CPM TMC

বদলে গেল লাইন? বঙ্গ সিপিএমের মুখপত্রে ছবি অভিষেকের, তৃণমূলের মুখপত্রের ফ্রেমে ইয়েচুরি

রাজনৈতিক মহলের অনেকের ব্যাখ্যা, ভোট শেষ হতেই রাজ্যের বাস্তবতার চেয়ে জাতীয় রাজনীতির বাস্তবতা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি পরনির্ভরশীল হওয়ায় তা আরও প্রাসঙ্গিক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৪ ১১:২১
Share:

(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সীতারাম ইয়েচুরি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

বাংলার চেয়ে দেশ বড়? বাংলার চেয়ে দেশই বড়। ভোট শেষ হতেই কি রাজ্যের ‘বাস্তবতা’র চেয়ে দেশের ‘বাস্তবতা’ বড় হয়ে গেল যুযুধান সিপিএম এবং তৃণমূলের কাছে?

Advertisement

মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের ৪৮ ঘন্টা পরে বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত সিপিএম এবং তৃণমূলের মুখপত্রে প্রথম পাতার ছবিতে ‘লাইন’ বদলের ইঙ্গিত পাচ্ছেন অনেকে। ১১ মাসের মধ্যে সেই বদল সাদা-কালোয় আরও স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের প্রভাতী দৈনিকে বুধবার ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের দু’টি ছবি ছাপা হয়েছে। বড় ছবিটিতে সকলের সঙ্গে রয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দ্বিতীয় একটি ছবি ছাপা হয়েছে। সেখানে রয়েছেন কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার পাশাপাশি সিপিএমের প্রভাতী দৈনিকে যে ছবি ছাপা হয়েছে, সেই ফ্রেমে রয়েছেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেকও।

কিন্তু ১১ মাস আগে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল এবং রাজ্যের একদা শাসকদল সিপিএমের মুখপত্রে ছবির এমন ‘ঐক্য’ ছিল না। গত বছর ১৭ জুলাই বেঙ্গালুরুতে হয়েছিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক। ১৮ তারিখ প্রকাশিত দুই দলের মুখপত্রে ছবির ভিন্নতা ছিল। যেমন সিপিএমের মুখপত্রে তখন জায়গা পাননি তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তেমনই তৃণমূলের মুখপত্রের ছবি থেকে বাদ পড়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি। সেই ছবি থেকে স্পষ্ট হয়েছিল, মূল ফ্রেম থেকে ‘ক্রপ’ (কাটছাঁট) করেই ছবি ছাপা হয়েছে।

Advertisement

কেন এই বদল? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ছবি ছাপার ব্যাখ্যা দেননি। তিনি শুধু বলেছেন, “গত ১ জুন বিরোধীরা বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে তৃণমূলের কেউ ছিলেন না। তৃণমূল আদৌ রয়েছে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। দেখা গেল, ভোট মিটতে তাদের প্রতিনিধি বিরোধী বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।” সিপিএমের দৈনির মুখপত্রের সম্পাদক তথা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ শমীক লাহিড়ি বলেন, ‘‘এগুলো সব এজেন্সি থেকে পাওয়া ছবি। যতগুলো ছবি এসেছিল, তার মধ্য থেকেই একটা ছবি আমরা ছেপেছি।’’ পক্ষান্তরে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (যিনি দলীয় মুখপত্র পরিচালনার সঙ্গেও জড়িত) বলেছেন, “অত ভেবে ছবি ছাপা হয়নি। বাংলায় যারা শূন্য, যাদের ২৩ জনের মধ্যে ২১ জন প্রার্থী জামানত রাখতে পারে না, তাদের ছবি ছাপা হল কি না, সেটা নিয়ে ভাবার সময় বা অবকাশ নেই।”

তবে দুই শিবিরের সঙ্গে জড়িত অনেকের ব্যাখ্যা, ভোট শেষের পরে ফলাফল দেখে যুযুধান দু’পক্ষের কাছে রাজ্যের বাস্তবতার চেয়ে জাতীয় রাজনীতির বাস্তবতা বড় হয়ে গিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে মমতার সঙ্গে কেন ইয়েচুরি রয়েছেন, এই প্রশ্ন নিয়ে গত বছর ঝড় বয়ে গিয়েছিল বঙ্গ সিপিএমের অন্দরে। নিচুতলার সেই ক্ষোভকে সামাল দিতে আলিমুদ্দিনকে পাঠচক্রের মতো কর্মসূচি নিতে হয়েছিল। তার পর থেকে তৃণমূলের বিরোধিতায় ঝাঁজ বৃদ্ধি করলেও ভোটের ফলাফলে শূন্যের গেরো কাটাতে পারেনি সিপিএম। গোটা দেশে মাত্র চার জন সাংসদ পেয়েছে তারা। সেখানে তৃণমূলের সংখ্যা ২৯। এর মধ্যে ‘ইন্ডিয়া’র মুখপাত্র কেন সিপিএমের ইয়েচুরিকে করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। কিন্তু ভোটের ফলঘোষণার পর দেখা গেল, দুই দলের মুখপত্রে ছবির ‘ঐক্য’। বিজেপি যখন ধাক্কা খেয়েছে, নরেন্দ্র মোদী যখন ‘পরনির্ভরশীল’ হয়ে পড়েছেন, তখন রাজ্যের বাস্তবতার চেয়ে দেশের বাস্তবতাই বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে তৃণমূল এবং সিপিএমের সামনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement