কৃষক আত্মহত্যায় উত্তাল সংসদ, বিক্ষোভ রাজধানী জুড়েও

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে সংসদে তুমুল হট্টগোল— কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে ক্রমেই সরগরম হচ্ছে রাজধানীর রাজনীতি। বুধবার দিল্লির যন্তর-মন্তরে আম আদমি পার্টির সভা চলাকালীন কাছের একটি গাছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন রাজস্থানের কৃষক গজেন্দ্র সিংহ। আপের মঞ্চ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ওই ঘটনা ঘটায় অস্বস্তিতে পড়ে কেজরীবালের দল। জমি বিল নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের চলতি আন্দোলনের মাঝে এক কৃষকের আত্মহত্যায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ১৪:১৯
Share:

পোড়ানো হচ্ছে কেজরীবালের কুশপুতুল। ছবি: রয়টার্স

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে সংসদে তুমুল হট্টগোল— কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে ক্রমেই সরগরম হচ্ছে রাজধানীর রাজনীতি।

Advertisement

বুধবার দিল্লির যন্তর-মন্তরে আম আদমি পার্টির সভা চলাকালীন কাছের একটি গাছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন রাজস্থানের কৃষক গজেন্দ্র সিংহ। আপের মঞ্চ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ওই ঘটনা ঘটায় অস্বস্তিতে পড়ে কেজরীবালের দল। জমি বিল নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের চলতি আন্দোলনের মাঝে এক কৃষকের আত্মহত্যায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও। বিতর্ক থামাতে টুইটারে বিবৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। গজেন্দ্রর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকার যে কৃষকদের পাশেই আছে, তা-ও জানান তিনি। ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব ছিল আপ নেতৃত্ব। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের ‘মুখ বাঁচাতে’ এবং কেন্দ্রের অস্বস্তি কাটাতে আসরে নামেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তড়িঘড়ি ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু এত করেও যে বিশেষ লাভ হয়নি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল বৃহস্পতিবার।

এ দিন সকাল থেকেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে যুব কংগ্রেস। গজেন্দ্রর মৃত্যুতে বুধবারই আপ নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতের অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস। এ দিন সেই অভিযোগের সঙ্গে ঘটনায় আপ নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের দাবিও তোলে কংগ্রেস। পোড়ানো হয় কেজরীবালের কুশপুতুল। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “গজেন্দ্রকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেননি মঞ্চের আপ নেতারা। ঘটনার পর তাদের উচিত ছিল সঙ্গে সঙ্গে সভা বন্ধ করা।”

Advertisement

বুধবারের ঘটনাস্থল যন্তর-মন্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়ে আয়োজকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানায় তারা। বিজেপি নেতা সতীশ উপাধ্যায়ের অভিযোগ, “এটা কোনও ভাবেই আত্মহত্যার ঘটনা নয়। গজেন্দ্রকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছে আম আদমি পার্টি। মাস দেড়েক আগে গজেন্দ্রকে আপের সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে সভায় আমন্ত্রণ জানান আপ নেতা মণীশ সিসৌদিয়া নিজে। এমনকী ঘটনার পরও প্রায় ৪৫ মিনিট সভা চালানো হয়।” আপ নেতাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা শুরু করার দাবিও করেন তিনি।

কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে এ দিন তুমুল হট্টগোল হয় সংসদের দুই কক্ষে। তুমুল বাকবিতণ্ডায় স্থগিত হয়ে যায় দুই কক্ষের কাজ। বিষয়টি নিয়ে ‘রাজনীতি না করতে’ এবং সংসদের কাজ চালাতে দিতে সংসদ বিষয়কমন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইড়ুকে হাত জোড় করে বিরোধীদের অনুরোধ করতেও দেখা যায়। অধিবেশনের শুরুতেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানায় কংগ্রেস। কিন্তু বিষয়টি দিনের শেষে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়ে স্পিকার সুমিত্রা মহাজন বলেন, “অযথা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করবেন না। যখন ঘটনাটি ঘটে, কেউই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে যয়নি। কৃষকদের সমস্যা সমাধানে কেউই আগ্রহী নয়।” সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন বাম সদস্যরা। কংগ্রেসের তুমুল বিক্ষোভে অধিবেশন মুলতুবি করেন স্পিকার। কৃষকদের সমস্যা সমাধানে সরকার এবং বিরোধীপক্ষকে এক টেবিলে বসে আলোচনার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনিও ঘটনাটি নিয়ে রাজনীতি না করতে বিরোধীদের অনুরোধ করেন।

তবে স্পিকার বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনীতি না করার আহ্বান জানালেও গজেন্দ্র সিংহের শেষযাত্রাও রাজনীতি মুক্ত হল না। এ দিন সকালে রাজস্থানের দৌসা জেলায় তাঁর নিজের গ্রামে শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী সচীন পায়লট। ওই কংগ্রেস নেতাদের অবশ্য দাবি, রাজনীতি নয়, মৃতের পরিবারের পাশে থাকার জন্যই তাঁরা এসেছেন। পাশাপাশি কৃষক স্বার্থ রক্ষায় মোদী সরকারের ‘অকর্মন্যতা’ নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি।

এ দিন সকালে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজীব জঙ্গ এবং পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেন রাজনাথ। দ্রুত তদন্ত শেষ করার নির্দেশও দেন তিনি। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট রাজনাথের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি ধারায় মামলাও রুজু করা হয়েছে। আপাতত গজেন্দ্রর ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষা করছে পুলিশ। পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে সে দিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন