উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে অনড় যাদবপুর

ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফিরলেও উপাচার্য অভিজিত্‌ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবিতে উত্তেজনা অব্যাহত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সোমবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, তাঁরা আন্দোলন জারি রেখেই ক্লাস করবেন। কলা শাখার পড়ুয়ারাও জানিয়েছেন একই কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ২০:৩৭
Share:

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পড়ুয়াদের মিছিল। সোমবার কলেজ স্ট্রিটে।

ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফিরলেও উপাচার্য অভিজিত্‌ চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবিতে উত্তেজনা অব্যাহত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সোমবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, তাঁরা আন্দোলন জারি রেখেই ক্লাস করবেন। কলা শাখার পড়ুয়ারাও জানিয়েছেন একই কথা।

Advertisement

ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, “এখনও যাদবপুরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরেনি। তবে দ্রুত ফিরবে বলে আমি আশাবাদী।” তিনি এ দিন ফের জানান, ছাত্রছাত্রীরা কোনও সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন।

তবে ক্লাসে ফিরলেও অভিজিত্‌বাবুর পদত্যাগের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন যে থামবে না, এ দিনই তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। কেন তিনি পদত্যাগ করছেন না, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর সময় একদল পড়ুয়ার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হন অভিজিত্‌বাবু। উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীদের এ হেন প্রশ্নের মুখে উপাচার্য সদুত্তর দিতে না পেরে ফিরে যান দোতলায় তাঁর ঘরে। অভিজিত্‌বাবুর পদত্যাগের দাবিতে এ দিন কলেজ স্ট্রিট থেকে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ পর্যন্ত মিছিল করেন একদল পড়ুয়া। ‘ভিসি মাস্ট রিজাইন’ লেখা ব্যানার হাতে এ দিন দুপুরে অরবিন্দ ভবন (এখানেই উপাচার্যের অফিস)-এর বাইরে মানববন্ধন করেন একশোরও বেশি শিক্ষক।

Advertisement


বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সংগঠন (জুটা)-র মানববন্ধন।

এ দিন সাধারণ সভার বৈঠকের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ছাত্র সংসদ ফেটসু-র সাধারণ সম্পাদক চিরঞ্জিত্‌ ঘোষ জানান, তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড়। তাই ক্লাসে ফিরলেও ক্লাসে রোল কলে সাড়া না দিয়ে, বা উপাচার্যের পদত্যাগ-সহ দাবিগুলি পরিচয়পত্রের মতো করে গলায় ঝুলিয়ে, কিংবা ক্লাসঘরের বাইরে পড়াশোনা করে বিক্ষোভ জারি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কলা শাখার ছাত্রছাত্রীরাও জানিয়েছেন, এ ভাবেই ক্লাস ও আন্দোলন পাশাপাশি চলবে।

স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েও বেশ কিছু দিন অনুপস্থিত থাকার পরে গত শুক্রবারই প্রথম ক্যাম্পাসে ঢোকেন উপাচার্য। সে দিন তিনি জানিয়েছিলেন, ছাত্রছাত্রীরা তাঁর অত্যন্ত কাছের। তাঁরা তাঁর সন্তানতুল্য। সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ উপাচার্য অফিস থেকে বেরোনোর সময় জনাকয়েক পড়ুয়া তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে ঢুকে পুলিশ কেন ছাত্রছাত্রীদের মারধর করে? কেনই বা সে দিন পুলিশকর্মীরা ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে? মাসখানেক আগে ছাত্রছাত্রীদের ঘেরাও হঠাতে পুলিশ ডাকার পরে এখন তাঁদের ‘সন্তানের মতো’ বলার মানে কী? কেনই বা পদত্যাগ করছেন না উপাচার্য?

অরবিন্দ ভবনের লোহার কোলাপ্সিবল গেটের ভিতর থেকে অভিজিত্‌বাবু ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে চান। তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে অবশ্য কোনও কথা বলেননি অভিজিত্‌বাবু। কিন্তু উত্তেজিত ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের মুখে হঠাত্‌ই পিছন ফিরে দোতলায় উঠে নিজের অফিসে চলে যান অভিজিত্‌বাবু। এক ছাত্রী বলেন, “আমরা ওঁকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু উপাচার্যের কাছে কোনও প্রশ্নেরই সদুত্তর নেই। উনি নিজেই ঘরে গিয়ে বসে আছেন। আমরা কিন্তু ওঁকে ঘেরাও করিনি।” সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশের কড়া পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোন উপাচার্য।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন