২১৪টি কয়লাখনির বণ্টন বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট

২১৮টির মধ্যে ২১৪টি কয়লাখনির বণ্টন বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৯৩ থেকে ২০১০-এর মধ্যে এই খনিগুলিকে বণ্টন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বে মদন বি লোকুর এবং কুরিয়ন জোসেফ-- তিন সদস্যের এই বেঞ্চ বুধবারের রায়ে জানায়, দরপত্র না ডেকে কয়লাখনির মতো জাতীয় সম্পদকে বেআইনি ভাবে বণ্টন করা হয়েছে। শুধু বাতিল করাই নয়, যে সব সংস্থা এই কয়লাখনিগুলি পেয়েছিল তাদের এখনও পর্যন্ত উৎপাদিত মোট কয়লার টন-পিছু ২৯৫ টাকা করে জরিমানা ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৬:২৩
Share:

ছবি: পিটিআই

২১৮টির মধ্যে ২১৪টি কয়লাখনির বণ্টন বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ১৯৯৩ থেকে ২০১০-এর মধ্যে এই খনিগুলিকে বণ্টন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বে মদন বি লোকুর এবং কুরিয়ন জোসেফ-- তিন সদস্যের এই বেঞ্চ বুধবারের রায়ে জানায়, দরপত্র না ডেকে কয়লাখনির মতো জাতীয় সম্পদকে বেআইনি ভাবে বণ্টন করা হয়েছে।

Advertisement

শুধু বাতিল করাই নয়, যে সব সংস্থা এই কয়লাখনিগুলি পেয়েছিল তাদের এখনও পর্যন্ত উৎপাদিত মোট কয়লার টন-পিছু ২৯৫ টাকা করে জরিমানা ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এত প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা উঠবে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন। তবে এই পুরো কাজ শেষ করতে ছ’মাস সময় বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

এর আগের রায়ে কয়লাখনি বণ্টনের নীতিকে বেআইনি বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তখন কেন্দ্রের তরফ থেকে ৪৬টি খনির বণ্টন বাতিল না করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করা হয়। এই খনিগুলিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে বা শুরু হতে চলেছে বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানায় কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন মেনে না নিলেও, এই ৪৬টি সংস্থাকে আগামী ছ’মাসের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে। তবে বাতিলের তালিকা থেকে সাসান, আল্ট্রা মেগা প্রজেক্ট, এনটিপিসি এবং সেল-- এই চারটি সংস্থার কয়লাখনিকে বাদ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

Advertisement

রায়কে স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় আইন এবং টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘এই রায়ে আদালতের কাছে সরকারের করা হলফনামাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে। আমরা আগেই বলেছিলাম সব বণ্টন বাতিল হলে আমরা খুশি হব। এ বার আমরা নতুন ভাবে বণ্টন শুরু করতে পারব।’’ প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে জনতা দল ইউনাইটেডের নেতা শরদ যাদবের গলায়ও। তিনি বলেন, ‘‘এই রাযের পরে কয়লাখনি বণ্টন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নেতা, সরকারি অফিসার এবং অন্যদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’

এই রায়ে কিন্তু ভারতীয় অর্থনীতিতে আশঙ্কার মেঘ জমেছে। দু’বছর ধরে মন্দা চলার পরে ক্রমেশ সতেজ হচ্ছে ভারতীয অর্থনীতি। এই সময়ে এই রায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে বণিকসভা অ্যাসোচেম। সংস্থার সভাপতি রানা কপূর বলেন, ‘‘ভারতীয় অর্থনীতির চালিকশক্তি তাপবিদ্যুত্। ফলে কয়লার যোগান ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। এই রায়ে কয়লার রফতানি বৃদ্ধি পাবে।’’ কয়লা খনিগুলির পুনর্বণ্টনের কাজ সরকার দ্রুত শেষ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

১৯৯৩-২০১০-র মধ্যে দরপত্র ছাড়া ইস্পাত, কয়লা এবং বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে কয়লাখনি দেওয়া হয়েছিল। ২০১২-য় ভারতের ‘কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (ক্যাগ)-এর রিপোর্টে এই কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ্যে আসে। সেই রিপোর্টে এ ভাবে খনি বণ্টনে প্রায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে জানান হয়েছিল। সেই সময় কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই কয়লাখনিগুলির মধ্যে বেশ কিছু খনি বণ্টনের সময়ে কয়লামন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন মনমোহন সিংহ স্বয়ং। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠে। কিন্তু তখন কেন্দ্রীয় সরকার তার বণ্টন নীতির ভুল মানতে চায়নি। তা ছাড়া, ১৯৯৩ থেকে ২০১০-এর মধ্যে পাঁচ বছর অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্ব এনডিএ সরকার ক্ষমতায় ছিল। ফলে এই নীতি বিজেপিও মেনে নিয়েছিল বলে কংগ্রেস পাল্টা দাবি করে।

কিন্তু চলতি বছরের ২৫ অগস্টের রায়ে এই বণ্টনের প্রক্রিয়া অবৈধ বলে ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট। এ দিনের রায়ে ২০১৫-র মার্চের পরে খনিগুলির পুনর্বণ্টন করতে কেন্দ্রকে স্বাধীনতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, পুনর্বণ্টনের প্রক্রিয়াটি কী ভাবে হবে তা ঠিক করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কোনও প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করার পরামর্শও দিয়েছে কোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন