পিঠে ব্যাগ। সঙ্গে জলের বোতল। প্ল্যাটফর্মের একটি থামে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্যান্য যাত্রীদের মতই স্টেশনের টিভিতে দেখানো গানের ভিডিও দেখছিলেন ওই যুবক। মাঝে মাঝে টিভির গানের সঙ্গে নিজেও গুনগুন করে গান করছিলেন। কেউ ঘুনাক্ষরে বুঝতে পারেননি যে তাঁর মাথায় আত্মহত্যা করার কথা ঘুরছে।
মাষ্টারদা সূর্যসেন স্টেশনে তখন মেট্রোর রক্ষীরাও ছিলেন। তাঁরাও এদিক থেকে ওদিক ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। তাঁরাও বুঝেননি ওই যুবক এই কাণ্ড ঘটাতে পারে। ঘড়িতে তখন বিকেল তিনটে আটত্রিশ। দমদমমুখী একটি বাতানুকূল মেট্রো হুহু করে ঢুকছে স্টেশনে। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পরেই দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবক সকলের মাঝখান দিয়ে এক ছুটে ট্রেনের কাছে চলে যান। তারপরেই কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝাঁপ দেন মেট্রোর লাইনে। ঘটনাটি দেখে বুঝে অনেকই দৌড়েছিলেন পিছন পিছন। কিন্তু আটকাতে পারেননি তাঁকে। প্ল্যাটফর্মে ব্যাগটি রেখে গিয়েছিলেন তিনি। ওই ব্যাগটি ঘিরেই তখন জটলা শুরু হয়ে যায়। যাত্রীদের অনেকেই ওই যুবককে আত্মহত্যা করা থেকে ঠেকাতে না পেরে হাহুতাস করছিলেন।
মেট্রোর সূত্রের খবর, মেট্রোটি গতিতে প্ল্যাটফর্মে ঢুকছিল। তাই ঝাঁপ দেওয়ার বিষয়টি দেখেও চালক ট্রেন থামাতে থামাতে অনেকটা এগিয়ে যান। ফলে যুবকের দেহটি পড়ার পরে অনেকগুলি কামরা তার উপর দিয়ে চলে যায়। কিছুটা ভিতরে দেহটি এমন ভাবে আটকে গিয়েছিল যে বার করতে সময় লেগেছে। মেট্রো পুলিশ ও মেট্রো কর্মীরা অনেক চেষ্টা করে অবশেষে দেহটি বার করে আনেন। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র।
মেট্রো সূত্রের খবর, এই ঘটনার ফলে রবিবার বিকাল ৩-৩৮ মিনিট থেকে ৪-২০ পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। ওই সময় মেট্রো চলছে মহানায়ক উত্তম কুমার থেকে নোয়াপাড়া পর্যন্ত। দেহটি উদ্ধার করার পরে ফের টানা মেট্রো চলাচল শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত মেট্রোতে মোট ২৮৩ জন ঝাঁপ দিলেন। মৃত্যু হল এর অর্ধেক। বাকি অর্ধেক প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন বলে মেট্রো সূত্রে জানানো হয়েছে।