চলছে মহিলা ভোটারদের নাম নথিভুক্ত করার কাজ। ছবি: এএফপি।
তালিবানের হুমকি সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হল আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। তবে দু’একটি জায়গায় ছোটখাটো কয়েকটি হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তানের দক্ষিণে কোয়ালাত শহরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে রাস্তার ধারে বোমা ফেটে দু’জন পুলিশ কর্মী মারা গিয়েছেন। এই ঘটনায় দু’জন আহত হয়েছেন। দক্ষিণেরই লোগর প্রদেশে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণে চার জন ভোটার আহত হয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রয়োজনের তুলনায় ব্যালট পেপার কম থাকার অভিযোগও এসেছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ভুয়ো ভোটার কার্ড ব্যবহার করার জন্য বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে খবর, রিগিংয়ের অভিযোগে ৬ জন সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওমর দাউদজাই আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি ট্যুইটারে লিখেছেন, “আপনার ভোট দিয়ে হিংসাকে বর্জন করে শান্তিকে বেছে নিয়েছেন।”
২০০১ সালে তালিবানি শাসনের অবসানের পর টানা ১৩ বছর আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন হামিদ কারজাই। ২০০৯-এর নির্বাচনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। এ বার সংবিধান অনুযায়ী তিনি ভোটে দাঁড়াননি।এ দিন সকালে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের কাছাকাছি একটি কেন্দ্রে তিনি ভোট দেন। ভোট দিয়ে বেরিয়ে বলেন, ‘‘আফগানিস্তানের মানুষের কাছে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। ভবিষ্যতের দিকে এ এক বিরাট পদক্ষেপ। আফগানিস্তানের নাগরিক হিসাবে আমি গর্ব অনুভব করছি।’’ খারাপ আবহাওয়া ও তালিবানি চোখরাঙানি উপেক্ষা করে আফগানিস্তানের সব নাগরিককে ভোট দিতে আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচনের বিরোধিতা করে তালিবানরা ভোটকর্মী, ভোটার ও নিরাপত্তারক্ষীদের উপর হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল। নির্বাচনের আগে কাবুল-সহ আফগানিস্তান জুড়ে তালিবানরা একাধিক হামলাও চালায়। আক্রান্ত হয় নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরও। আক্রান্ত হন সাংবাদিক, বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও। দু’জন সাংবাদিকের মৃত্যুও হয়। ভোটের তদারকিতে আসা বেশির ভাগ বিদেশি পর্যবেক্ষক ফিরে গিয়েছিলেন। অবস্থা এমনই ছিল যে, অন্তত ১০ শতাংশ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোটই হবে না বলে নির্বাচন কমিশন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। তাই নির্বাচনের জন্য সারা দেশে ৪ লক্ষ নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়। বিশেষ এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয় সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাকে। রাজধানী কাবুলে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ পর্ব। চলে বিকাল ৪টে পর্যন্ত। ভোটারের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩৫ লক্ষ। টানা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে ভোট দেওয়ার জন্য সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলির বাইরে বেশ লম্বা লাইন পড়ে। নিজেদের প্রেসিডেন্ট বেছে নেওয়ার পরে প্রাদেশিক কাউন্সিলের জন্যও ভোট দিতে হবে নাগরিকদের। কারজাইয়ের উত্তরসূরি হিসাবে মূল লড়াই প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী জালমাই রসুল, ২০০৯-এর ভোটের দ্বিতীয় স্থানাধিকারী আবদুল্লা আবদুল্লা এবং আশরাফ ঘানির মধ্যে। ২৪ এপ্রিল ফল প্রকাশের পর যদি দেখা যায় কোনও পক্ষই ন্যূনতম ৫০% ভোট পাননি, তবে মে মাসে আবার ভোট নেওয়া হবে।