ছবি: টুইটার।
পাইলট মাজ আল-কাসাসবেহকে পুড়িয়ে মারার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জেলে বন্দি ইরাকের মহিলা জঙ্গি শাজিদা আল-রিসাওই-এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল জর্ডন। সঙ্গে ফাঁসি হল জঙ্গি জিয়াদ আল-কারবৌলি-রও। জর্ডনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এই হত্যার বদলা নিতে তাঁরা শীঘ্রই ইসলামিক স্টেট-এর (আইএস) জঙ্গিদের উপরে পাল্টা আঘাত হানতে চলেছে।
জাপানের পণবন্দি সাংবাদিক কেনেজি গোতোকে হত্যা করার কয়েক দিন পরেই মঙ্গলবার কাসাসবেহ-র হত্যার ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসে। ওই ভিডিও-য় দেখা যায়, খাঁচার মধ্যে বন্দি এক ব্যক্তির গায়ে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। আইএস জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি কাসাসবেহ। এর পরেই গোটা জর্ডন জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কাসাসবেহ জর্ডনের অন্যতম ক্ষমতাধারী গোষ্ঠীর সদস্য। সিরিয়ায় আইএস-এর উপরে বোমা ফেলতে গিয়ে এফ-১৬ বিমান ভেঙে পড়ে। ওই বিমানের পাইলট ছিলেন কাসাসবেহ। আইএস-এর হাতে বন্দি হন তিনি। কাসাসবেহর মুক্তির দাবিতে তাঁর গোষ্ঠীর নেতারা জর্ডনের রাজা আবদুল্লার উপরে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছিলেন। কাসাসবেহর বাবা-মায়ের সঙ্গে রাজা আবদু্ল্লা ছাড়াও জর্ডনের রানিও দেখা করেন। ক্ষমতাশালী ওই গোষ্ঠীকে খুশি করার জন্য বন্দি মহিলা জঙ্গি শাজিদাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে জর্ডন সরকার।
শাজিদা ২০০৫ থেকে জর্ডনের জেলে বন্দি ছিল। জর্ডনের রাজধানী আমানে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী আক্রমণ চালাতে গিয়েছিল শাজিদা ও তার স্বামী। দু’জনেই ইরাকের আল-কায়দার সদস্য ছিল। শাজিদার স্বামীর আত্মঘাতী বোমাটি ফাটলেও শাজিদারটি ফাটেনি। শাজিদার স্বামীর আত্মঘাতী ওই হামলায় ৫৭ জনের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় শাজিদা। পরে ধরা পড়ে সে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তার পর থেকে জর্ডনের জেলে বন্দি ছিল সে। শাজিদার বয়স ৪০-এর উপরে। কিনজো গোতো এবং কাসাসবেহকে মুক্তির বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় জর্ডন সরকার। কিন্তু, আলোচনার মাঝেই জটিলতা তৈরি হয়। এর পরে গত রবিবার, ইন্টারনেটে গোতোকে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই কাসাসবেহ-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। আইএস-এর কাছে কাসাসবেহ-এর বেঁচে থাকার প্রমাণ চায় জর্ডন সরকার। অন্য দিকে, রাজা আবদুল্লাকে নিয়েও জর্ডনের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। আমেরিকার নেতৃত্বে আইএস বিরোধী জোটে যোগ দেওয়া নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলতে থাকেন। কাসাসবেহকে মুক্ত করার দাবিতে জর্ডনের বিভিন্ন জায়গায় মিছিলও হয়। মঙ্গলবার রাতে কাসাসবেহর মৃত্যুর খবর আসার পরে আইএস-এর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়। অনেকে রাস্তায় নেমে আসেন। আইএস বিরোধী স্লোগান শোনা যায়।
এর কয়েক ঘণ্টার পরেই জর্ডন সরকার শাজিদা-সহ আর এক জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা ঘোষণা করে। বুধবার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য জঙ্গি জিয়াদ আল-কারবৌলি ইরাকে আল-কায়দার অন্যতম নেতা আল জারকায়োই-এর ঘনিষ্ঠ। ইরাকে আল-কায়দা গড়ে তোলায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কারবৌলিও-র মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ ছিল। দুই জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে প্রাথমিক ভাবে ক্ষোভ দমনের চেষ্টা করল জর্ডন সরকার। আইএস-এর সঙ্গে যুক্ত আরও চার জঙ্গিরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে বলে জর্ডন হুমকি দিয়েছে।
রাজা আবদুল্লা এখন আমেরিকা সফরে। কাসাসবেহর মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পরে মঙ্গলবার আমেরিকা থেকেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তিনি। বুধবার তাঁর জর্ডন ফেরার কথা। জর্ডনের জেলে বন্দি বাকি জঙ্গিদেরও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর করার দাবি উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি জর্ডনের সেনা আইএস-এর উপরে তীব্র আঘাত হানার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে জনতার দাবিতে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে জর্ডন সরকারকে বিরত থাকার বার্তা দিয়েছে মার্কিন সরকার।