বাদাকশানের আর্গো জেলায় ধসে ভেঙে পড়েছে আস্ত একটি বাড়ি। ছবি: রয়টার্স।
অবিরাম বৃষ্টি ও সেই সঙ্গে প্রবল ধসে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে মৃত্যু হল অন্তত ৩৫০ জনের। নিখোঁজ দু’হাজারেরও বেশি। ধসের কারণে ধূলিসাত্ হয়ে গিয়েছে এলাকার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি বাড়ি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের বাদাকশান। মাটি ও পাথর সরিয়ে প্রাথমিক ভাবে উদ্ধারকার্য শুরু করে বাদাকশান প্রদেশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। শনিবার তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আফগান সেনা ও ন্যাটো। মৃতদের উদ্দেশে সমবেদনা জানিয়ে এ দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘‘আফগানিস্তানের যে সব মানুষ এই ভয়াবহ দুর্যোগের সামনে পড়েছেন আমরা তাঁদের সঙ্গে আছি। বিপর্যয় মোকাবিলায় আফগানিস্তানকে সব রকম ভাবে সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।” প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই জানান, যুদ্ধকালীন তত্পরতায় উদ্ধারকার্য শুরু করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি ধসতে শুরু করে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাদাকশান। আফগানিস্তানের ডেপুটি গভর্নর গুল মহম্মদ বায়দার এ দিন জানান, প্রথমবার ধসের পরেই উদ্ধারকার্যে ছুটে যান গ্রামবাসীরা। কিন্তু ঠিক এক ঘণ্টার মধ্যেই ফের ধস নামে গোটা এলাকায়। দ্বিতীয় বার ধস নামার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আব বারিক নামে একটি গ্রামের। সেই সময় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই প্রার্থনার জন্য মসজিদগুলিতে জড়ো হয়েছিলেন। ধসে গ্রামের মধ্যে আস্ত একটি পাহাড় ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। পাথরের চাঁই নেমে ধূলিসাত্ হয়ে যায় দু’টি মসজিদ। ফলে প্রথম বারের ধসের কারণে আটকে পড়া মানুষগুলিকে উদ্ধার করতে গ্রামবাসীদের মধ্যে যাঁরা ছুটে এসেছিলেন দ্বিতীয় বারের এই বিপর্যয়ে আটকে যায় গোটা দলটিই। আফগানিস্তানের গভর্নর শাহ ওয়ালিউল্লাহ আদিব এ দিন বলেন, “প্রাথমিক অনুসন্ধান ও গ্রামবাসীদের থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে অনুমান করা হচ্ছে ধসের কারণে মহিলা ও শিশু মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়াতে পারে।”
আর্গো জেলায় উদ্ধারকার্য চালাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। ছবি: রয়টার্স।
আফগান জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক সায়েদ আবদুল্লাহ হুমায়ুন দেকান বলেন, “ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারেরও বেশি পরিবার। ৭০০টি পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পাঠানো হয়েছে। এখনও খোঁজ মিলছে না অন্তত ৩০০টি পরিবারের দু’হাজারেরও বেশি সদস্যের। পাথর সরিয়ে মাত্র তিনটি দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।” ফের ধস নামার আশঙ্কায় নিকটবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রপুঞ্জ সূত্রে খবর, ধসে আটকে পড়া পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকার্য। আফগান পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা ফাজিলুদ্দিন হায়ার এ দিন জানান, সাত জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে খুব দ্রুত মাটি সরিয়ে আটকে পড়া আরও কিছু মানুষকে উদ্ধার করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
তাজাকিস্তান, চিন ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী পাহাড়ে ঘেরা বাদাকশান এমনিতেই ধসপ্রবণ এলাকা। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিকের কথায় গত সপ্তাহে এই প্রদেশের অন্যান্য জেলায় বন্যা ও ধসের কারণে অন্তত চার জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং আট জন এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ।