প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, কলকাতা

৫. সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, মুম্বাই

বিএড কলেজগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি হল:

১. জামিয়া মিলিয়া ইউনিভার্সিটি, নয়া দিল্লি

২. লরেটো কলেজ, কলকাতা

৩. বোম্বে টিচার ট্রেনিং কলেজ

৪. ইন্দিরা গাঁধী ওপেন ইউনিভার্সিটি

৫. যাদবপুর ইউনিভার্সিটি, কলকাতা

তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে মাথায় না রাখলেও, উক্ত বিষয়গুলি ভালত ভাবে জেনে বুঝে নিয়ে আপনার পছন্দ স্থির করুন। যেই কোর্সই বাছুন, নিজের পড়াশুনোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন