স্বপ্ন সফল! জয়ের উৎসবে সমর্থকেরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বেঙ্গালুরু এফ সি ১ (জনসন)
মোহনবাগান ১ (রজ্জাক)
টেনশন, হতাশা, বার বার ঘড়ি দেখা মুহূর্তে স্তব্ধ। নেটে তত ক্ষণে জড়িয়ে গেছে বেলো রজ্জাকের দুরন্ত হেডার। কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের সমস্ত ‘ক্লান্তি’ হঠাৎই সবুজ-মেরুনে আচ্ছন্ন। এবং ইতিহাস। ১৩ বছর পর বাংলায় ঢুকল আই লিগ। ১৩ বছর পর ভারতসেরার মর্যাদা পেল বাংলার কোনও ক্লাব। আর তা এল এক বঙ্গসন্তানের হাত ধরেই।
জয় বা নিদেনপক্ষে ‘ড্র’ করলেই আই লিগ হাতের মুঠোয় আসত। চাপ বেশ ভালই ছিল সনি নর্ডি-শিল্টন পালদের উপর। তবে ড্র নয়— প্রথম থেকেই জেতার জন্য মরিয়া ছিল বাগান। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে বোয়া-নর্ডি-কাটসুমিদের সেরা দল দিয়েই শুরু করেছিলেন কোচ সঞ্জয় সেন। ধনচন্দ্র ছাড়া প্রথম এগারো ছিল অপরিবর্তিত। বেঙ্গালুরুর কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউড কিন্তু একটা বড় ফাটকা খেলেছিলেন। প্রথম এগারোয় রাখেননি সুনীল ছেত্রীকেই। বদলে নামানো হয় তরুণ উদান্তাকে। ফাটকাটা প্রায় কাজেই লেগে যাচ্ছিল ১৩ মিনিটে। গোল প্রায় করেই ফেলেছিলেন এই তরুণ। তবে আক্রমণের রাশ প্রায় পুরোটাই ছিল বাগানের হাতেই। ৪০ মিনিটের মাথায় নর্ডির শট বারে লাগে। তার কয়েক মিনিটের মাথায় জনসনের গোল। প্রথমার্ধের একদম শেষে একটি গোল সেভও করেন এই জনসন।
ম্যাচ যখন প্রায় হাতের বাইরে, ফের এক বার হতাশায় ঢাকতে চলেছে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মুখ। তখনই কর্নার থেকে বেলোর নিখুত গোল। আর ৮৭ মিনিটের এই গোলই গড়ল ইতিহাস।
সঞ্জয়ের ছেলেরা কিন্তু প্রথম থেকেই এ দিন জয়ের জন্য খেলছিলেন। প্রথম থেকেই লিগে কর্তৃত্ব করা বাগান শেষ দিকে একটু হোঁচট খেয়েছিল। দু’নম্বরের সঙ্গে ৮ পয়েন্টের ব্যবধান এক সময়ে দাঁড়ায় এক পয়েন্টে। রবিবারের সন্ধ্যা কিন্তু হতাশ করল না সঞ্জয়কে। কান্তিরাভা এমনিতেই সঞ্জয়ের পয়া মাঠ। এখানেই মহামেডানকে আই লিগ-২ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তিনি। আর এ বার একেবারে আই লিগ। সাতোরি-ওয়েস্টউড-মর্গান-করিমদের মতো বিদেশিদের ভিড়ে এক বাঙালি কোচের হাত ধরে বাংলার ক্লাবের ভারতসেরা হওয়া নিঃসন্দেহে এক অন্য তাৎপর্যের। লিগের মাঝামাঝি বাগানের এক কর্তা দাবি করেছিলেন, দল এ বার আই লিগ জিতবে।
একেবারে আই লিগ? যেখানে শেষ ছয় বছরে কোনও ট্রফি পায়নি বাগান। মুচকি হেসে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ক্লাব তাঁবুর আম গাছগুলোতে যে বছর ভাল ফলন হয়, সে বারেই দল ভাল খেলে।’’ রবিবারের পর বোধহয় আম গাছগুলোর যত্ন আরও বাড়বে। প্রতি বারই এমন ভাল ‘ফল’ চাই যে।