সাময়িক যুদ্ধবিরতির সুযোগে ব্যাঙ্কের সামনে প্যালেস্তিনীয়দের ভিড়। ছবি: এএফপি।
গাজায় হামলা থামাতে পেশ হল নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব। বৃহস্পতিবার মিশরের কায়রো থেকে এমনই দাবি করেছেন ইজরায়েলি প্রতিনিধি দলের এক সদস্য। জানা গিয়েছে, নতুন প্রস্তাব অনুসারে শুক্রবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। তবে এর মধ্যেই গাজায় লাগাতার ইজরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৭। দশ দিনের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে এক ইজরায়েলিরও।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রসঙ্ঘের আবেদনে সাড়া দিয়ে ভারতীয় সময় সাড়ে ১২টা থেকে দু’পক্ষ পাঁচ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি পালন শুরু করে। যুদ্ধবিরতির পরেই গাজা থেকে রকেট ছোড়া হয়েছে বলে ইজরায়েলের অভিযোগ। তবে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও গাজা থেকে মর্টার হামলা চালানো হয়েছে বলে ইজরায়েল অভিযোগ করেছে। গাজা থেকে হামাসের রকেট হামলা থামাতে দশ দিন আগে ‘অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ’ শুরু করে ইজরায়েল। চলে লাগাতার বিমান আক্রমণ। লাগাতার হামলার পরেও কিন্তু গাজা থেকে হামাসের রকেট হামলা বন্ধ করা যায়নি। ইজরায়েলি হামলায় গাজার দুশোরও বেশি বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক বলে রাষ্ট্রসঙ্ঘ জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে প্রবীণ, নারী, শিশু, এমনকী প্রতিবন্ধীরাও রয়েছেন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাজার নাগরিক পরিষেবা।
ইজরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের জীবনযাপনের প্রাথমিক রসদ সংগ্রহের জন্য দু’পক্ষের কাছে যুদ্ধবিরতির আবেদন করে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। আবেদনে সাড়া দেয় দু’পক্ষই। এর মধ্যেই আসে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সংবাদ। যদিও সেই যুদ্ধবিরতি আদৌ সম্ভব হবে কি না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিন যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজার বাসিন্দারা রসদ সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন। ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। লাইন পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানেও। জনশূন্য রাজপথে গাড়ির ভিড় শুরু হয়। এমনই এক লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাজার বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের জাকারিয়া আহমেদ। তিনি বলেন, “মাইনে তুলতে এসেছি। এই শান্তির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আশা করি মিশরের চেষ্টায় এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে। সীমান্ত খুলে দেওয়া হবে।” যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে দক্ষিণ গাজায় এ দিন ভোরে সুড়ঙ্গ দিয়ে জঙ্গিরা ইজরায়েলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। ইজরায়েলি সেনার আক্রমণে তাদের মৃত্যু হয়।
এর আগে মিশরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল হামাস। তাঁদের মতে, প্রস্তাবটি মানা ছিল আত্মসমর্পণের সামিল। হামাস অবিলম্বে ইজরায়েলি হামলা বন্ধ, সীমান্ত খুলে দেওয়া ও ইজরায়েলি জেলে বন্দিদের মুক্তির দাবি তোলে। ফলে হামাসের রকেট হামলা চলতে থাকে। জবাব দেয় ইজরায়েলও। বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা। এর মধ্যে বুধবার গাজার সৈকতে ইজরায়েলি হামলায় চার জন কিশোরের মৃত্যু হয়। তাদের পরিবারের দাবি, সৈকতে ফুটবল খেলার সময়ে ইজরায়েলি হামলায় এদের মৃত্যু হয়। হামাস এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিযোগ করে। ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে বলে ইজরায়েলি সেনা সূত্রে জানান হয়েছে।