Lok Sabha Election 2024

কবে বেরোবেন ডায়মন্ডের গণ্ডি ছেড়ে? মমতার সঙ্গে সত্যিই ‘দূরত্ব’ তাঁর? স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন অভিষেক

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য রয়েছে, তা-ও প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন অভিষেক। এবং পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘যে কোনও দলের ক্ষেত্রেই তা স্বাস্থ্যকর।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৪
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবারের ‘লক্ষ্মণরেখা’ কি পেরোবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? তিনি কি আদৌ গোটা বাংলা জুড়ে দলকে প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন? ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের মতো? গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূল যখন এই প্রশ্নে আলোড়িত, তখন আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ জানিয়ে দিলেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের অপেক্ষায়। দলনেত্রী বললে তিনি প্রচারে যাবেন।

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল, যিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, তাঁকে কেন কারও নির্দেশের অপেক্ষা করতে হবে? অভিষেকের সুস্পষ্ট জবাব, ‘‘আমি দলের সাধারণ সম্পাদক। আমার মাথার উপর সভানেত্রী আছেন। তিনি নির্দেশ দিলেই যা করার করব।’’ ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ এ-ও বলেছেন, ‘‘আমায় নির্দেশ দিতে হবে। না হলে অযাচিত ভাবে তো আমি যেতে পারি না!’’

একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিষেক এ-ও জানিয়েছেন যে, ২০২১ সালের ভোটের পর দল তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়ার পর তিনি বাংলার বাইরে বিভিন্ন রাজ্যে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার কাজে যে ভাবে অগ্রসর হয়েছিলেন, তা-ও করেছিলেন নেত্রীরই নির্দেশে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত ‘নবজোয়ার যাত্রা’ও মমতার নির্দেশেই করেছিলেন পঞ্চায়েত ভোটের আগে। এমনকি, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজভবনের সামনে থেকে তিনি ধর্নাও প্রত্যাহার করেছিলেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর নির্দেশেই।

Advertisement

গত কয়েক মাস ধরেই অভিষেকের ‘গুটিয়ে থাকা’ নিয়ে তৃণমূল তো বটেই, রাজ্য-রাজনীতিতেও বিস্তর জল্পনা রয়েছে। তবে অভিষেকের দাবি, তিনি আদৌ দূরে সরে নেই। দলের সঙ্গেই আছেন। এমনকি, মমতার সঙ্গেও তাঁর কোনও দূরত্ব নেই বলে দাবি করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘যদি দূরত্ব থাকত, তা হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার প্রতিনিধিদলে যেতাম না।’’ কিন্তু সে দিন তো তাঁকে কিছুটা ‘আড়ষ্ট’ লেগেছিল? অভিষেকের জবাব, ‘‘যা-ই লাগুক, গিয়েছিলাম তো।’’

তবে দল পরিচালনার বিভিন্ন বিষয়ে যে মমতার সঙ্গে তাঁর ‘মতপার্থক্য’ রয়েছে, তা-ও মেনে নিয়েছেন অভিষেক। কিন্তু পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘যে কোনও দলের ক্ষেত্রেই তা স্বাস্থ্যকর।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একটা গ্লাসে যদি অর্ধেক জল থাকে, তা হলে কেউ বলবে অর্ধেক খালি, কেউ বলবে অর্ধেক ভর্তি। দুটোই ঠিক। শুধু দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক।’’ গত কয়েক মাস ধরেই তৃণমূলের নেতারা কেমন যেন আড়াআড়ি বিভক্ত। সে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব হোক বা বয়সবিধি— ইদানীং ধারণা তৈরি হয়েছে, তৃণমূল যেন দু’টি দলে বিভক্ত। ‘মমতাপন্থী’ এবং ‘অভিষেকপন্থী’। তৃণমূলের সেনাপতি অবশ্য বলেছেন, ‘‘দুটো, তিনটে, চারটে, পাঁচটা— ভিতরে যে ক’টা দলই থাকুক, আমার কাজ সব জায়গায় ঢুকে জোড়া ফুল ফোটানো।’’

এ কথা সর্বজনবিদিত যে, মমতা ও অভিষেকের দল চালানোর ক্ষেত্রে কিছু ‘মৌলিক পার্থক্য’ রয়েছে। অভিষেকের ক্ষেত্রে গোটাটাই পেশাদারি কাঠামোয়। যা ২০১৯ সালের লোকসভার পরে প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর সংস্থাকে দলের কৌশল নির্ধারণে যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে সূচিত হয়েছিল। তবে অভিষেক বলেছেন, ‘‘প্রশান্ত কিশোরেরা ওভাররেটেড। এ কথা প্রশান্ত নিজেই বলেন।’’ এই সংস্থাগুলি কি হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে? অভিষেক বলেছেন, ‘‘না। এই সংস্থাগুলি কিছুটা মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাড) করতে পারে। কিন্তু হারা ম্যাচ কখনওই জেতাতে পারে না। মৌলিক বিষয় সংগঠন, নীতি। আপনি যদি ভাল কাজ করেন, তা হলে মানুষ আপনাকে জেতাবে।’’

তবে অভিষেক একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আপাতত তিনি রয়েছেন মমতার ডাকের অপেক্ষায়। সেই ডাক কি আসবে? অভিষেক কি লোকসভা ভোটে ডায়মন্ড হারবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বাংলা প্রচারের কাজে চষে বেড়াবেন? স্পষ্ট হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। তবে এর মধ্যেই সন্দেশখালির ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেছেন তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁর নির্দেশেই দলের স্থানীয় এবং ‘প্রতাপশালী’ নেতাকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে শনিবার। পাশাপাশিই, শনিবারেই তিনি দেখা করেছেন দলের তারকা-সাংসদ দেবের সঙ্গে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে দেব আর ঘাটালে দাঁড়াতে চান না, এমন একটা ধারণা বাংলা ছবির এই নায়কের বিভিন্ন কথাবার্তায় বেশ কিছু দিন ধরেই স্পষ্ট হচ্ছিল। তা স্পষ্টতর হয় চলতি সপ্তাহে লোকসভায় দেব ঘোষিত ভাবে তাঁর ‘শেষ ভাষণ’টি দেওয়ায়। তার পরেই দেব অভিষেকের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেইমতোই শনিবার তিনি অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে গিয়ে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন। তার পরে তিনি যান কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়িতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন