ডাইন অপবাদে মারধর, আত্মঘাতী মহিলা

বিচারসভা বসিয়ে একই গ্রামের তিন মহিলাকে ডাইনি অপবাদে লাঠিপেটা করা হয়েছিল। জানগুরু বিধান দিয়েছিলেন, গয়ায় নিয়ে গিয়ে ওই তিন মহিলার ‘দোষ’ কাটাতে হবে। তার জেরেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেন এক মহিলা। এক জন গ্রাম ছেড়ে পালালেন।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ২০:৫৭
Share:

বিচারসভা বসিয়ে একই গ্রামের তিন মহিলাকে ডাইনি অপবাদে লাঠিপেটা করা হয়েছিল। জানগুরু বিধান দিয়েছিলেন, গয়ায় নিয়ে গিয়ে ওই তিন মহিলার ‘দোষ’ কাটাতে হবে। তার জেরেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেন এক মহিলা। এক জন গ্রাম ছেড়ে পালালেন। আর যিনি একঘরে হয়ে গ্রামে থেকে গিয়েছেন, তিনি আশ্রয় নিয়েছেন বাড়ির পিছনের ঝোপে।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে নেদাবহড়া অঞ্চলের কুসুমডাঙা গ্রামের ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পরে গিয়েছে। এলাকাটি এমন কিছু প্রত্যন্ত নয়। গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ রয়েছে। পাঁচশো মিটারের মধ্যে আঁধারিশোলে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর চার কিলোমিটার দূরে পুকুরিয়ায় রয়েছে হাইস্কুল। তা সত্ত্বেও জঙ্গলঘেরা কুসুমডাঙায় অশিক্ষা আর কুসংস্কারের আঁধার যে ঘোচেনি এই ঘটনাই তার প্রমাণ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, তিন মহিলাকে মারধরের ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার সকালে। মাতব্বরে জানিয়ে দেন, দোষ না কাটানো পর্যন্ত ডাইন হিসেবে চিহ্নিত তিন মহিলাকে একঘরে করে রাখতে হবে। পুলিশ-প্রশাসনে জানালে তাঁদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় কীটনাশক খান ওই তিন মহিলার এক জন কিরণ খিলাড়ি (৪৫)। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে। এর পর সোমবার ঝাড়গ্রামের বিডিও অনির্বাণ বসুর কাছে লিখিত ভাবে সব জানান কিরণের বৃদ্ধা মা সুরুবালা খিলাড়ি। মেয়ের পারলৌকিক কাজের জন্য অর্থসাহায্যও চান তিনি। স্বামী পরিত্যক্তা কিরণই দিনমজুরি করে বাবা-মায়ের দেখভাল করতেন।

Advertisement

ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত নেদাবহড়া পঞ্চায়েতের প্রধান সোমবারি সরেন। তাঁর বক্তব্য, “বৃহস্পতিবার কুসুমডাঙায় তিন মহিলাকে মারধর করা হয়েছিল বলে শুনেছি। এক মহিলা পরে আত্মহত্যা করেছেন বলেও খবর পেয়েছি।” তা হলে আপনি কিছু করেননি কেন? প্রধানের দায়সারা জবাব, “আমার কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি।” সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের বিডিও অনির্বাণ বসু কুসুমডাঙায় গিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলেন। বিডিও বলেন, “গ্রামের সবাইকে ডেকে বুঝিয়েছি, ডাইনি বলে কিছু নেই। ওই গ্রামে কুসংস্কার বিরোধী সচেতনতা প্রচার করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন