উত্তরবঙ্গে ধর্মঘটে ভালই সাড়া

সারা উত্তরবঙ্গ জুড়ে বনধের ভালই প্রভাব পড়ে। বিক্ষিপ্ত ভাবে বনধ সমর্থনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিরোধীরা। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলাতেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার ৬৩১ জন। কেন্দ্রের প্রস্তাবিত পরিবহণ আইনের বিরোধিতায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ২৪ ঘণ্টা পরিবহণ ধর্মঘট এবং পুরভোটে শাসকের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিজেপি-র ডাকা ১০ ঘণ্টা ও বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৫৪
Share:

জনশূন্য মালদহের পথঘাট। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।

সারা উত্তরবঙ্গ জুড়ে বনধের ভালই প্রভাব পড়ে। বিক্ষিপ্ত ভাবে বনধ সমর্থনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিরোধীরা। শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলাতেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার ৬৩১ জন।

Advertisement

কেন্দ্রের প্রস্তাবিত পরিবহণ আইনের বিরোধিতায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ২৪ ঘণ্টা পরিবহণ ধর্মঘট এবং পুরভোটে শাসকের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিজেপি-র ডাকা ১০ ঘণ্টা ও বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গে। রাস্তায় সরকারি বাস কম। মেলেনি বেসরকারি বাস। বন্ধ রয়েছে দোকান-বাজার। স্কুলকলেজ খোলা থাকলেও যানবাহন অমিল হওয়ায় পড়ুয়া-শিক্ষকদের উপস্থিতির হার ছিল কম। সরকারি অফিস খোলা থাকলেও, সেখানে কর্মীদের হাজিরা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম।

শিলিগুড়িতে রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। প্রয়োজন ছাড়া কেউই বিশেষ বাইরে বের হননি। যাঁরা বের হয়েছিলেন তাঁদের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের (এনবিএসটিসি) বাস রাস্তায় নামলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। দেখা মেলেনি কোনও বেসরকারি বাসেরও। ফলে চূড়ান্ত নাকাল হন যাত্রীরা। বন্ধ থাকে দোকানবাজারও। সরকারি অফিসে যাতে বেতন কোপ না পড়ে তার জেরে কর্মীরা হাজির হলেও তাঁদের সংখ্যা ছিল কম। বনধের সমর্থনে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালানোর অভিযোগে রাজ্যসভার প্রাক্তন বাম সাংসদ সমন পাঠক-সহ ২১ জনকে বাম সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৯ জন বিজেপি কর্মীকেও।

Advertisement

জলপাইগুড়িতে বনধের আংশিক প্রভাব পড়েছে। সরকারি বাস চললেও সংখ্যায় নগণ্য। রাস্তায় নামেনি বেসরকারি যানবাহন। দোকানবাজার বন্ধ ছিল। স্কুল-কলেজে উপস্থিতির হার ছিল অত্যন্ত কম। বনধের আওতা থেকে বাদ যায়নি চা-বাগানগুলিও। সেখানেও এর মিশ্র প্রভাব পড়েছে। বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির আওতাধীন বাগানগুলিতে উত্পাদন বন্ধ ছিল। শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের আওতাধীন বাগানে অবশ্য স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালতে। জলপাইগুড়িতে প্রাক্তন বাম সাংসদ মাণিক সান্যাল, মিনতি সেন, সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা বিধানচন্দ্র রায়-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে ৬০০ জন বাম নেতা-কর্মীকে। বিজেপি-র জেলা সম্পাদক বাপি গোস্বামী-সহ গ্রেফতার ৩১ জন বিজেপি নেতা-কর্মী।

বনধ সর্বাত্মক কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মালদহে। জেলা জুড়ে অফিস-কাছারি খোলা থাকলেও উপস্থিতির হার ছিল নগণ্য। দেখা মেলেনি যানবাহনের। চাঁচলের এক নম্বর ব্লকের অধীন কলিগ্রামে পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ করার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার ২ বিজেপি অবরোধকারী। চাঁচলেই কলকাতাগামী উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের একটি বাসের চালককে মারধর করেন বনধ সমর্থকরা। আহত ওই চালক চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনার জেরে বন্ধ হয়ে যায় বাস পরিষেবা। বনধ ব্যর্থ করতে মালদহ শহরে বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী মিছিল করলেও স্বতস্ফূর্ত বনধ হয়েছে জেলা জুড়েই। ইসলামপুরে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।

আলিপুরদুয়ারেও বন্ধ ছিল দোকানবাজার। কোনও বেসরকারি বাস বা অটো চলেনি। ভরসা শুধুমাত্র কয়েকটি সরকারি বাস। ফলে চূড়ান্ত নাকাল হয় আমজনতা। সকালের দিকে কিছু সংখ্যক টোটো গাড়ির দেখা মিললেও, বেলা গড়াতে তা-ও ডুমুরের ফুল। সরকারি অফিসে হাজিরা ভাল থাকলেও বন্ধ ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে স্কুলে পরীক্ষা হয়েছে।

রাজগঞ্জ-সহ গোটা উত্তর এবং দিনাজপুরে কোনও গণ্ডগোলের খবর মেলেনি। যদিও স্কুলকলেজ, দোকান-বাজার ছিল বন্ধ। অবরোধকারীরা রায়গঞ্জের তিনটি পৃথক এলাকায় বাস থামালেও পুলিশি তত্পরতায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কোচবিহারে বনধের মিশ্র প্রভাব পড়েছে। কিছু সংখ্যক দোকান-বাজার খোলা ছিল। রাস্তায় পরিবহণের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। কোনও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। জেলার মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জে বনধের কোনও প্রভাব মেলেনি। স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি খোলা ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন