অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ। ছবি: রয়টার্স।
জার্মানউইঙ্গসের ভেঙে পড়া বিমানের কো-পাইলট অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। শুক্রবার জার্মান তদন্তকারী দল লুবিত্জের কাগজপত্র ঘেঁটে চিকিত্সকের নোটে এমনই তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। এই নোটে লুবিত্জকে নিয়মিত পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয়েছে। এর পরেও কী ভাবে লুবিত্জ জার্মানউইঙ্গসের বিমান চালানোর সুযোগ পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার জার্মানউইঙ্গসের বার্সেলোনা থেকে ডুসেলডর্ফগামী ৪ইউ৯৫২ বিমানটি দক্ষিণ ফ্রান্সের আল্পসের পাদদেশে ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে ১৪৪ জন যাত্রী এবং ছ’জন বিমানকর্মী ছিলেন। বৃহস্পতিবার তদন্তকারী দলের মুখপাত্র ব্রাইস রবিন জানিয়েছিলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন কো-পাইলট লুবিত্জ। ‘ককপিট ভয়েস রেকর্ডার’ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে যাত্রাপথে কোনও এক সময় ককপিট থেকে বেরিয়েছিলেন বিমানের চালক এস প্যাট্রিক। তখন ককপিটের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়েছিলেন লুবিৎজ। তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস তখন স্বাভাবিকই ছিল। সেই শব্দও রেকর্ডারে রয়েছে। তা থেকেই তদন্তকারীদের ধারণা হয়েছে, লুবিৎজ সুস্থ ছিলেন। ভেবেচিন্তেই তিনি বিমানটিকে ধ্বংস করেছিলেন।
কেন এমন করলেন লুবিত্জ, তা জানতে এ দিন জার্মানির মোন্টাবাউয়ার এবং ডুসেলডর্ফে তাঁর দু’টি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় তদন্তকারী দল। দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়ে ফ্ল্যাট দু’টি থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র ও কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই সব ঘেঁটেই জানা গিয়েছে, ২০০৯-এ পাইলটের প্রশিক্ষণ শেষ করার সময়ে লুবিত্জ গভীর মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময়ে প্রায় ছ’মাস তাঁর প্রশিক্ষণ বন্ধও ছিল। প্রায় দেড় বছর ধরে তাঁর চিকিত্সা চলে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নোটে তাঁকে নিয়মিত মানসিক পরীক্ষার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল। জার্মান তদন্তকারী দল লুবিত্জের ডুসেলডর্ফের ফ্ল্যাটে তাঁর মানসিক সমস্যার বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু বৃহস্পতিবার লুফতহানসা-র প্রধান কার্স্টেন স্পোর জানিয়েছিলেন, লুবিত্জ সমস্ত পরীক্ষা ভাল ভাবে উতরে গিয়েছিলেন। জার্মানউইঙ্গস হল লুফতহানসার অধীনস্ত সংস্থা। তাঁর মানে লুবনিত্জ কি নিজের সম্পর্কে তথ্য গোপন করেছিলেন? এ বিষয়ে লুফতহানসাকে আরও তথ্য দিতে হবে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। লুবিৎজের মোন্টাবাউয়ার ফ্ল্যাট থেকেও বেশ কিছু সূত্র পাওয়া গিয়েছে। তবে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। মেলেনি কোনও রাজনৈতিক, ধর্মীয় যোগসূত্রও।
অন্য দিকে, লুফতহানসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিমানের ককপিটে সব সময় দু’জন করে থাকার বিষয়ে নির্দেশ জারি করা হচ্ছে।