বিক্ষিপ্ত অভিযোগ নিয়েই ভোট মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ১৭:০৭
Share:

মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণে বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠল।

Advertisement

বুধবার সকাল থেকেই বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন জায়গায়। নারায়ণগড়ে বিভিন্ন বুথ দখল হয়ে যাওয়া এবং ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তোলে সিপিএম। নারায়ণগড় থানার ওসি-র নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের অভিযোগ।

অন্য দিকে, রাধানগর আদর্শ বিদ্যাপীঠে এক সিভিক পুলিশকে মারধরের ঘটনায় ওই বুথে প্রায় আধ ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, বুথের কাছাকাছি একটি বেআইনি মদের ভাটিতে এ দিন সকালে কয়েক জন বসে মদ খাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ভাটিতে অভিযান চালায়। যদিও তারা যাওয়ার আগে সবাই পালিয়ে যায়। ঘটনার পর পরই ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন সিভিক পুলিশের কর্মী গুরুপদ পণ্ডা। তাঁর বাড়ি বেলদায়। তিনিই পুলিশে খবর দিয়েছেন, এই অভিযোগ তুলে গুরুপদকে বেধড়ক মারধর করে ভাটিতে থাকা লোকজন। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরই দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে তৃণমূল ওই বুথে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। তাদের অভিযোগ, গুরুপদকে যারা মেরেছে, তারা প্রত্যেকেই সিপিএমের সমর্থক। প্রশাসনের তরফে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেওয়া হলে ভোটগ্রহণ ফের চালু হয়।

Advertisement

অন্য দিকে, খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার বরকলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অজবপুর গ্রামে একটি বুথে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র (ইভিএম) ভেঙে যাওয়ায় প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পুলিশ সূত্রে খবর, মদ্যপ অবস্থায় ভোট দিতে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। অসাবধানতাবশত তাঁর হাতে লেগে পড়ে ভেঙে যায় ইভিএমটি। বুথের প্রিসাইডিং অফিসার জানিয়েছেন, প্রায় ৩৫০টি ভোট পড়েছিল ওই মেশিনে। নতুন ইভিএমের ব্যবস্থা করার ঘণ্টাখানেক পর ফের ভোটগ্রহণ শুরু হয় ওই বুথে।

ভোট দিতে গিয়ে এ দিন বিক্ষোভের মুখে পড়েন মেদিনীপুর কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী তথা এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ প্রবোধ পণ্ডা। শহরের চার্চ স্কুলের বুথে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। যে গাড়িতে করে প্রবোধবাবু গিয়েছিলেন তার উইন্ডস্ক্রিনে ‘মেম্বার অফ পার্লামেন্ট’ লেখা স্টিকার লাগানো কেন, এই প্রশ্ন তুলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। ওই স্টিকার ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি তাঁর গাড়ির চাবিও কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিরোধীদের তোলা প্রশ্নের উত্তরে প্রবোধবাবু বলেন, “যত ক্ষণ না ভোটের ফলাফল প্রকাশ পাচ্ছে, তত ক্ষণ আমি সাংসদ। কাজেই আমার গাড়িতে ওই স্টিকার আইনসম্মত ভাবেই লাগানো রয়েছে।” যদিও পুলিশি হস্তক্ষেপে প্রবোধবাবু ভোট দিয়ে গাড়ি নিয়ে ওই বুথ চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যান।

কেশিয়াড়ির ভসড়ায় এ দিন বুথ দখলের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা ওই বুথে পৌঁছলে তাঁদের মারধর করার পাশাপাশি ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনী দূরের কথা, ঘটনাস্থলে কোনও পুলিশ কর্মীও ছিলেন না বলে অভিযোগ। কেশিয়াড়ির বিডিও-র কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

শাসক দলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের বামফ্রন্ট প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কে। তাঁর অভিযোগ, গড়বেতার ৬৩টি বুথ এবং শালবনির ৩৩টি বুথ দখল করে নেয় তৃণমূল। তাঁর কথায়: “বুথ দখল করে প্রত্যেকটা জায়গাতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তৃণমূল। আর কমিশন এ ক্ষেত্রে নির্বাক দর্শক।” তাঁর অভিযোগ, ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত গোপীবল্লভপুরেও ব্যাপক ছাপ্পা ভোট দিয়েছে শাসকদল। তিনি জানান, মাওবাদী প্রভাবিত নয় এমন এলাকায় ভোটারদের প্রভাবিত করেছে সিভিক পুলিশ। প্রতিটি বিষয় নিয়েই নির্বাচন কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন পুলিনবাবু।

এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ নারায়ণগড়ের খাকুড়দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি পৌঁছনোর আগেই বিশাল জমায়েত হয় বুথের বাইরে। পুলিশ যদিও সেই জমায়েত হঠিয়ে দেয়। ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে সূর্যকান্তবাবু বলেন, “বাধা উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছে। এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বুথ থেকে। তবুও মানুষ ভোট দিতে গিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন