বদগামে ভোটের লাইন। ছবি: গেটি ইমেজ।
তৃতীয় দফার নির্বাচনে জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় ৫৮ শতাংশ ভোট পড়ল। ঝাড়খণ্ডে পড়ল ৬১ শতাংশ।
সকাল থেকে জম্মু-কাশ্মীর এবং ঝাড়খণ্ডে ভোটের লাইনে সাধারণ মানুষের উত্সাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। মঙ্গলবার তৃতীয় দফার ভোট হয় এই দুই রাজ্যে।
জম্মু-কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু, তা উপেক্ষা করে প্রথম দু’দফায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন উপত্যকাবাসী। এ দিনও তৃতীয় দফার ভোটে সেই উত্সাহ চোখে পড়েছে।
গত দু’দফাতেই জম্মু-কাশ্মীরে গড়ে ভোট পড়ে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। এরই মধ্যে গত শুক্রবার রাজ্যের চার জায়গায় জঙ্গি হামলা হয়। তাতে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ২১। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্রীনগরের এক নির্বাচনী সভায় বুলেটকে উপেক্ষা করে ব্যালটে ভরসা রাখার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আর সেই আবহেই এ দিন উপত্যকার ১৬টি কেন্দ্রে বিধানসভা নির্বাচন হয়।
বিদায়ী সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা-সহ তাঁর মন্ত্রিসভার অন্য তিন সদস্যের ভাগ্য নির্ধারিত হয় এ দিন। এ ছাড়াও ভোট ময়দানে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৪৪। এ দিন বদগাম, পুলওয়ামা, বারামুলা জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ছিলেন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৫টায়। এর পর বাকি রয়েছে আরও দু’দফার ভোটগ্রহণ। গণনা হবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর।
এ দিন যে তিন জেলায় ভোটগ্রহণ হয়, গত সপ্তাহের জঙ্গি হামলার পরে প্রশাসন সেই তিন জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ দিন কড়া নজরে রাখা হয়েছিল উরি এবং ত্রাল কেন্দ্র দু’টিকেও। অন্য দিকে, কাশ্মীরে জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্তের জন্য সরাসরি মোদীকেই নিশানা করে তোপ দেগেছিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। সন্ত্রাস মোকাবিলা নিয়েই কার্যত একই সুর শোনা গিয়েছে কাশ্মীরের শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স, বিরোধী পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র গলাতেও। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় বদগাম, পুলওয়ামায় কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এ দিন তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ চলে ঝাড়খণ্ডেও। রাঁচি, বোকারো, হজারিবাগ, কোডারমা, গিরিডি-সহ আটটি জেলার ১৭টি আসনে নির্বাচন হয়। এ দিনের ভোটে ভাগ্য নির্ধারণ হয় ২৮৯ জন প্রার্থীর। তারকা প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডি। আট জন বিদায়ী বিধায়কের পাশাপাশি ভোট ময়দানে ছিলেন ২৬ জন মহিলা প্রার্থীও। দ্বিতীয় দফায় এই রাজ্যে ভোট পড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। এ দিন ১৭টি আসনেই সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও, ১৪টিতে ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হয়ে যায় বেলা ৩টেয়। মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তার প্রয়োজনে এমন সিদ্ধান্ত বলে প্রশাসনিক সূত্রে খবর। বাকি তিনটি আসন— রাঁচি, হাতিয়া এবং কাঁকেতে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ দিনের এই ভোটপর্ব ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন তিন ধরনের পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে।
এ দিন ঝাড়খণ্ডের গিরিডি এবং শ্রীনগরের বারামুলায় ভোট শুরুর আগে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে খবর, গিরিডির ধানবার বিধানসভা কেন্দ্রের কেন্দুয়া পাহাড়িতে সকাল ৬টা নাগাদ কয়েক জন মাওবাদী হামলা চালায়। পাল্টা জবাব দেয় পুলিশ। প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দু’পক্ষের গুলি বিনিময় চলে। তবে এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্য দিকে রাজ্যের ইছাগড়ে বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার বিরুদ্ধে।
শ্রীনগরের বারামুলায় একটি বুথে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি পেট্রল বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে প্রশাসন।