শিশু নিগ্রহে অভিযুক্ত গৃহশিক্ষিকা পুলিশি হেফাজতে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ১৬:১৪
Share:

শিশু নিগ্রহে অভিযুক্ত গৃহশিক্ষিকা পূজা সিংহের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। শনিবার সল্টলেকের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) অপূর্বকুমার ঘোষ তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে এই নির্দেশ দেন। এ দিন আদালতে পূজার হয়ে সওয়াল করতে কোনও আইনজীবী রাজি হননি। সল্টলেক বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে না করে দেওয়ার পর শেষমেশ ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড সার্ভিসের তরফে অভিনব মজুমদার ওই গৃহশিক্ষিকার হয়ে সওয়াল করেন। পূজা নিজেও এ দিন আদালতে তাঁর স্বপক্ষে কথা বলেছেন।

Advertisement

মারধরের সেই সিসিটিভি ফুটেজ।

গত মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণদাঁড়ি এলাকায় সাড়ে তিন বছরের একটি বাচ্চাকে পড়াতে গিয়েছিলেন পূজা। পড়ানোর সময় ওই ছাত্রটিকে তিনি এলোপাথাড়ি মারধর করেন বলে অভিযোগ। লাথি-চড়-থাপ্পড়-ঘুষি কিছুই বাদ যায়নি। ঘরে লাগানো সিসিটিভিতে ধরা পড়ে মারধরের সেই ছবি। এর পর লেকটাউন থানায় বুধবার সকালে ওই ছাত্রের বাবা-মা সঞ্জয় এবং শালিনী অগ্রবাল পূজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে শুক্রবার রাতে রাসবিহারী থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এ দিন তাঁকে সল্টলেকের এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়।

Advertisement

আদালতে পূজা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি পরিবারে তিনি গৃহশিক্ষকতা করেন। পড়ানোর বিষয়ে তাঁর সুনামও আছে। তাঁর দাবি, বছর দুয়েক আগে অভিযোগকারী সঞ্জয় অগ্রবালের মেয়েকে পড়াতেন তিনি। তখন সঞ্জয়-শালিনীর প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। কিন্তু অগ্রবালদের পারিবারিক গণ্ডগোলের জেরে তাঁকে সেখানে পড়ানোর কাজ ছাড়তে হয়। গত ১৫ জুলাই ফের তাঁকে অগ্রবাল পরিবারের তরফে ফোন করে ছেলেকে পড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়। পূজা প্রথমে রাজি হননি। তবে উপর্যুপরি অনুরোধে শেষমেশ রাজি হন ‘পেশাদার’ ওই গৃহশিক্ষিকা। দু’দিন পড়ানও তিনি। তবে গোল বাধে তৃতীয় দিনে।

কী এমন হল যে বাচ্চাটিকে এমন ভাবে মারতে হল?

পূজার দাবি, ওই দিন দুপুরে তিনি পড়াতে বসার পরই বাচ্চাটি তাঁর মুখ লক্ষ করে থুতু ছেটায়। খেলনা এবং মোবাইলও ছুড়ে মারে। মেজাজ হারিয়ে ফেলে বাচ্চাটিকে মারেন তিনি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ছাত্রটিকে বিছানায় বারংবার আছড়ে ফেলা হচ্ছে। পূজার দাবি, তিনি আছড়ে ফেলেননি। ওই সময় বাচ্চাটি পড়ে যাচ্ছিল বলে তিনি তাকে তুলে ধরে শুইয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁর আরও দাবি, সিসিটিভির ফুটেজের পুরোটা দেখানো হচ্ছে না। সবটা দেখানো হলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, কেন তিনি মেজাজ হারিয়েছিলেন। তিনি জানান, এই মারামারির পরও ওই ছাত্রটিকে তিনি একটা লেখা লিখতে দেন। তাতে সে ‘গুড’ও পায়। এর পর পূজা তাকে ওই লেখাটি তার মাকে দেখিয়েও আসতে বলে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, তিনি দরজা বন্ধ করে পড়াচ্ছিলেন। বাচ্চাটিকে যখন মারধর করেন তখনও দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। এ দিন আদালতে পূজা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “দরজা সব সময়েই খোলা ছিল।” এ দিন ভরা এজলাসে অগ্রবাল পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগও তোলেন তিনি। তবে ছাত্রটিকে মেরে তিনি যে ঠিক কাজ করেননি, সে কথাও আদালতে জানিয়েছেন পূজা। তাঁর কথায়, “জীবন আমাকে অনেক বড় শিক্ষা দিয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমার ওকে মারাটা ঠিক হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন