অন্তরাল থেকে আত্মপ্রকাশ অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক আর্মাটা-র

ইডেনে দাদা নামলেন কি! এই উচ্ছ্বাস সেই গর্জনকেও হয়তো ফিকে করে দিতে পারে! অথচ রক্তে মাংসের কোনও শরীরই এটা নয়! ইস্পাত নির্মিত যন্ত্র মাত্র। কিন্তু রাশিয়ার মানুষের জাতি গর্বে এই যন্ত্রই যেন আজ নতুন করে অক্সিজেন ভরে দিল!

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

মস্কো শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৫ ২১:০৮
Share:

রেড স্কোয়ারে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: শঙ্খদীপ দাস।

ইডেনে দাদা নামলেন কি!

Advertisement

এই উচ্ছ্বাস সেই গর্জনকেও হয়তো ফিকে করে দিতে পারে!

অথচ রক্তে মাংসের কোনও শরীরই এটা নয়! ইস্পাত নির্মিত যন্ত্র মাত্র। কিন্তু রাশিয়ার মানুষের জাতি গর্বে এই যন্ত্রই যেন আজ নতুন করে অক্সিজেন ভরে দিল!

Advertisement

আর্মাটা টি ১৪ ট্যাঙ্ক! যার ভিতরে কোনও এক গুপ্ত অংশে গা ঢাকা দিয়ে রিমোটের মাধ্যমে কামান দাগা যেতে পারে শত্রু শিবিরে! ষাট মাইল ব্যাসার্ধ্বের আওতায় ৩৬০ ডিগ্রি জুড়ে তছনছ করে দেওয়া যায় যে কোনও কিছু! প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে ট্যাঙ্ক প্রজাতির মধ্যে এটিই আধুনিকতম। দিল্লির প্রগতি ময়দানে ‘ন্যানো’-র আত্মপ্রকাশের আগে সংবাদমাধ্যমে জল্পনার কথা মনে পড়ে! টি ১৪-র জন্ম মুহূর্ত থেকে তেমনই কৌতুহল ও জল্পনা ছিল গোটা দুনিয়ায়! ক্রেমলিন আজ প্রথমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে সামনে আনল তাকে। রেড স্কোয়ারে গুণে গুণে দশটি আর্মাটা গর্জণ করে দাপিয়ে বেড়াল! আর তার পিছু পিছু এলো পদাতিক বাহিনীর অস্ত্রবাহী যান কুরগানেটস ২৫, ব্যুমেরাং, স্যাডভনিস্টা, আর্মাটা টি ১৫-র দল।

৭০ বছর আগে আজকের দিনটাতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। ফ্যাসিবাদ তথা নাতসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সেই লড়াইকে ‘‘মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম’’ বলে স্মরণ করে রাশিয়া। মস্কোর রাজপথে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ হয়। তবে এ বারটা ছিল অনন্য। কারণ একে তো নাতসি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সাত দশক পূর্ণ হল আজ। দুই, আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি ইউক্রেন বিবাদের জেরে এই কুচকাওয়াজ বয়কট করেছে। রেড স্কোয়ারের মঞ্চে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং সহ-১৬টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থাকলেও ওয়াশিংটনের অনুপস্থিতি কোথায় যেন খোঁচা দিল।

তবে কূটনীতিকদের মতে, সেই অনুপস্থিতি পরোয়া না করে পুতিনও যেন পাল্টা বার্তা দিলেন। বিশ্বের মানচিত্রে পুনরায় ‘মহান ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র’ হিসাবে স্থান করে নেওয়ার স্বপ্ন দেখে রুশ জনগণ। সেই আবেগটা আজ যেন আরও উস্কে দিল রেড স্কোয়ার।

রুশ পদাতিক সেনা বাহিনীর ১৬ হাজার জওয়ান আজ কুচকাওয়াজে অংশ নেন। তাঁদের সঙ্গে পা মেলান ভারতীয় সেনাবাহিনীর গ্রেনেডিয়ার রেজিমেন্টের জওয়ানরা। অংশ নেন চিন, মঙ্গোলিয়া, কাজাকিস্তান সহ আরও আটটি দেশের সেনাবাহিনীও।

প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে সেনাবাহিনীর সেই কুচকাওয়াজ চলার পরেই রেড স্কোয়ারে নামে সারি সারি ট্যাঙ্ক। তার পিছনে আসে রাশিয়ার ৬টি (এক একটি যানে দু’টি করে) আর এস ২৪ ইয়ার্স ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ঘণ্টায় ২৫ হাজার কিলোমিটার বেগে যা ১১ হাজার কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে।

কুচকাওয়াজে অংশ নেয় রাশিয়ার বায়ুসেনাও। এর মধ্যে ছিল মিগ ২৯, সুখোই ফ্রগফুট গ্রাউন্ড অ্যাটাক বিমান, টু ১৬০ হেভি বোম্বার সহ-মোট ১০টি ফাইটার জেট।

তবে মধ্যমণি ছিল একজনই। আর্মাটা টি ১৪ ট্যাঙ্ক! রাশিয়ার দাবি আগামী দিনে যুদ্ধের ময়দানে দাদাগিরি করবে এই যন্ত্রটিই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন