—ফাইল চিত্র।
পিঠের টিউমার নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই ভর্তি ছিলেন বেসরকারি হাসপাতালে। বুধবার পর্যন্ত ছিলেন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই। কিন্তু বৃহস্পতিবার নিজেই বুঝলেন তাঁর মেডিক্যাল বোর্ডের প্রয়োজন। সেই ‘প্রয়োজন’-এর তাগিদেই এসএসকেম-এ ভর্তি হলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। এবং গেলেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে। এতটাই গোপন এবং দ্রুত ছিল তাঁর এই হাসপাতাল ত্যাগ-পর্ব, যে বাড়ি থেকে আনা খাবার না খেয়ে, অপেক্ষারত অতিথিদের সঙ্গে দেখা না করেই চলে যান তিনি। হাসপাতাল ছাড়ার ঘণ্টাখানেক পরে জানা যায় তিনি এসএসকেএম-এ ভর্তি হয়েছেন। তখনও ওই বেসরকারি হাসপাতালের কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী।
এসএসকেএম-এ উডবার্ন ওয়ার্ডে আপাতত ভর্তি হয়েছেন মদন মিত্র। মন্ত্রী হাসপাতালে পৌঁছতেই ওই ওয়ার্ডে দেখা যায় চুড়ান্ত তত্পরতা। গেটে তালা লাগিয়ে নিয়ন্ত্রিত করা হয় ওই ওয়ার্ডে সাধারণের যাতায়াত। দীর্ঘ দিন ধরেই এসএসকেএম-এর রোগী ভর্তি সমিতির মাথায় রয়েছেন মদনবাবু। বিরোধীদের মন্তব্য, নিজের ‘গড়’-এ থেকে সিবিআই-এর মোকাবিলা করতেই পরিবহণমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ।
সারদা কাণ্ডে পরিবহণমন্ত্রীকে জেরা করা হবে জানিয়ে ক’দিন আগেই নোটিস পাঠিয়েছিল সিবিআই। শুক্রবারের মধ্যে দেখা করতে বলা হয় তাঁকে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি থাকায় তাঁর পক্ষে যে এখনই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দফতরে গিয়ে দেখা করা সম্ভব নয় তা জানিয়ে দেওয়া হয়। গত রবিবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মদনবাবু। এমআরআই, এক্স রে-সহ একাধিক পরীক্ষা করা হয় তাঁর। করা হয় ইসিজি এবং আরও বেশ কিছু রুটিন পরীক্ষা। জেনারেল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ফুসফুস বিশেষজ্ঞ, হৃদ্রোগ, স্নায়ু এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরা দফায়-দফায় তাঁকে পরীক্ষা করেন। প্রাথমিক ভাবে এমআরআই রিপোর্ট দেখে অবশ্য টিউমারটি তেমন মারাত্মক নয় বলেই মনে হয়েছিল চিকিত্সকদের। হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রয়োজন হলে তাঁর জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হবে। কিন্তু এত কিছুর পরেও পরিবহণমন্ত্রীকে ‘আটকে’ রাখতে পারলেন না চিকিত্সকেরা।
মেডিক্যাল বোর্ড যখন গঠন করার জন্য তৈরিই ছিলেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, তবে কী কারণে তাঁর এই এসএসকেএম গমন? শুধুই কি চিকিতসার সুবিধার জন্য? বিরোধীদের কটাক্ষ, সারদা কাণ্ডে সিবিআইয়ের জেরা থেকে বাঁচতেই সরকারি ‘ছত্রছায়া’য় চলে গেলেন মন্ত্রী। “হয়তো সরকারি হাসপাতালে গেলে তাঁর ‘সঠিক’ অস্ত্রোপচার হবে। কেন ভয় পাচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী? এ ভাবে সিবিআইকে এড়ানো সম্ভব নয়।”— মন্তব্য কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের। এক ধাপ এগিয়ে সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “যে কোনও মুহূর্তে পালিয়ে যেতে পারেন মন্ত্রী। সিবিআইয়ের উচিত এখনই তাঁকে গ্রেফতার করা।” তাঁর এই হাসপাতাল ত্যাগকে ‘বাঁচার মরিয়া চেষ্টা’ বলে অভিমত কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের।