১৪৪ ধারা দেখিয়ে পিংলায় বিজেপির প্রতিনিধি দলকে আটকাল পুলিশ

পাড়ুইয়ের ছায়া পিংলায়। ১৪৪ ধারা জারি থাকার অজুহাত দেখিয়ে বিস্ফোরণের গ্রামে বিজেপির প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দিল না পুলিশ। শুক্রবার সকালে পিংলার মুণ্ডমারি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে বিজেপির এক সভা হয়। সভায় যোগ দেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার, দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পিংলা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৫ ২০:৫৩
Share:

পিংলায় যেতে দেওয়া হল না রূপা গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বিজেপির প্রতিনিধিদের। রামু্পসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

পাড়ুইয়ের ছায়া পিংলায়।

Advertisement

১৪৪ ধারা জারি থাকার অজুহাত দেখিয়ে বিস্ফোরণের গ্রামে বিজেপির প্রতিনিধি দলকে ঢুকতে দিল না পুলিশ। শুক্রবার সকালে পিংলার মুণ্ডমারি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে বিজেপির এক সভা হয়। সভায় যোগ দেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার, দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সভা শেষে ব্রাহ্মণবাড়ের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। তবে ব্রাহ্মণবাড়ে ১৪৪ ধারা জারি থাকার কথা বলে ঘটনাস্থলের প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মুণ্ডমারি মোড়ে বিজেপির প্রতিনিধি দলকে আটকান ডেবরার সিআই সুপ্রিয় বসু।

গত বছর একাধিকবার তৃণমূল-বিজেপির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বীরভূমের পাড়ুই। সেই সময়ও ১৪৪ ধারা জারির অছিলা দেখিয়ে বিজেপি-সহ বিরোধীদের প্রতিনিধি দলকে পাড়ুইয়ে ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। শুক্রবার বিজেপি নেতারা পুলিশের কাছে জানতে চান, বিস্ফোরণের দু’সপ্তাহ পরে হঠাৎ ব্রাহ্মণবাড়ে ১৪৪ ধারা জারি করার প্রয়োজন পড়ল কেন? উত্তরে পুলিশ জানায়, প্রশাসন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। পুলিশ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সম্প্রতি গোয়েন্দা দফতর থেকে আমাদের ফের এলাকায় অশান্তি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। তাই বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ২৮ মে পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’’

Advertisement

এ দিন প্রথমে মুণ্ডমারিতে সভা করে বিজেপি। সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ হাত গুটিয়ে রয়েছে। এ ভাবে বারুদের স্তূপের উপর আমরা বাঁচতে চাই না।’’ সভা শেষে ব্রাহ্মণবাড় যাওয়ার পথে তাঁদের আটকায় পুলিশ। পুলিশের কাছে ১৪৪ ধারা জারির নথি দেখতে চান বিজেপি নেতারা। পুলিশ তা দেখাতে না চাইলে জয়প্রকাশবাবু খড়্গপুরের মহকুমাশাসককে ফোন করেন। জয়প্রকাশবাবু জানান, মহকুমাশাসক তাঁকে বলেন, এলাকায় তাঁদের যেতে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মুণ্ডমারিতে মোতায়েন পুলিশের কাছে ১৪৪ ধারা জারির নথি রয়েছে।

সেই সময় জয়প্রকাশবাবু ফের পুলিশের কাছে নথি দেখতে চাইলে ডেবরার সিআই তাঁদের আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্ত। একইভাবে, বিজেপি নেতাদের তিনিও ব্রাহ্মণবাড়ে ১৪৪ ধারা জারি সম্পর্কে বলেন। শেষ পর্যন্ত নথি না দেখেই এলাকা ছাড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। জয়প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো নেত্রী এলাকায় গেলে স্থানীয়রা তাদের ক্ষোভের কথা জানাবেন। তাই ভয় পেয়েই রাজ্যের ফ্যাসিস্ত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আটকালো।’’ একইভাবে, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ব্রাহ্মণবাড়ের মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছা থেকেই এলাকায় যেতে চেয়েছিলাম। তবে আমাদের আটকাতে পুলিশ আগেভাগে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ১৪৪ ধারা জারির কাগজও দেখাতে পারেনি। পরে তিনি আবার আসবেন। পুলিশ তাঁদের আটকাতে পারবে না।’’

প্রশ্ন উঠছে, অন্য দলের নেতাদের ব্রাহ্মণবাড়ে যেতে দেওয়া হলেও কেন বিজেপির প্রতিনিধিদের আটকানো হল? উত্তরে মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘ওরা তিন জন ব্রাহ্মণবাড়ে গেলে তাঁদের ঘিরে আরও তিনশো জনের জমায়েত হতে পারত। তা থেকে অশান্তির আশঙ্কাও ছিল।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) অভিষেক গুপ্তও বলেন, ‘‘বিস্ফোরণস্থল থেকে দূরে হওয়ায় বিজেপির সভার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য তাঁরা পরে অনুমতি চাইলে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।’’

এ দিন কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে বিস্ফোরণে জখম জহিরুদ্দিন শেখের (১৮) মৃত্যু হয়। ফলে পিংলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩। এ দিন ব্রাহ্মণবাড়ের বাসিন্দা পার্বতী হেমব্রম, সনাতন টুডু, সমীর মাণ্ডিরা বলেন, ‘‘বিজেপির লোকেরা এলে রঞ্জন মাইতির আরও কুকীর্তির কথা ফাঁস হয়ে যেত। তাই পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ওদের আটকেছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়েরও কটাক্ষ, ‘‘পিংলায় ওদের কিছু নেই। সাধারণ মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন