ভোট দিয়ে বেরিয়ে কিরণ বেদী। ছবি: রয়টার্স।
শনিবার নির্বিঘ্নেই শেষ হল রাজধানীর মসনদ দখলের লড়াই। প্রায় ৬৩.৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কোনও অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। রাজধানীর মসনদ দখল করতে এ বারের মূল লড়াই অরবিন্দদের ঝাড়ুর সঙ্গে মোদী-অমিতদের পদ্মের।
এ দিন একেবারে সকাল থেকেই ভোটারদের উত্সাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বুথগুলির সামনে দেখা যায় লম্বা লাইন। এক কোটি ৩৩ লক্ষ ভোটারের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে মোতায়েন করা হয় প্রায় ৬৪ হাজার পুলিশকর্মী। ১২ হাজার বুথের ৭১৪টিকে স্পর্শকাতর, এবং ১৯১টিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ৭০ আসনবিশিষ্ট দিল্লি বিধানসভায় ভাগ্য নির্ধারিত হবে মোট ৬৭৩ জন প্রার্থীর। অর্থাত্ কেন্দ্র প্রতি প্রায় ১০ জন। এর মধ্যে উত্তর দিল্লি কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রেকর্ড সংখ্যক, ১৮ জন। কিরণ-কেজরীবাল-মাকেন-শর্মিষ্ঠাদের নিয়ে হেভিওয়েটদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ছিলেন বিনোদ বিন্নিদের মতো বিদ্রোহীরাও।
এ বারের দিল্লির বিধানসভা ভোট মোদী-অমিত জুটির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। মোদী ম্যাজিক আর অমিত শাহের সাংগঠনিক ক্ষমতায় ভর করে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড থেকে জম্মু-কাশ্মীর— প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষাকে সত্যি প্রমাণ করে দাপটের সঙ্গে উড়েছে গেরুয়া পতাকা। কিন্তু কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম কোনও রাজ্যের ভোটে বেশির ভাগ নির্বাচনী সমীক্ষায় ‘সেকেন্ড বয়’ বিজেপি। পাল্লা ভারী আম আদমি পার্টি (আপ)-র দিকেই। মানুষকে সকাল সকাল ভোট দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে সব দলই। আর তাঁর ‘নবীন বন্ধু’দের রেকর্ড মাত্রায় ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোটারদের প্রতি তাঁর বার্তা, “আজ দিল্লি বিধানসভায় ভোট। ভোটারদের বিপুল সংখ্যায় ভোট দিতে আহ্বান করছি। আর বিশেষ করে আমার নবীন বন্ধুদের বলছি রেকর্ড সংখ্যায় ভোট দিতে।” তবে মোদীর ‘নবীন বন্ধু’-র সংখ্যাও কম নয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দিল্লিতে এ বারে শুধুমাত্র নতুন ভোটারের সংখ্যাই দেড় লক্ষ।
সকাল থেকেই ভোট উতসবে সামিল হয়ে যায় দিল্লি । ভোট দেন উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কিরণ বেদী, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী অজয় মাকেন, আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবাল, রাষ্ট্রপতি কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ মধ্য দিল্লির একটি বুথে গিয়ে ভোট দেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত, দিল্লি কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ সিংহ লাভলি এবং প্রাক্তন মন্ত্রী কিরণ ওয়ালিয়া। ভোট দিয়েছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীও। টানা ১৫ বছর দিল্লি শাসন করলেও এ বারে কংগ্রেসের কার্যত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। ভোট দিয়ে বেরিয়ে সনিয়ার বক্তব্য, ‘জনগণ যা চাইবে তাই হবে’-তে কংগ্রেসের অবস্থা যেন আরও স্পষ্ট। গত বারে ৪৯ দিনের আপ সরকারকে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু দল যে আর কোনও অবস্থাতেই আপকে সমর্থন করবে না, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেন। কিন্তু তাঁর দল যে এ বার একক ভাবেই ক্ষমতায় আসবে সে ব্যাপারে আশাবাদী আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবাল। ভোট দিয়ে বেরনোর পর তিনি বলেন, “সত্য জিতবে। জনগণ জিতবে। দুর্নীতি এবং মুদ্রাস্ফীতির হাত থেকে মুক্তি পেতে মানুষ আপকেই ভোট দেবে।” সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনের মধ্যে একটি মডেল বুথ পরিদর্শন করে যান খোদ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
১৬ বছর পর রাজধানীর বুকে পদ্মফুল ফোটে, না ঝাড়ুর দাপটে ঝড়ে যায়, সে দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।