গ্রাম-জঙ্গল ছাড়িয়ে শহরে হাতির হানা, যুবকের মৃত্যু

এই সময়ে শহরের মূল আকর্ষণ ‘বিষ্ণুপুর মেলা’ শুরু মঙ্গলবার থেকে। ঠিক তার আগের রাতেই বাঁকুড়ার ওই মন্দিরশহরে হানা দিল দলমার হাতি। তাদের তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙল। হাতি তাড়াতে গিয়ে মারা গেলেন এক যুবক। আবার ওই রাতেই বিষ্ণুপুর স্টেশন লাগোয়া রেলপথ পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেল দাঁতাল দলপতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:০৭
Share:

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতি। বিষ্ণুপুরে ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

এই সময়ে শহরের মূল আকর্ষণ ‘বিষ্ণুপুর মেলা’ শুরু মঙ্গলবার থেকে। ঠিক তার আগের রাতেই বাঁকুড়ার ওই মন্দিরশহরে হানা দিল দলমার হাতি। তাদের তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙল। হাতি তাড়াতে গিয়ে মারা গেলেন এক যুবক। আবার ওই রাতেই বিষ্ণুপুর স্টেশন লাগোয়া রেলপথ পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেল দাঁতাল দলপতি।

Advertisement

১০-১২টি হাতি সোমবার রাতে প্রথমে ঢোকে বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া যমুনাবাঁধ কলোনিতে। সেখান থেকে এলাকার মানুষের তাড়া খেয়ে রাত ৮টা নাগাদ রেলপথ পেরিয়ে ঢুকে হাতিগুলি ঢুকে পড়ে শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেজপাল এলাকায়। আগে কখনও এতো হাতি স্থানীয় বাসিন্দারা দেখেননি। ভয়ে বাড়ি ছেড়ে কেউ কেউ ঢুকে যান স্থানীয় স্কুলে বা ক্লাবের পাকা বাড়িতে। অনেকে আবার পড়শিদের পাকা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেন। হাতি ঢুকেছে খবর পেয়ে পাশের যমুনাবাঁধ কলোনি থেকে পড়শিদের সঙ্গে হাতি তাড়াতে এসেছিলেন খোকন দাস (৩৬)। আর সেটাই মারাত্মক ভুল হয়ে গিয়েছিল। আচমকাই হাতির পালের সামনে পড়ে যান খোকন। তাঁকে তাড়া করে শুঁড়ে আছড়ে পিষে মারে একটি দাঁতাল। সঙ্গীরা গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোকনের মৃত্যু হয়।

এর পরেই বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। তেজপাল এলাকার বাসিন্দা ঘনশ্যাম লোহার, অসিত লোহার বলেন, “স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরাই আমাদের উদ্ধার করে ওদের ক্লাবে আশ্রয় দিয়েছিল রাতে। শেষ পর্যন্ত ওরাই পটকা ফাটিয়ে, খড়ের আগুন জ্বালিয়ে হাতিগুলোকে তাড়িয়েছে। কিন্তু, গোটা রাতে বনকর্মীদের দেখা মেলেনি।” বন দফতরের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ প্রশাসনও। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “বন দফতরকে সতর্ক করে বলেছিলাম, সামনে মেলা। শহরে প্রচুর মানুষের সমাগম হবে। তা ছাড়া, জনবহুল এলাকাগুলিতে কোনও ভাবে হাতির দল ঢুকে পড়লে তা হবে আরও মারাত্মক! তাই, দ্রুত শহরের রেলপথ লাগোয়া জঙ্গল থেকে হাতির দলটিকে সরানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল বন দফতরকে।” তাঁর ক্ষোভ, “ওই নির্দেশ আদৌ মানা হয়নি। না হলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না। আমি এ বিষয়ে বন কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।”

Advertisement


ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত সেই হাতিটি। ছবি: শুভ্র মিত্র।

তেজপাল মাঠের বাঁ দিকে বাউরিপাড়ার পাশ দিয়েই গিয়েছে রেললাইন। হাতির দল এলাকা ছাড়ার সময় কোনও মালগাড়ির ধাক্কায় একটি দাঁতাল মারা যায়। গ্রামবাসীরা জানান, ভোর পাঁচটা নাগাদ তাঁরা ট্রেনের সঙ্গে কোনও কিছুর ধাক্কার শব্দ পান। সঙ্গে সঙ্গে হাতির চিৎকার। এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, হাতির দেহটিকে ঘিরে ব্যাপক ভিড়। সাইকেল-মোটরবাইক-গাড়ি নিয়ে সপরিবার ভিড় জমিয়েছেন শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। আশপাশের গ্রামের লোকেরাও হাজির। বাঁশ দিয়ে দেহটিকে ঘিরে রেখেছেন বনকর্মীরা। বন দফতরের ডিএফও (বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত বনবিভাগ) কুমার বিমল বলেন, “প্রায় সাড়ে আট ফুট উচ্চতার এই দাঁতালটিই সম্ভবত দলপতি ছিল। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দাঁত কেটে রেখে ময়না-তদন্তের পর মাটি খুঁড়ে এখানেই নুন, ব্লিচিং ফেলে সমাহিত করা হবে।”

এলাকার মানুষ অবশ্য সেখানে হাতিটিকে পুঁততে বাধা দিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, এখানে হাতির দেহ পুঁতলে বাকি দল ফের এসে হামলা চালাবে। বিরোধিতার মুখে পড়ে বন দফতর হাতিকে কেটে দফতরের নিজস্ব এলাকায় নিয়ে গিয়ে পোঁতার ব্যবস্থা করছে। যে পশু চিকিৎসক হাতিটির ময়নাতদন্ত করেছেন, সেই জগন্নাথ মান্না জানিয়েছেন, হাতিটির মাথায় গুরুতর চোট রয়েছে। ট্রেনের ধাক্কাতেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন