বসিরহাটে এক তৃণমূল কর্মীকে বোমা মেরে জখম করার পরে তাঁকে গুম করার অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরঘোলা গ্রামের কাছে। পুলিশ জানায় নিখোঁজ ওই কর্মীর নাম গফফর মণ্ডল। তাঁর বাড়ি বসিরহাটের ঘোড়ারাস গ্রামে। ঘটনায় স্থানীয় কংগ্রেস উপপ্রধান হামিদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন গফফরের বাড়ির লোকজন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গফফর মাছের ভেড়ির ব্যবসা করতেন। এ ছাড়া এলাকায় আরও কয়েকটি মাছের ভেড়ি দেখাশোনার দায়িত্বও ছিল তাঁর উপর। বৃহস্পতিবার রাতে রফিউল মণ্ডল নামে এক জন সঙ্গীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে হাড়োয়ার আমতা বাজারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁর পরিবারের লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কংগ্রেস উপপ্রধান হামিদ বিশ্বাস ও আরও কয়েক জন স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী তাঁদের বাড়িতে আসেন। তাঁরাই গফফরকে ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে বাইরে ডেকে নিয়ে যান।
গফফরের সঙ্গী রফিউল জানান, ওই দিন কয়েকটি মোটরসাইকেলে তাঁরা ও হামিদ হাড়োয়ায় মাছের ব্যবসার কথা বলতে যান। ফেরার পথে উত্তরঘোলা গ্রামের উত্তরপাড়ার কাছে ৮-১০ জনের একটি দল তাদের পথ আটকায়। তার ও গফফরের মোটরসাইকেল লক্ষ করে বোমা ছুড়তে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। কয়েক রাউন্ড গুলিও চলে। বোমা ছুঁড়তে দেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান হামিদ ও বাকি কংগ্রেস কর্মীরা। পাশেই একটি বাড়ির পাঁচিলের আড়ালে লুকিয়ে গোটা ঘটনাটি দেখেন তিনি। তাঁর কথায়, প্রথমে তাঁদের মোটরসাইকেলটিকে পাশের বিদ্যাধরী নদীর জলে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। তার পরেই গফফরকে টানতে টানতে নিয়ে যায় নদীর দিকে। লুকিয়ে পড়লেও বোমার আঘাতে তাঁর বাঁ চোখ গুরুতর জখম হয়েছে বলে জানিয়েছেন রফিউল।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বসিরহাট ও হাড়োয়া থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশ জানায়, নদীর ধারে চাপ চাপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এ ছাড়া তিন জোড়া জুতো ও জামার ছেঁড়া টুকরো পাওয়া গিয়েছে। তবে গফফরের কোনও খোঁজ মেলেনি। নদীতে জাল ফেলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। গফফরের ভাই ছাদ্দার মণ্ডলের অভিযোগ, “আমার ভাই এলাকার এক জন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী ছিল। তাই কংগ্রেসের লোকেরাই তাকে খুন করেছে।”
বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে মহকুমা জুড়ে একের পর এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করছে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম। আসলে শান্ত বসিরহাটকে ওরা উত্তপ্ত করতে চাইছে। মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবে।” যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে কংগ্রেস নেতা অসিত মজুমদার বলেন, “অর্থ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ঝামেলার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। কংগ্রেস এর সঙ্গে জড়িত নয়। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা।” তাঁর দাবি, ওই দিন কংগ্রেস উপপ্রধান ঘটনাস্থলে ছিলেন বলেই এই মিথ্যা অভিযোগ রটানো হচ্ছে।