সোমালিয়ার জেহাদি নেতার বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা

ইরাকের পরে সোমালিয়া। জেহাদি ইসলামের বাড়বাড়ন্ত রুখতে সোমালিয়াতেও বিমান আক্রমণের পথ বেছে নিল আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, সোমবার গভীর রাতে সোমালিয়ার আল শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতাদের উপরে হামলা চালান হয়। এই হামলায় সাফল্য মিলেছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২০:২৩
Share:

গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের দেহ। মোগাদিসুতে এএফপি-র তোলা ছবি।

ইরাকের পরে সোমালিয়া। জেহাদি ইসলামের বাড়বাড়ন্ত রুখতে সোমালিয়াতেও বিমান আক্রমণের পথ বেছে নিল আমেরিকা। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, সোমবার গভীর রাতে সোমালিয়ার আল শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতাদের উপরে হামলা চালান হয়। এই হামলায় সাফল্য মিলেছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement

সোমালিয়ায় মার্কিন অভিযান নতুন নয়। ১৯৯৩-এর ৩ এবং ৪ অক্টোবর গৃহযুদ্ধ বিধস্ত সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে মার্কিন শান্তিরক্ষী বাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। জঙ্গিনেতা মহম্মদ ফারা আইদিদ-এর দুই সঙ্গীকে আটক করার মার্কিন অভিযানে দু’টি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়, নিহত হন ১৮ জন মার্কিন সেনা। আহত হন ৭৭ জন। এক জন জঙ্গিদের হাতে আটকও হন।

সোমালিয়ায় এর পরেও স্থায়ী শান্তি ফেরেনি। একের পর এক জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে। এই সুযোগে এই অঞ্চলে ইসলামিক জেহাদি জঙ্গি গোষ্ঠী আল শাবাব প্রভাব বিস্তার করে। এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে আল-কায়দার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন অভিযানের সময় অনেক জেহাদি মূল আরব ভূখণ্ড ছেড়ে আফ্রিকায় চলে আসেন। মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করেন, সুদানের পরে সোমালিয়া তাদের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। সুদানে এক সময় আল-কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন থাকতেন। এর পরেও আল-কায়দার শীর্ষস্তরের অনেক নেতাই সুদানে নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন। প্রথমে সুদান সরকার এদের অস্তিত্ত্ব অস্বীকার করলেও পরে মার্কিন সরকারকে গোপনে সাহায্য করা শুরু করে। সুদানের একাধিক অঞ্চলে এর পরে আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার অভিযোগ ওঠে। যদিও সুদান ও মার্কিন সরকার এই হামলার কথা স্বীকার করেনি।

Advertisement

হামলায় বিব্রত আল-কায়দার নেতাদের একটি অংশ সোমলিয়ায় আশ্রয় নেয়। এদের মদতেই আল শাবাবের বাড়বাড়ন্ত। ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আল শাবাবই মোগাদিসু ও দক্ষিণ সোমালিয়া নিয়ন্ত্রণ করত। পরে আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তিরক্ষী বাহিনী তাদের হঠিয়ে দেয়। কিন্তু ২০০৮ থেকে আহমেদ আবদি গোদেন এই জঙ্গিগোষ্ঠীর নেতা হয়ে আসার পরে সোমালিয়া জুড়ে এদের তাণ্ডব শুরু হয়। সোমালিয়ার একের পর এক গ্রামে হত্যা চালানোর পাশাপাশি স্কুলছাত্রীদের অপহরণের মতো ঘটনার সঙ্গে এরা জড়িত বলে অভিযোগ। বাদ যায়নি পাশের দেশও। ২০১২-র সেপ্টেম্বরে কেনিয়ার নাইরোবির শপিং মলে আল শাবাব আক্রমণ চালায়। এই ঘটনায় ৬৭ জনের মৃত্যু হয়।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে খবর, সোমবার রাতে সোমালিয়ার বারাওয়ে শহরের কাছে হাওয়াই-এর গভীর জঙ্গলে আল শাবাবের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এই বৈঠকে গোদেন-এর থাকার কথা। এই গোপন খবরের ভিত্তিতে হামলা চালান হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার গভীর রাতে তাঁরা প্রবল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এই অঞ্চলটি দক্ষিণ সোমালিয়ার লোয়ার শাবেল্লে প্রদেশের মধ্যে পড়ে। মোগাদিসু থেকে ২৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এই অঞ্চলে এর আগে মার্কিন নেভি সিল-রা অভিযান চালালেও খালি হাতে ফিরতে হয়। তবে এ বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন হামলায় গোদেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আহমেদ মহম্মদ আমেই-এর মৃত্যু হয়েছিল। সোমালিয়া সরকারের তরফ থেকেও হামলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু হামলায় লক্ষ্যপূরণ হয়েছে কি না তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। সোমালিয়ার গোয়েন্দা দফতর সূত্রে খবর, মার্কিন ড্রোন হামলার পরে ওই অঞ্চলে গোদেনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়েছে। কিন্তু এখনও তারা সংবাদটির সত্যতা যাচাই করে উঠতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন