বিজেপির-র তথাগত রায়ের সঙ্গে পুলিশকর্মীদের বচসা। রবিবার ছবি তুলেছেন বিশ্বজিত্ রায়চৌধুরী।
মাখড়ায় ফের পুলিশের বাধার মুখে বিজেপি। তবে ধস্তাধস্তি নয়, পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এ দিনের অভিযান। রবিবার দুপুর ২টো নাগাদ বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল ওই গ্রামে পৌঁছয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল গ্রামবাসীদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিলি করা। কিন্তু ব্রাহ্মণডিহির কাছে ওই প্রতিনিধিদলকে আটকে দেয় পুলিশ। তাদের বিলি করতে দেওয়া হয়নি ত্রাণসামগ্রীও। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট কাটানোর পর মাখড়া থেকে বেরিয়ে আসে বিজেপির প্রতিনিধি দলটি। তথাগতবাবু বলেন, “আমরা গ্রামবাসীদের জন্য ২-৩ লরি ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছিলাম। শান্তি ব্যাহত হওয়ার কারণ দেখিয়ে পুলিশ আমাদের আটকে দেয়।” পুলিশকে তৃণমূলের ‘গৃহভৃত্য’ বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
গত ৩০ অক্টোবর বিজেপির কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি-সহ বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব মাখড়ায় যান। ১৪৪ ধারার কারণ দেখিয়ে মাখড়ায় ঢোকার আগেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।
গত ২৭ অক্টোবর এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে মাখড়ায় যে রক্ত ঝরেছিল তার পর থেকেই এলাকায় প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে ময়দানে নামে পুলিশ। ১৪৪ ধারা জারি করে মাখড়া, চৌমণ্ডলপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামকে কার্যত ‘বিচ্ছিন্ন’ করে দেয় পুলিশ প্রশাসন।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় বাম-বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা মাখড়ায় যান। কিন্তু তাঁদের গ্রামে ঢুকতে না দিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
শনিবার অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল মাখড়ার উদ্দেশে রওনা হয়। চৌমণ্ডলপুরের এক কিলোমিটার আগে থেকে মিছিল করে তাঁরা মাখড়া গ্রামে ঢুকতে গেলে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। বাধা পেয়ে পথেই বসে পড়ে কংগ্রেস প্রতিনিধি দল। পুলিশের এ রকম ‘আচরণে’ ক্ষুব্ধ হয়ে অধীরবাবু হুঁশিয়ারি দেন আগামী সাত দিনের মধ্যে ১৪৪ ধারা না তুললে রাজ্যের সমস্ত কংগ্রেস কর্মীকে হাজির করাবেন মাখড়ায়।
বার বার কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে বিরোধী দলগুলিকে— প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক মহলে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাম জমানায় নন্দীগ্রামের ঘটনার পরে শাসকদল ‘অবরুদ্ধ’ করে দেওয়ার যে পন্থা অবলম্বন করেছিল, তৃণমূলও সেই পথেই হাঁটা শুরু করেছে।
গত ২৭ অক্টোবর বিজেপি প্রভাবিত মাখড়া গ্রামে তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ ওঠে তারা শাসক দলের আশ্রিত। মাস্কেট, বোমা নিয়ে আক্রমণ করে গ্রামবাসীদের। ভাঙচুর ও লুঠপাট চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বেশ কয়েকটি বাড়িতে। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের ঘটনায় নিহত হন তিন জন। গুরুতর আহত হন আরও দু’জন। দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ যায় শেখ তৌসিফ নামে ১৯ বছরের এক তরুণের। পরে হাসপাতালে মারা যান শেখ সোলেমান ও শেখ মোজাম্মেল নামে দুই তৃণমূলকর্মী। মাখড়ার ঘটনার ঠিক দু’দিন আগেই পাড়ুইয়ের মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের চৌমণ্ডলপুর গ্রামে বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পরই ইলামবাজার ব্লকের মঙ্গলডিহি ও বাতিকা পঞ্চায়েতে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। মাখড়া মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হওয়ায় সেখানেও ১৪৪ ধারা চলছিল।